Advertisement
E-Paper

‘মনে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ায় আছি’, অনলাইন কটাক্ষে বিদ্ধ শি চিনফিং

২০২২-র শেষ দিকে গিয়ে আবার চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন হবে। এত দিন যে রকম ছিল চিনা পার্টির সংবিধান, তাতে সেই সম্মেলনে আর পার্টির শীর্ষ পদ পাওয়ার কথা নয় চিনফিঙের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২১:৪৯
গত পাঁচ বছরে শি চিনফিঙের বিশাল বিশাল ছবিতে সেজে উঠেছে গোটা চিন। নিজেকে প্রায় মাও জে দঙের পর্যায়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। বলছেন অনেকেই। ছবি: এএফপি।

গত পাঁচ বছরে শি চিনফিঙের বিশাল বিশাল ছবিতে সেজে উঠেছে গোটা চিন। নিজেকে প্রায় মাও জে দঙের পর্যায়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। বলছেন অনেকেই। ছবি: এএফপি।

নানা শিবির থেকে সমালোচনা শুরু হল চিনা কমিউনিস্ট পার্টির। সমালোচনা শুরু হল প্রেসিডেন্ট শি চিনফিঙেরও। অনির্দিষ্ট কাল যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন শি, তার জন্য চিনের সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেছে শাসক কমিউনিস্ট পার্টি। কেউই একটানা দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন না, চিনের আইন এমনই। সংবিধান থেকে সেই আইনেরই অবলুপ্তি ঘটানোর প্রস্তাব পাশ হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে। চিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়েই শুরু হয়েছে কটাক্ষ এবং সমালোচনা।

২০১২ সালের শেষ দিকে শি চিনফিং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার কয়েক মাস পরে ২০১৩ সালে চিনের পার্লামেন্ট চিনফিংকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। ২০১৭-র অক্টোবরে চিনফিং দ্বিতীয় বারের জন্য পার্টির এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮-র মার্চে পার্লামেন্টের অধিবেশন বসছে। সেখানে দ্বিতীয় বারের জন্য তাঁর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াও পাকা।

২০২২-র শেষ দিকে গিয়ে আবার চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন হবে। এত দিন যে রকম ছিল চিনা পার্টির সংবিধান, তাতে সেই সম্মেলনে আর পার্টির শীর্ষ পদ পাওয়ার কথা নয় চিনফিঙের। কিন্তু ‘শি চিনফিঙের চিন্তাধারা’ নামে একটি তত্ত্বকে পার্টির সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে চিনফিংকে ইতিমধ্যেই অনেক নিয়মের ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে চিনের শাসক দল। পার্টির এবং সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদে যাতে তিনি অনির্দিষ্ট কাল থেকে যেতে পারেন, সে বন্দোবস্তও পাকা করে ফেলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিকে প্রেসিডেন্ট রাখতে আইন বদলের পথে চিন

ক্ষমতায় চিনফিঙের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ২০২৩ সালে তৃতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও যাতে কোনও বাধা না আসে, কমিউনিস্ট পার্টি এ বার তা নিশ্চিত করতে চাইছে। সেই কারণেই একটানা দু’বার প্রেসিডেন্ট পদে না থাকতে পারা সংক্রান্ত আইন বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।

শি চিনফিঙের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি যে পথে এগোচ্ছে, তাতে দল এবং রাষ্ট্র, উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে একাংশের দাবি। চিনা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবো-তে তা নিয়ে কটাক্ষ এবং সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

মার্চে চিনা পার্লামেন্টের ্অধিবেশন বসবে। সেখানেই প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সর্বোচ্চ সময়সীমার অবলুপ্তি ঘটবে। ছবিছ রয়টার্স।

গণতন্ত্রের দাবিতে লড়তে থাকা হংকং ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী জোশুয়া ওয়ং টুইটারে লিখেছেন, ‘সম্রাট শিয়ের যুগ’। চিনের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবো-তে কেউ কেউ চিনা কমিউনিস্ট পার্টির এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, ‘ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছি’। কিন্তু অনেকেই জোরদার শ্লেষও ছুড়ে দিয়েছেন শি চিনফিঙের প্রতি। ওয়েইবো-তে একজন লিখেছেন, ‘‘এ বার আমার সত্যিই মনে হচ্ছে আমি উত্তর কোরিয়ায় বাস করছি।’’

আরও পড়ুন: মলদ্বীপে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে সরব প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট

ওই ব্যক্তির ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। উত্তর কোরিয়ায় দশকের পর দশক ধরে যেমন কমিউনিজমের নামে স্বৈরাচারী শাসন চলছে, চিনও এ বার সেই পথেই— ইঙ্গিত এমনই।

নানা কার্টুনও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে ওয়েইবো-তে। মধুর পাত্র প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভালুক, পাশে লেখা— ‘আপনি যা ভালবাসেন তা খুঁজে নিন এবং তাকে আঁকড়ে থাকুন।’ ক্ষমতার প্রতি চিনফিঙের ভালবাসা যে প্রবল এবং তিনি যে তা প্রাণপণে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন, সে কথাই বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে কার্টুনে।

ওয়েইবো সাইটের সেন্সররা অবশ্য ওই কার্টুন দ্রুত সরিয়ে দেন। ওই কার্টুনের রিপোস্টও আটকে দেন।

মাও জে দঙের পর থেকে আর কোনও চিনা নেতা সে দেশে সর্বময় ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেননি। দেং শিওয়াও পিঙের নেতৃত্বে যে যৌথ নেতৃত্বের অভ্যাস গড়ে উঠেছিল, পরবর্তী নেতারা তাকেই অনুসরণ করেছেন। জিয়াং জেমিন এবং হু জিনতাও পর পর দু’টি করে মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থেকেছেন। তার পরে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর করে সরে গিয়েছেন। শি চিনফিঙের জমানায় সেই ধারা ধাক্কা খাওয়ার মুখে।

গত পাঁচ বছরের শাসনকালে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে নিজের পূর্বসূরিদের অনেক উপরে তুলে নিয়ে যেতে সক্রিয় থেকেছেন চিনফিং। গোটা চিন জুড়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ করেছে শিয়ের নেতৃত্বাধীন প্রসাসন। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার নামে শি চিনফিং দল এবং সরকার থেকে নিজের বিরোধী গোষ্ঠীর সব লোককে ছেঁটে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ক্রমশ তীব্র হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেই শি চিনফিঙের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েছে। যে ভাবে নিজের কর্তৃত্ব আরও নিরঙ্কুশ করার পথে হাঁটছেন শি চিনফিং, তাতে ক্ষোভ আরও বাড়বে বলে একাংশের আশঙ্কা। যে পথে হেঁটে চিন গত কয়েক দশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে, সেই যৌথ নেতৃত্বের পথ থেকে দেশকে সরিয়ে নিয়ে চিনফিং খুব বড় ভুল করছেন বলে বিশেষজ্ঞদের বড় অংশই মনে করছেন।

China Communist Party of China Xi Jinping President Presidential Term Limit চিন শি চিনফিং
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy