Advertisement
E-Paper

খতম কুয়াশি ভাইয়েরা, হত ৪ পণবন্দিও

শার্লি এবদোর জঙ্গিরা তখনও খতম হয়নি, প্যারিসের অদূরে এক সুপারমার্কেট চলে গেল জঙ্গি-দখলে। দিনের শেষে দু’জায়গাতেই জঙ্গিরা মারা গিয়েছে বটে, তবে সুপারমার্কেটের পণবন্দিদের মধ্যেও চার জনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। টানা তিন দিন ধরে উপর্যুপরি জঙ্গি হানা দেখতে দেখতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে ফ্রান্স। প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওঁলাদ দেশবাসীকে শুধু অনুরোধ করছেন, জাতীয় সংহতি যেন অটুট থাকে। জাতিবিদ্বেষ যেন না ছড়ায়।

সোমঋতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
লড়াইয়ের শেষ প্রহর। জ্বলছে পূর্ব প্যারিসের পোর্ত দো ভ্যাঁসের সুপারমার্কেটের একাংশ।

লড়াইয়ের শেষ প্রহর। জ্বলছে পূর্ব প্যারিসের পোর্ত দো ভ্যাঁসের সুপারমার্কেটের একাংশ।

শার্লি এবদোর জঙ্গিরা তখনও খতম হয়নি, প্যারিসের অদূরে এক সুপারমার্কেট চলে গেল জঙ্গি-দখলে। দিনের শেষে দু’জায়গাতেই জঙ্গিরা মারা গিয়েছে বটে, তবে সুপারমার্কেটের পণবন্দিদের মধ্যেও চার জনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।

টানা তিন দিন ধরে উপর্যুপরি জঙ্গি হানা দেখতে দেখতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে ফ্রান্স। প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওঁলাদ দেশবাসীকে শুধু অনুরোধ করছেন, জাতীয় সংহতি যেন অটুট থাকে। জাতিবিদ্বেষ যেন না ছড়ায়।

জাতি-দাঙ্গা হয়েছে আগে, কিন্তু জেহাদি সন্ত্রাস আসলে এত দিন সে ভাবে আক্রমণ করেনি ফ্রান্সকে। শার্লি এবদো পত্রিকা অফিসে জঙ্গি হামলার ঘটনা দিয়েই ফ্রান্স সবে বুঝতে শুরু করছিল, সন্ত্রাসের মুখোমুখি হওয়া মানে ঠিক কী। তিন দিনের মাথায় তারা জেনে গেল, সন্ত্রাস ক্রমশ শিকড় ছড়িয়ে চলেছে তার মাটিতে। এবং পিছনে রয়েছে স্বয়ং আল কায়দা। এবং ফ্রান্সকে দিয়েই বেশ কয়েক বছর পরে জেহাদি সন্ত্রাস আবার ফিরে এল ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ বলেন, “প্যারিসে জঙ্গিরা দেখিয়ে দিল, ঘৃণা এবং কষ্ট ছাড়া আর কিছুই তাদের দেওয়ার নেই। আমেরিকা ফ্রান্সের পাশেই আছে, থাকবেও।”

শুক্রবার শার্লি এবদোয় গুলিচালনার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি শেরিফ (৩২) ও সঈদ কুয়াশি (৩৪) খতম হয়েছে পুলিশের গুলিতে। তাদেরই এক জন বলে গিয়েছে, ইয়েমেন থেকে আল কায়দার মদত পেয়েছে তারা। তবে কুয়াশি ভাইদের মৃত্যুতে এ দিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাননি ফরাসিরা। কারণ এর মধ্যে গত কালই আরও চারটি নাশকতার ঘটনা ঘটে যায়। এ দিন কুয়াশিরা নিকেশ হওয়ার আগেই পূর্ব প্যারিসে সুপারমার্কেটে হামলা চালিয়ে জনা কুড়ি পণবন্দি করে ফেলে দুই জঙ্গি। এর মধ্যে কমপক্ষে চার জন নিহত হয়েছেন। মারা গিয়েছে পুরুষ জঙ্গিটিও। মহিলা জঙ্গি উধাও।

প্যারিস থেকে ২৫ মাইল দূরের দামার্ত্যা-ওঁ-গোয়েল গ্রামটায় অবশ্য উৎকণ্ঠার পারদ চড়েছিল সকাল থেকেই। গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল অন্তত হাজার সেনা। গত দু’দিনের গুলির লড়াইয়ের পর এই গ্রামেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল শেরিফ ও সঈদ কুয়াশি। গ্রামের ছাপাখানায় এক মহিলাকে পণবন্দি করে রেখেছিল তারা। সেই অবস্থাতেই একটি টিভি চ্যানেলকে শেরিফ জানায়, তাকে অর্থসাহায্য করেছে ইয়েমেনের আল কায়দা নেতা আনোয়ার আল আওলাকি। এই আওলাকি বছর তিনেক আগে ড্রোন হানায় নিহত হয়। ফরাসি পুলিশের আত্মসমর্পণের নির্দেশের উত্তরে এ দিন দুই ভাইও সুর চড়ায়, “শহিদ হতে আমরা প্রস্তুত।”

সন্ত্রাসের পর্ব আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে বলে যখন মনে করছিল ফ্রান্স, ঠিক তখনই টিভিতে ব্রেকিং নিউজ পূর্ব প্যারিসের পোর্ত দো ভ্যাঁসেতে নতুন করে বন্দুকবাজের হামলা। প্রথমে রাস্তায় গুলিবৃষ্টি। তার পর কোশার সুপারমার্কেটের একটা দোকানের দখল নিয়ে নেওয়া। চমকে ওঠে গোটা দেশ। কুয়াশি ভাইয়েরা তো কোণঠাসা। তা হলে এই নয়া বন্দুকবাজরা কারা?

পুলিশ জানিয়েছে, মূল সন্দেহভাজন ৩২ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। নাম আমেদি কুলিবে। হায়াত বৌমেদি নামে একটি মেয়েও ছিল তার সঙ্গে। কুয়াশি ভাইদের সঙ্গে এদের কোনও যোগ রয়েছে কি না, প্রথমে তা জানা যায়নি। কিন্তু আমেদি ও হায়াত কুয়াশি ভাইদের মুক্তির দাবি জানাতেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজধানীর আশপাশে জারি হয় চূড়ান্ত সতর্কতা। ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হয় প্যারিস ও তার লাগোয়া এলাকার সমস্ত দোকানপাটের।

পূর্ব প্যারিসে যখন এই পরিস্থিতি, উত্তরপূর্বে দামার্ত্যা-ওঁ-গোয়েল গ্রামটা তখনও ঘরবন্দি। পুলিশের আশঙ্কা ছিল, কুয়াশি ভাইদের কাছে রকেট লঞ্চার থাকতে পারে। দুই জঙ্গি গ্রামে ঢুকেছে খবর পেয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুলের জানলা-দরজা। ভিতর থেকেই এক ছাত্র ফোনে জানায়, “ভীষণ ভয় করছে। আলোগুলো পর্যন্ত নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে, আমরা ভিতরে।”


স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ফরাসি পুলিশ বাহিনী। শুক্রবার পোর্ত দো ভ্যাঁসেতে।

গত কাল প্যারিস লাগোয়া শহরতলিগুলো দাপিয়ে বেড়ানোর পর দিনের শেষে এক মহিলার গাড়ি ছিনতাই করে কুয়াশি ভাইয়েরা। তারা প্যারিসের দিকে পালাচ্ছে খবর পেয়ে ন্যাশনাল-২ মোটরওয়েতে যানচলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কিন্তু জঙ্গিরা পালায়। ব্যর্থ পুলিশ পিছু ধাওয়া করে তাদের। এ দিন সকাল দশটা নাগাদ এক জন মহিলাকে পণবন্দি করে পায়ে হেঁটেই তারা ঢুকে পড়ে গ্রামের ছাপাখানায়। দিদিয়ের নামে এক কর্মী তখন সেখানে ছিলেন। পরে তিনি জানান, ওদের পুলিশ বলে ভুল করেছিলেন। “আমি ওদের সঙ্গে হাতও মেলালাম। জবাবে ওরা বলল, বেরিয়ে যাও। আমরা সাধারণ মানুষকে মারতে চাই না।” সন্ধে নামতে গুলির লড়াই তীব্র হয়। তবে চূড়ান্ত অপারেশনটা দ্রুত মিটে যায়, বলছিলেন সকলে। তবে কোশারের ঘটনা তাঁদের বুঝিয়ে দিয়ে গেল, উদ্বেগের প্রহর কাটেনি। সুপারমার্কেট থেকে মেয়ের হাত ধরে বেঁচে ফিরেছেন এক মহিলা। ভয়ার্ত মুখে চিৎকার করে বললেন, “যুদ্ধ যুদ্ধ!”

ছবি: এএফপি।

Paris Terror Attack Suspects Killed Kouachi brothers charlie hebdo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy