Advertisement
E-Paper

মেয়েদের গ্রাম জিনওয়ার ভরসা দিচ্ছে মেয়েদেরই

 গ্রামের চার পাশ ঘিরে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে কামিশলি থেকে এক ঘণ্টা দূরেই জিনওয়ার। এই গ্রামে যে কোনও সময়ে থাবা বসাতে পারে তুরস্ক।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:২৪
বাড়ি তৈরি করছেন জিনওয়ারের মহিলারা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

বাড়ি তৈরি করছেন জিনওয়ারের মহিলারা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

আইএসের সঙ্গে যুদ্ধে স্বামী মারা যাওয়ার পরে জীবনটা আমূল পাল্টে গিয়েছিল সিরিয়ার ফাতমা এমিনের। অনেক লড়াই থেকে ঘুরেফিরে ‘জিনওয়ারে’ এসে পৌঁছন ফাতমা।

দু’বছর আগে উত্তর পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দ মহিলারা তৈরি করেন জিনওয়ার, মহিলাদের জন্যই গ্রাম। কুর্দিশ ভাষায় যার অর্থ ‘মেয়েদের জায়গা।’ কট্টর পরিবার, গার্হস্থ্য হিংসা আর গৃহযুদ্ধের বীভৎসতা পেরিয়ে ফাতমা তাঁর বাচ্চাদের নিয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন জিনওয়ারে।

যে গ্রামে মহিলারা সদাস্বাগত। শিশুরাও। ধর্ম, জাত, রাজনৈতিক মতামত সেখানে কোনও বাধা নয়। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র আর নতুন রকমের একটা জীবনের খোঁজে অনেক মহিলা মিলে তৈরি করেছেন নতুন এই ঠিকানা। সংবাদ সংস্থাকে ফাতমা ফোনে বলেছেন, ‘‘মহিলাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন যাঁরা বা যাঁরা ভাবেন, সমাজে মহিলারা দুর্বল, তাঁরা নিজেদের আর বাচ্চাদের সামলাতে পারেন না, সেই সব ব্যক্তির মুখের উপরে জবাব দিচ্ছে জিনওয়ার। মহিলারা নিজের বাড়ি তৈরি করছেন। আমরা একটা গ্রাম তৈরি করেছি, শুধু কুর্দ মহিলাদের জন্য নয়। আরব, ইয়েজ়িদি এবং বিদেশি অনেক বন্ধুও আছে আমাদের সঙ্গে।’’

চার বছর আগে অগস্টে স্বামীকে হারিয়েছিলেন ফাতমা। ছ’সন্তানকে নিজের কাছে রাখার জন্য বছর ৩৫-এর মহিলাকে লড়াই চালাতে হয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে। ওঁরা চাননি ফাতমা কাজ করুন। সিরিয়ার শহর কোবানিতে সরকারি কাজ করতেন লড়াকু ফাতমা। শ্বশুরবাড়ির লোকের দাবি ছিল, কাজ ছেড়ে মেয়েদের বড় করুন ফাতমা। অবশ্যই শ্বশুরবাড়ির তত্ত্বাবধানে। ফাতমার ভাষায়, ‘‘ওদের মনে হয়েছিল, আমি একা মহিলা, ছ’টা মেয়ে নিয়ে! এত দুর্বল। কোনও পুরুষ নেই দেখভালের জন্য। একা মেয়েদের জন্য এক মহিলা বেঁচে রয়েছে, এটা ওদের ভাবনাতেই আসত না।’’ কুর্দ মহিলা আন্দোলনকারীদের একটি গোষ্ঠীর সাহায্যে মেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ফাতমা। তাঁকে আপন করে নেয় জিনওয়ার।

খয়েরি রঙের চৌকো বাড়িঘর। হাতে তৈরি মাটির ইট দিয়ে বানানো। বাইরে থেকে খটখটে আর রোদে পোড়া। ভিতরে ছবি আঁকা আর সাজানো। যাঁরা রয়েছেন ঘরে, তাঁদেরই ছোঁয়া। এখন জিনওয়ারে থাকেন ১৬ জন মহিলা আর ৩২টি শিশু। পুরুষেরা এখানে আসতে পারেন শুধু দিনের বেলায়। তবে মহিলাদের সম্মান করা যে পুরুষদের ধাতে নেই, তাঁদের জন্য জিনওয়ারের দরজা বন্ধ। মহিলারাই নজর রাখেন, গ্রামে কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে। রাতে তাঁদের সঙ্গে থাকে অস্ত্র, নিরাপত্তার জন্য।

ফাতমার মতো এখানে এসেছেন জিয়ান আরফিন। বয়স ৩০। দুই মেয়ে আর এক ছেলের মা। তারা দাদুর সঙ্গে থাকে। তিন মাস আগে জিনওয়ারে এসেছেন জিয়ান। সিরিয়ার উত্তর পূর্বের শহর আফরিনে তুরস্কের অভিযান থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসেন তিনি। এখন বলেন, ‘‘জিনওয়ার অসাধারণ। এখানে একটা স্বাভাবিক জীবন রয়েছে। আমরা কাজ করি, চাষ করি, অর্থও পাই। গ্রামের কাউন্সিল সব দেখে।’’ এমন আরও অনেক মুখ। ভিটেছাড়া, ধর্ষিতা, জেলবন্দি— আইএস বা অন্য কোনও গোষ্ঠীর নির্যাতন শেষে এখন বাঁচার মানে খুঁজে পেয়েছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তৈরি হওয়া শরণার্থী সঙ্কট এখনও প্রতি মুহূর্তে তাড়া করছে গোটা পৃথিবীকে। ফাতমা বলেন, ‘‘যুদ্ধে আমাদের সবার ক্ষতি হয়েছে। সব মহিলা আঘাত পেয়েছেন। সব মহিলা অনেক কিছু হারিয়েছেন। জিনওয়ার সবাইকে এক সুতোয় বেঁধেছে।’’

দু’বছর আগে জিনওয়ার শুধু এক খণ্ড জমি ছিল। স্থানীয় কুর্দ মহিলারা একজোট হয়ে সেখানে বসতি গড়ার পরিকল্পনা করেন। পাশে দাঁড়ায় আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠনও। গড়ে তোলা হয় ৩০টি বাড়ি, একটা বেকারি আর এক দোকান। চাষের জন্যও রয়েছে কিছুটা জমি। শিশুরা বড় হলে তারা যদি এখানেই থেকে যেতে চায়, থাকবে। না চাইলে, নয়। এখনও তারা গ্রামের বাইরে স্কুলে যায়। আর গ্রামের মহিলাদের শিক্ষা দেওয়া হয় বিশেষ পদ্ধতিতে।

তবুও ভয় আছে। গ্রামের চার পাশ ঘিরে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে কামিশলি থেকে এক ঘণ্টা দূরেই জিনওয়ার। এই গ্রামে যে কোনও সময়ে থাবা বসাতে পারে তুরস্ক। আমেরিকা সমর্থিত কুর্দদের মোটেই পছন্দ করে না তুরস্ক। তাদের সঙ্গে কুর্দদের লড়াই দশক পেরোতে চলল। তুরস্ক, সিরিয়া এবং ইরাকের যে সব অংশ কুর্দ-প্রধান, সেখানে পৃথক রাষ্ট্র তৈরি করতে চান কুর্দরা। তাই তুরস্কের চোখরাঙানি বড় উদ্বেগ জিনওয়ারে।

ভরসা শুধু, কুর্দ বাহিনী হয়তো পাশে দাঁড়িয়ে রক্ষা করবে জিনওয়ারকে। তবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মেয়েরাও। যাঁরা এত দূর লড়াই করে এসে আর হারতে চান না।

Jinwar Damascus Syria War Village Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy