ডাবলিনে ইউক্রেনের সমর্থনে একজোট ইউরোপের নেতারা। সেই সম্মেলনের বাইরে সমর্থক এক খুদে। ছবি: রয়টার্স।
ইউক্রেন ছেড়ে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে বার্তা দিল ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট। আজ দেশবাসীর প্রতি পার্লামেন্টের বার্তা, হয় ইউক্রেনে থাকুন, নয় রাশিয়ায় যোগ দিন। তার মধ্যেই এ দিনই রাশিয়ার অফিসারদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা।
ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টের ভোটে এক রকম সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছে, এ বার রাশিয়ার অংশ হতে চলেছে এই উপদ্বীপ। অপেক্ষা শুধু গণভোটের। আর দশ দিনের মধ্যে সে পর্বও চুকিয়ে ফেলতে চায় ক্রিমিয়ার নতুন রুশপন্থী সরকার। ইউক্রেনের তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াতসেনিয়াক অবশ্য এই ঘোষণা উড়িয়ে জানিয়েছেন, ক্রিয়া পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই অবৈধ। তাঁর মন্তব্য, “ক্রিমিয়া বরাবরই ইউক্রেনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত ছিল, আছে এবং থাকবে।”
এমনিতেই ক্রিমিয়ায় অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ রুশভাষী। পুতিন সেনা সরানোর কথা বললেও কৃষ্ণ সাগরের ইউক্রেনীয় এই উপদ্বীপে এখনও রুশ সেনার উপস্থিতি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখানকার পার্লামেন্ট সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেবে ক্রিমিয়া। ১৬ মার্চ এই বিষয়ে গণভোট নেওয়া হবে। এই উপদ্বীপের সকলেই যে সরাসরি রাশিয়ার অধীনে যেতে আগ্রহী, এমন নয়। ক্রিমিয়ার এক চতুর্থাংশ মানুষ ইউক্রেনীয়। আর সেই জন্যই গণভোট। কূটনীতিকরা মনে করছেন, ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট হঠাৎ করে এমন ঘোষণা করেনি। তাঁদের মতে, রুশ প্রেসিডেন্টের সম্মতি ছাড়া এই ঘোষণা সম্ভবই নয়।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা আবার ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন। প্রাথমিক ভাবে সেখানে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জও জানিয়েছিল, আর কয়েক দিনের মধ্যেই রুশ নাগরিকদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা, সম্পত্তি ফ্রিজ এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য প্রস্তুত তারা। কিন্তু তার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানান, রাশিয়ার উপরে তাঁরা নিষেধাজ্ঞা জারি করছেন। আর যে সব রুশ নাগরিক ইউক্রেনে রাশিয়ার এই ‘আগ্রাসন’ সমর্থন করছেন, তাঁদের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যারা বাধা সৃষ্টি করবে, বাধা দেওয়া হবে তাদেরও। আপাতত রুশ অফিসারদের ভিসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ব্রাসেলসে বৈঠকের আগে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে রাশিয়ার উপরে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করা হবে। প্রয়োজনে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথাও ভাবা হবে। গত কাল প্যারিসে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি এবং রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাক্ষাৎ হলেও ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাননি লাভরভ। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইউক্রেন সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতেও রাজি নন তিনি। ন্যাটো বা ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান (ওএসসিই) ইউক্রেনে সমাধান খুঁজতে যা করছে, তা যথেষ্ট নয় বলে লাভরভের দাবি। এ দিনই আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছে, ইউক্রেনের পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ-সহ ১৭ জন অফিসারের সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছে।
ইউক্রেনের অন্দরে বিশেষত ক্রিমিয়ার পরিস্থিতি এখনও অশান্ত। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত রবার্ট সেরিকে ক্রিমিয়ায় ঢোকার সময় তাঁকে আটকে দেয় সশস্ত্র জনতা। একটি ক্যাফের ভিতরে তাঁকে আটকে তারা ‘রাশিয়া’, ‘রাশিয়া’ স্লোগান দিতে থাকে। কালও রুশ সীমান্তের দনেৎস্কে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পভবন তছনছ করে কয়েকশো বিক্ষোভকারী। মুখে ছিল ‘রাশিয়া’, ‘রাশিয়া’ স্লোগান। পুলিশ পরে তাদের সরিয়ে দেয়। আটকও করা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy