Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করার প্রয়াসকে স্বীকৃতি নোবেলে

বাকি চারটি দেশ পারেনি। লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন এবং সিরিয়া— হয় চলে গিয়েছে একনায়কের হাতে নয়তো ডুবে গিয়েছে হিংসা আর গৃহযুদ্ধে। স্বৈরাচারী শাসককে গদিচ্যুত করার পরে একমাত্র সফল ভাবে বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের পথে উত্তীর্ণ হয়েছে তিউনিশিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪৫

বাকি চারটি দেশ পারেনি। লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন এবং সিরিয়া— হয় চলে গিয়েছে একনায়কের হাতে নয়তো ডুবে গিয়েছে হিংসা আর গৃহযুদ্ধে। স্বৈরাচারী শাসককে গদিচ্যুত করার পরে একমাত্র সফল ভাবে বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের পথে উত্তীর্ণ হয়েছে তিউনিশিয়া। আর সেই প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিউনিশিয়ার সংগঠন ‘ন্যাশনাল ডায়লগ কোয়ারটেট’-কে এ বারের শান্তি পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানিয়েছে নোবেল কমিটি।

মাত্র পাঁচ বছর আগে সেই বিদ্রোহের শুরু। ক্ষোভ জমতে জমতে ২০১০-এর ১৭ ডিসেম্বর তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে তিউনিশিয়ার রাজপথে। মহম্মদ বৌয়াজিজি নামে বেকার হয়ে যাওয়া রাস্তার এক দোকানি নিজের গায়ে আগুন দেন। বিদ্রোহের বারুদস্তূপে সেই আগুনই ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন তিউনিশিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসক জিনে এল-আবিদিন বেন আলি। তিউনিশিয়ার এই বিপ্লব ছুঁয়ে যায় গোটা পশ্চিম এশিয়া থেকে উত্তর আফ্রিকা। যাকে কিছু দিনের মধ্যেই ‘আরব বসন্ত’ বলে আখ্যা দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

‘ন্যাশনাল ডায়লগ কোয়ারটেট’ চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে তৈরি— তিউনিশিয়ান জেনারেল লেবার ইউনিয়ন, তিউনিশিয়ান কনফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রি, তিউনিশিয়ান হিউম্যান রাইটস লিগ এবং তিউনিশিয়ান অর্ডার অব লইয়ার্স। নোবেল কমিটি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, এই শান্তি পুরস্কার কোনও আলাদা প্রতিষ্ঠান নয়, সামগ্রিক ভাবে কোয়ারটেট-কেই দেওয়া হচ্ছে। অসলোয় পুরস্কার ঘোষণার পরে কমিটির চেয়ারপার্সন কাসি কুমান ফাইভ বলেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়া
এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের লড়াই হয় একটা জায়গায় এসে থমকে গিয়েছে, নয় ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে। তিউনিশিয়াই একমাত্র ব্যতিক্রমী দেশ যারা গণতান্ত্রিক পরিবর্তন চাক্ষুষ করেছে। সেখানে মানবাধিকারের মৌলিক শর্তগুলো বজায় রাখার দাবি জানিয়ে এসেছে একটা সজাগ ও তৎপর নাগরিক সমাজ।’’

২০১৩ সালে তৈরি হয় ‘ন্যাশনাল ডায়লগ কোয়ারটেট।’ তিউনিশিয়ায় বিপ্লবের দু’বছর পরে। ওই সময়ে ইসলামি এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলির মধ্যে সংঘাত এবং বিরোধী নেতা-সহ দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা খুন হওয়ার পরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই পরিস্থিতিতে দেশে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল ‘ন্যাশনাল ডায়লগ কোয়ারটেট।’ লিঙ্গ, ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে গোটা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার স্থাপনের জন্য সক্রিয় হয়েছিল এই সংগঠন। সেই প্রচেষ্টাকেই সম্মান জানিয়েছে নোবেল কমিটি। যার চেয়ারপার্সন বলেছেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা বা বিশ্বের অন্য অংশে যাঁরা শান্তি এবং গণতন্ত্রকামী, তাঁদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এই পুরস্কার।’’

শান্তির নোবেল পাওয়ার খবরে মেতে উঠেছে তিউনিশিয়াও। দেশের লেবার ইউনিয়নের সচিবের কথায়, ‘‘ঠিক সময়ে পুরস্কারটা এল। কারণ আমাদের দেশ এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।’’ বাস্তব কিন্তু
সে কথাই বলছে। তিউনিশিয়ায়
শান্তি যে খুব জোরদার ভাবে
প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তা মানছেন অনেকেই। তার প্রমাণ এ বছরের মার্চ এবং জুনেই মিলেছে। মার্চে তিউনিসের ন্যাশনাল বার্দো মিউজিয়াম তছনছ করে দিয়েছিল আই এস জঙ্গিরা, প্রাণ গিয়েছিল ২১ পর্যটকের। জুন মাসে সুসের সৈকতে একটি রিসর্টে হামলা চালায় ইসলামি বন্দুকবাজ। ৩৮ জন প্রাণ হারান তাতে। এ ক্ষেত্রেও হতদের অনেকেই ছিলেন পর্যটক। তিউনিশিয়ার অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি পর্যটনে ধাক্কা লাগায় চিন্তায় পড়ে যায় প্রশাসন।

শুধু তাই নয়, তিউনিশিয়ার তিন হাজারেরও বেশি মানুষ সিরিয়া, ইরাক এবং লিবিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছে। এদের অনেকেই দেশে হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে। এমন অবস্থায় তিউনিশিয়ার সংগঠনকে শান্তির নোবেল দেওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের উদ্দেশে নোবেল কমিটির বার্তা: এই তিউনিশিয়াই তো গত বছর প্রেসিডেন্ট এবং সাধারণ নির্বাচন দেখেছে। এ দেশে এখন সংবিধান, অবাধ নির্বাচন, ধর্মনিরপেক্ষ এবং ইসলামি দলের জোট সরকার — এই শব্দগুলো ঘোর বাস্তব। পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কটের দিকে তাকালে সেটা কি কম কথা? যে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেও দেশের ইসলামি এবং ধর্মনিরপেক্ষ পার্টিগুলিকে জাতীয় স্তরে আলোচনার জায়গায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে ‘ন্যাশনাল ডায়লগ কোয়ারটেট’, তা কি সাধুবাদযোগ্য নয়?

নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘিরে
বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগেই মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চি পেয়েছেন এই পুরস্কার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখযোগ্য কোনও কাজের আগেই বারাক ওবামাকেও বেছে নেওয়া হয়েছিল এই সম্মানের জন্য। বিশ্বের সব শিশু স্কুলে যাবে— জঙ্গিগুলিতে জখম মালালা ইউসুফজাইয়ের সেই স্বপ্নকেও স্বীকৃতি দিয়েছে নোবেল। সে
স্বপ্ন হয়তো এখনও অধরা। তিউনিশিয়ার সংগঠনও যে লক্ষ্যে পশ্চিম এশিয়ার বাকি দেশগুলো থেকে নিজেদের ব্যতিক্রমী অস্তিত্ব তৈরির চেষ্টা করেছে, সেই অবিচল লক্ষ্যকেই স্বীকৃতি দিয়েছে এ বারের শান্তির নোবেল।

nobel peace prize tunisian civil society groups nobel peace prize 2015 abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy