Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের অকালমৃত্যু, হাসিনাকে ঢুকতেই দিলেন না খালেদা

ব্যক্তিগত সৌজন্যও হার মানল রাজনীতির কুটিলতার কাছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের অকালমৃত্যুর পরে সমবেদনা জানাতে শনিবার রাতে তাঁর গুলশনের দফতরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ভেতর থেকে ফটকে তালা দিয়ে রেখে তাঁকে ঢুকতেই দিলেন না বিএনপি নেতৃত্ব। কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরে নিজের বাড়ি গণভবনে ফিরে যান হাসিনা।

আরাফত রহমান কোকো

আরাফত রহমান কোকো

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪২
Share: Save:

ব্যক্তিগত সৌজন্যও হার মানল রাজনীতির কুটিলতার কাছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের অকালমৃত্যুর পরে সমবেদনা জানাতে শনিবার রাতে তাঁর গুলশনের দফতরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ভেতর থেকে ফটকে তালা দিয়ে রেখে তাঁকে ঢুকতেই দিলেন না বিএনপি নেতৃত্ব। কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পরে নিজের বাড়ি গণভবনে ফিরে যান হাসিনা।

বেআইনি মুদ্রা পাচারের মামলায় ৬ বছর কারাবাসের সাজা এড়াতে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালা লামপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফত রহমান কোকো (৪৫)। মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না-থাকার কারণে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন দুর্নীতির একাধিক মামলার আসামি কোকো। শনিবার সকালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা গিয়েছেন তিনি।

ছেলের মৃত্যুসংবাদ আসামাত্র খালেদা দৃশ্যত ভেঙে পড়লেও সরকারের ইস্তফা চেয়ে তাঁর ডাকে ২১ দিন ধরে চলে আসা টানা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অবরোধের মধ্যেই আবার কাল থেকে ৩৬ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে খালেদার জোট। এই আন্দোলনে বিএনপি ও তার শরিক দল জামাতে ইসলামি চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে বাস ও অন্য যানবাহনে আগুন দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ৬৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছেন আগুনে পুড়ে। মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে হয়েছেন আরও অন্তত ৫৫ জন। বণিকসভা জানিয়েছে, খালেদার ডাকে এই অবরোধে শুক্রবার পর্যন্ত ক্ষতির অঙ্ক ৩৬০০ কোটি টাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বিএনপির এই জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে খালেদাকে সমবেদনা জানাতে গুলশনে তাঁর দফতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০০৯-এর মে মাসে হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিঞার মৃত্যুর পরে খালেদা তাঁর বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে এসেছিলেন। এ দিন রাত আটটা নাগাদ নিজের বাড়ি থেকে গাড়িতে করে হাসিনা গুলশনে খালেদার দফতরে যান। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব দফতরের ফটকে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে রাখায় তিনি ঢুকতে পারেননি।

খালেদার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, “নেত্রী তখন ঘুমোচ্ছিলেন।” বিএনপি নেতৃত্বের দাবি, শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ডাক্তাররা খালেদাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য কোনও নেতা কেন প্রধানমন্ত্রীকে দফতরে স্বাগত জানানোর মতো সাধারণ সৌজন্যটুকু দেখালেন না, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “সব প্রোটোকল ভেঙে এক জন মা হিসেবে ছেলেহারা আর এক জন মাকে সমবেদনা জানাতে বিএনপি নেত্রীর দফতরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁকে প্রবেশ করতে না-দেওয়াটা লজ্জাজনক ও আমানবিক। এই অভদ্রতা বাঙালি শিষ্টাচারের বাইরে।”

বিএনপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত সোমবার শেষকৃত্যের জন্য কোকোর মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। তাঁর দাদা তারেক রহমান লন্ডনে থাকেন। তিনি কুয়ালা লামপুর যাবেন বলে ঘোষণা করা হলেও পরে জানানো হয়, তারেক সেখানে যাচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malaysia arafat rahman koko dhaka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE