Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নওয়াজের নির্দেশেই কাজ, ফরজানা-হত্যায় ধৃত আরও ৪

প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি এসেছিল বৃহস্পতিবার। তার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ল ফরজানা খুনে অভিযুক্ত আরও চার জন। তিন দিন আগে ব্যস্ত হাইকোর্ট চত্বরে, দিনে দুপুরে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয় অন্তঃসত্ত্বা ফরজানা পরভিনকে। অভিযোগের আঙুল ওঠে তাঁরই বাড়ির লোকের বিরুদ্ধে। পরিবারের সম্মানরক্ষার্থে খুনের ঘটনা পাকিস্তানে নতুন নয় মোটেই। কিন্তু এ ঘটনার নৃশংসতায় চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব।

সংবাদ সংস্থা
লাহৌর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০২:২১
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি এসেছিল বৃহস্পতিবার। তার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ল ফরজানা খুনে অভিযুক্ত আরও চার জন।

তিন দিন আগে ব্যস্ত হাইকোর্ট চত্বরে, দিনে দুপুরে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয় অন্তঃসত্ত্বা ফরজানা পরভিনকে। অভিযোগের আঙুল ওঠে তাঁরই বাড়ির লোকের বিরুদ্ধে। পরিবারের সম্মানরক্ষার্থে খুনের ঘটনা পাকিস্তানে নতুন নয় মোটেই। কিন্তু এ ঘটনার নৃশংসতায় চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব।

এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হতেই কড়া ভাষায় নিন্দা করেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ হুসেনকে (যিনি আবার সম্পর্কে নওয়াজের ভাই) নির্দেশ দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে অভিযুক্তদের। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। ঘটনার দিন ফরজানার বাবাকে আটক করেছিল তারা। আর আজ ধরা পড়েছেন এক কাকা-সহ চার জন। তবে দুই ভাই এখনও পলাতক। লাহৌর পুলিশের মুখপাত্র নিয়াব হায়দার জানিয়েছেন, আরও দুই ভাইয়ের খোঁজ চলছে।

এ দিকে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গিয়েছে ফরজানার স্বামী ইকবাল সম্পর্কেও। কয়েক মাস আগেই রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই পথে বাধা ছিলেন ইকবালের প্রথম স্ত্রী। পথের কাঁটা সরাতে তাই প্রথমা স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিলেন, নিজেই সে কথা স্বীকার করেছেন ইকবাল। ছ’ বছর আগে থানায় বাবার নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিল প্রথমা স্ত্রী-র ছেলে। পরে সে-ই বাবাকে ক্ষমা করে দিলে কোনও রকম শাস্তিভোগ না করে ছাড়া পেয়ে যান তিনি।

তবে দ্বিতীয় বিয়েও এত সহজে হয়নি। পদে পদে বাধা এসেছে। ফরজানার পরিবার প্রথমে দাবি করেছিল, এক ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গিয়েছে ফরজানার। তাতে আমল না দিয়ে নিকাহ্ করে ফেললে ইকবালের নামে মামলা ঠুকে দেন তাঁর শ্বশুর। অপহরণ ও বিয়েতে জোর করার সেই মামলায় সাক্ষ্য দিতেই মঙ্গলবার লাহৌর হাইকোর্টে গিয়েছিলেন দু’জনে। সবে আদালতে ঢুকবেন, তখনই তাঁদের ঘিরে ধরে জনা কুড়ির একটা দল। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, ইট দিয়ে থেঁতলে আদালত চত্বরেই খুন করা হয় ফরজানাকে।

ধরা পড়ার পর পুলিশি জেরায় ভেঙে তো পড়েনইনি, উল্টে ফরজানার বাবা জানিয়েছিলেন মেয়েকে উচিত শিক্ষা দিতেই মেরে ফেলেছেন তাঁকে। তাই অনুতাপের প্রশ্নই ওঠে না।

একে তো ঘটনার বীভৎসতা, তার উপর খোদ মেয়ের বাবার এই নির্লজ্জ স্বীকারোক্তিতে বিরক্ত আমেরিকা ও ব্রিটেন কড়া বার্তা পাঠিয়েছে শরিফ প্রশাসনকে। চুপ করে নেই মহিলা সংগঠনগুলিও। এক সংগঠনের চেয়ারপার্সন খাওয়ার মুমতাজ জানিয়েছেন, “সম্মান রক্ষার নামে কী ভাবে অবাধে খুন চলছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।” তবে এত কিছুর পরও অপরাধীরা শাস্তি পাবে কি না, সেই প্রশ্ন তাড়া করছে তাঁকে। মুমতাজের কথায়, ২০০৪-এ সম্মান রক্ষার্থে খুন ঠেকাতে আইন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বড়সড় গলদ রয়ে গিয়েছে তাতে। স্থানীয় আইন বলছে, অপরাধীরা যদি আত্মীয় হয়, সে ক্ষেত্রে শাস্তি মকুব হতে পারে। আইনের এই ফাঁক গলেই পার পেয়ে যাচ্ছে খুনিরা। আর সম্মান রক্ষার নামে খুন বেড়েই চলেছে বছরের পর বছর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nawaz Sharif Farzana Parveen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE