Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইরাকে সরকার বদলে উদ্যোগী আমেরিকা

নুরি-অল-মালিকি আর নন। এ বারে তাঁকে সরিয়ে নতুন সরকার গঠনে উদ্যোগী হল আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ দিন জানিয়েছেন, ৩০০ সামরিক পর্যবেক্ষকের একটি দল তিনি ইরাক পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে অবশ্য ওবামা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরাকে আর মার্কিন বাহিনী ফিরবে না। কেন মালিকিকে সরাতে চাইছে আমেরিকা? ওবামা প্রশাসনের বক্তব্য, মালিকির পক্ষে আর ইরাককে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন সূত্র এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই অখুশি হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে।

প্রশিক্ষণ চলছে শিয়া ফৌজের। বৃহস্পতিবার বাগদাদে। ছবি:  রয়টার্স।

প্রশিক্ষণ চলছে শিয়া ফৌজের। বৃহস্পতিবার বাগদাদে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
বাগদাদ ও ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০২:৩৮
Share: Save:

নুরি-অল-মালিকি আর নন। এ বারে তাঁকে সরিয়ে নতুন সরকার গঠনে উদ্যোগী হল আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ দিন জানিয়েছেন, ৩০০ সামরিক পর্যবেক্ষকের একটি দল তিনি ইরাক পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে অবশ্য ওবামা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরাকে আর মার্কিন বাহিনী ফিরবে না।

কেন মালিকিকে সরাতে চাইছে আমেরিকা? ওবামা প্রশাসনের বক্তব্য, মালিকির পক্ষে আর ইরাককে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন সূত্র এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই অখুশি হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। মালিকি বারবার দাবি করছেন, ইরাকি সেনাবাহিনী এখন যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গিদের মোকাবিলা করছে। লড়াই ছেড়ে পালানোর জন্য বেশ কিছু সেনা অফিসারের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মালিকির বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয় গোটা বিশ্বের কূটনীতিকরা। বরং আমেরিকা থেকে আরব দুনিয়া সকলেরই দাবি, মালিকির নীতিতেই সর্বনাশ হয়েছে ইরাকের। শিয়াদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাকি সম্প্রদায়গুলির আস্থা হারিয়েছেন তিনি। ফলে, আল-কায়দার সহযোগী গোষ্ঠী আইএসআইএসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে বিভিন্ন সুন্নি গোষ্ঠী। মার্কিন বাহিনী ইরাক ছাড়ার আগে সেখানকার সেনাদের প্রশিক্ষণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল ওয়াশিংটন। আইএসআইএসের সঙ্গে লড়াইয়ে কিন্তু সেই ইরাকি বাহিনী কার্যত পর্যুদস্ত হয়ে গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমী দুনিয়া-সহ গোটা বিশ্বের বড় চিন্তা বেইজির তেল শোধনাগার। ইরাকের প্রধান তেল শোধনাগারটি এখন কাদের হাতে, তা নিয়ে যথেষ্ট ধন্দ রয়েছে। গত কাল বেইজিতে হামলা করে জঙ্গিরা। ইরাকি সেনাবাহিনীর দাবি, শেষে শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি জঙ্গিরা। এক ইরাকি প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, জঙ্গিরা শোধনাগারের ওয়াচ টাওয়ারের উপরে নিজেদের কালো পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে। বাইরের চেকপোস্টও তাদেরই দখলে। একটি তেলের ট্যাঙ্কারে আগুন লেগে গিয়েছে।

শুধু বেইজি-ই নয়, সামগ্রিক ভাবে ইরাকের পরিস্থিতি কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, তা নিয়ে ভাবতে বসেই ওয়াশিংটন মালিকিকে সরানোর চিন্তা করছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মালিকিকে সরিয়ে বাগদাদে শিয়া, সুন্নি ও কুর্দ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গড়তে চায় ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি সেই বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে ইরাকে মালিকি সরকার যে প্রশাসন চালাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তা সাফ জানিয়েছেন তিনি।

কূটনৈতিক সূত্রে খবর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশ ইরাকে স্থিতি ফেরাতে সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু তার বদলে মালিকিকে সরাতে ওয়াশিংটনকে চাপ দিচ্ছে তারা। ইরাকে প্রয়োজনে শিয়া ধর্মস্থান রক্ষায় হস্তক্ষেপ করতে রাজি শিয়া ইয়ান। তাতে আরও খেপে গিয়েছে সৌদি আরব, আমিরশাহির মতো সুন্নি কর্তৃত্বাধীন দেশগুলি।

গত কালই আমেরিকাকে বিমান হানা চালানোর অনুরোধ করেছিল মালিকি সরকার। সেই অনুরোধ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি আমেরিকা। এখন বিমান হানা চালালে মার্কিন বায়ুসেনা ‘শিয়াদের বায়ুসেনায়’ পরিণত হতে পারে বলে মনে করে মার্কিন প্রভাবশালী শিবিরের একাংশ।

হোয়াইট হাউস মুখ না খুললেও মার্কিন কংগ্রেসর উচ্চকক্ষ সেনেটে ইনটেলিজেন্স কমিটির চেয়ারপার্সন ডায়ান ফেইনস্টেন প্রকাশ্যেই মালিকিকে সরানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। কংগ্রেসের একটি শুনানিতে ডায়ান বলেছেন, “ইরাকে যে কোনও ধরনের সমঝোতা করতে হলে মালিকিকে সরাতে হবে।” সুন্নি, শিয়া ও কুর্দদের নিয়ে গঠিত সরকার আইএসআইএসের মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা আমেরিকার। তবে এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে।

ইরাকে ভারত-সহ নানা দেশের নাগরিকদের অপহরণের খবর পাওয়া গিয়েছিল গত কালই। আজ নতুন বিপদের ইঙ্গিত পেয়েছে ব্রিটেন। আইএসআইএসে যোগ দিয়ে ইরাকে লড়ছে বেশ কিছু ব্রিটিশ মুসলিম যুবক। তাদেরই এক জন আজ ব্রিটেনেও ‘বিধর্মীদের’ বিরুদ্ধে হামলা চালানোর আর্জি জানিয়েছে টুইটারে। সম্প্রতি এসেক্সের কোলচেস্টারে খুন হন এক সৌদি তরুণী। মুসলিম পোশাক পরিচ্ছদের জন্যই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।

এই ঘটনাকেই হাতিয়ার করে ব্রিটেনে মুসলিম ভাইদের ছুরি হাতে নেওয়ার ডাক দিয়েছে ওই ব্রিটিশ জঙ্গি। টুইটারে আবু রাশাস ব্রিটানি ছদ্মনাম ব্যবহার করে সে। ব্রিটানি জানিয়েছে, আইএসআইএস প্রধান আবু-বকর অল-বাগদাদির নির্দেশে সে ব্রিটেনে ফিরতে চায়। এই ধরনের আরও কিছু জঙ্গির দেশে ফেরার ইঙ্গিত পেয়েছে ব্রিটিশ সরকার। আর তাতেই আতঙ্কিত সে দেশের গোয়েন্দারা।

আজ পার্লামেন্টে এই বিপদের কথা উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তাঁর কথায়, “ইরাকে প্রায় ৪০০ ব্রিটিশ জঙ্গি আছে। এরাই সব চেয়ে বড় বিপদ।” ইরাকে ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে না বলেই জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ইরাকে লড়াইয়ের জেরে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়া অব্যাহত। আজ তা পৌঁছে গিয়েছে ব্যারেল প্রতি ১১৫ ডলারে। তেল বিশেষজ্ঞ টমাস ভার্গার কথায়, “সরবরাহে যে বড় ধরনের বাধা আসতে চলেছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iraq war
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE