Advertisement
E-Paper

হিজাব নেই আবার মুসলমান কীসের! নেমে এল জঙ্গির ধারালো অস্ত্র

আর কয়েক মুহূর্ত পরে মেরে ফেলা হবে তাঁকে। ইশরাত আখন্দের পাশে দাঁড়িয়ে দুই জঙ্গি তখনও নিজেদের মধ্যে মৃদু তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। নাম জানতে চেয়েছিল তারা। ‘ইশরাত’ শুনে এক জন বলেছিল, ‘‘ও বাঁচার জন্য ধর্মের নাম (মুসলিম নাম) নিচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১

আর কয়েক মুহূর্ত পরে মেরে ফেলা হবে তাঁকে। ইশরাত আখন্দের পাশে দাঁড়িয়ে দুই জঙ্গি তখনও নিজেদের মধ্যে মৃদু তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। নাম জানতে চেয়েছিল তারা। ‘ইশরাত’ শুনে এক জন বলেছিল, ‘‘ও বাঁচার জন্য ধর্মের নাম (মুসলিম নাম) নিচ্ছে। মুসলমান হলে হিজাব পরেনি কেন? মাথায় কাপড় নেই কেন?’’

হিজাব পরার অভ্যেসটা ছোট থেকেই ছিল না ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির প্রাক্তন প্রধান ইশরাতের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর উচ্চশিক্ষা অস্ট্রেলিয়ায়। ওই আর্ট গ্যালারি ছাড়াও কাজ করেছেন বিভিন্ন সংস্থার উচ্চ পদে। নিজে শিল্পী। আবার মিউজিক ভিডিওয় অভিনয়ও করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় কফি খেতে গিয়েছিলেন গুলশনের হোলি আর্টিজেন বেকারিতে। জঙ্গিদের নাগাল এড়িয়ে পালানো ওই কাফের এক কর্মী খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন ইশরাতের শেষ মুহূর্তগুলো। তিনিই জানিয়েছেন, ইশরাতের দিকে এগিয়ে আসা জঙ্গির প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘‘তোমার মাথায় হিজাব নেই কেন?’’

ইশরাত তাকে জানান, তিনি বাংলাদেশেরই নাগরিক। তবে কোনও দিনই হিজাব পরেননি। এর পরেই তাঁর নাম জানতে চাওয়া এবং তা নিয়ে দুই জঙ্গির আলোচনা। মিনিটখানেকের একটু বেশি সময় ধরে ব্যাপারটা গড়ায়। এই সময়ে তৃতীয় এক জঙ্গি এসে বলে, ‘‘আমাদের হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই।’’

জঙ্গির ধারালো অস্ত্র নেমে আসে তখনই। ইশরাত পড়ে থাকেন কফির কাপে মুখ থুবড়ে।

তালিকা বলছে, মাঝবয়সি ইশরাত-সহ নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোট তিন জন বাংলাদেশি। অন্য দু’জন তুলনায় নবীন। এক জন, একটি শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন। প্রথম সারির একটি দৈনিক রয়েছে এই শিল্পগোষ্ঠীর। তৃতীয় নাম অন্য একটি শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের মেয়ে অবিন্তা কবীরের। আমেরিকা থেকে এসেছিলেন ইদের ছুটিতে।

সঙ্গে দেহরক্ষীও ছিলেন। রক্ষী বেঁচে গেলেও রক্ষা পাননি অবিন্তা।

দুই বাংলাকে অবশ্য বেশি করে ঝাঁকিয়ে যাচ্ছে ইশরাতের কাহিনি। ‘ইশরাত’ নামটাও। এক যুগ আগে পুলিশের গুলিতে নিহত ভারতীয় কলেজছাত্রী ইশরাত জহান সত্যিই জঙ্গি ছিলেন নাকি ভুয়ো সংঘর্ষের শিকার— তা নিয়ে রাজনীতির টানাপড়েন এখনও জারি। পশ্চিমবঙ্গে গান বাঁধা হয়েছিল এই ইশরাতকে নিয়ে। আর পূর্ব বাংলার ইশরাত? তিনি বলতেন, ‘তুমি খুশি থাকো।’ গোটা ফেসবুক পেজ জুড়ে তাঁর অজস্র ভিডিও, ছবি। কোনওটা ইফতারের রান্না নিয়ে, কোনওটায় জানলা দিয়ে দেখা একলা চিল। এক দিন লিখেছেন, ‘একটা অ্যাপ পেলাম। এতে নিজের ভিডিও তৈরি করুন। আর খুশি থাকুন।’

‘স্টে হ্যাপি’, ‘স্টে হ্যাপিয়ার’— যা কিছু ফেসবুকে দিয়েছেন ইশরাত, সবেতেই জুড়েছেন খুশি থাকার এই ডাক। তাঁর বান্ধবী নাদিয়া ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আই অ্যাম হ্যাপি বিকজ...’ নামে একটা দাতব্য কাউন্সেলিং কোর্স চালাতেন ইশরাত। আর ওই রোদ্দুর, চিল, রান্না, কিংবা হঠাৎ দেখা কামিনী ফুল, সবই তাঁর কাছে ছিল ‘পজিটিভ’ জীবন বাঁচার দাওয়াই। ‘প্রাণশক্তিতে ভরপুর, মাথা খারাপ, হাসিখুশি, আর্ট পাগল, খাওয়া পাগল’— দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে এ ভাবেই ইশরাতকে ব্যাখ্যা করেছেন নাদিয়া। লিখেছেন, কী ভাবে আলাপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইশরাত তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন।

আর লিখেছেন সেই দিনটার কথা। যে দিন শ্রীলঙ্কাবাসী এক বন্ধু বাংলাদেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করায় রেগে গিয়েছিলেন ইশরাত। বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে খারাপ কিছু থাকলে আমরা দেখব। এই দেশ ভাল না লাগলে চলে যাও।’’

মোক্ষম সময়ে এই মানুষটিকেই প্রমাণ দিতে হল নিজের নাগরিকত্ব, ধর্মবিশ্বাসের। ‘ডাহা ফেল’ ইশরাত খেসারত দিলেন নিজের জীবনটাই!

hijab women bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy