Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিকিনি পার্টির ছবি ছড়িয়ে গেল ইনস্টাগ্রামে, বিত্ত-দর্শন ইরানের

পাঁচতারার ঝাঁ চকচকে পুল-সাইডে ঢালাও আয়োজন। আন্তর্জাতির ব্র্যান্ডের ডিজাইনার বিকিনিতে সেজেছেন মহিলারা। কেউ ওয়াইন গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন, কেউ মগ্ন সুখটানে। পুরুষদের প্রায় সকলের হাতেই সোনার ঘড়ি। আর স্বর্ণ-ঝলক মহিলাদের সর্বাঙ্গে। তত ক্ষণে বাইরের সারি সারি মার্সিডিজ-অডি-বিএমডব্লিউ সামলাতে নাজেহাল হোটেল কর্মীরা! ম্যানহ্যাটন বা মায়ামি নয়। এই ছবি তেহরানের। যে দেশে ধর্মের অনুশাসনে ব্রাত্য মদ্যপান।

ইনস্টাগ্রামের সেই পেজ।

ইনস্টাগ্রামের সেই পেজ।

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

পাঁচতারার ঝাঁ চকচকে পুল-সাইডে ঢালাও আয়োজন। আন্তর্জাতির ব্র্যান্ডের ডিজাইনার বিকিনিতে সেজেছেন মহিলারা। কেউ ওয়াইন গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন, কেউ মগ্ন সুখটানে। পুরুষদের প্রায় সকলের হাতেই সোনার ঘড়ি। আর স্বর্ণ-ঝলক মহিলাদের সর্বাঙ্গে। তত ক্ষণে বাইরের সারি সারি মার্সিডিজ-অডি-বিএমডব্লিউ সামলাতে নাজেহাল হোটেল কর্মীরা!

ম্যানহ্যাটন বা মায়ামি নয়। এই ছবি তেহরানের। যে দেশে ধর্মের অনুশাসনে ব্রাত্য মদ্যপান। ধর্ষণ থেকে বাঁচতে গিয়ে অপরাধীকে দুর্ঘটনাবশত খুন করে ফেলায় যে দেশের রেহানেহ জাব্বেরিকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছে, সেই ইরানেই দিনে-রাতে ফলাও করে চলছে মদ-মাদকের পার্টি। সেখানে অবশ্য মহিলারা পোশাক-ফতোয়া মানেন না। পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন নির্দ্বিধায়। যে দেশে কি না, পুরুষদের সঙ্গে এক গ্যালারিতে বসে ভলিবল ম্যাচ দেখার ‘অপরাধে’ এক বছর কারাবাসে ঘোঞ্চে ঘাভামি!

সম্প্রতি, ছবির একটি সোশ্যাল সাইট ইনস্টাগ্রামে ‘রিচ কিড্স অব তেহরান’ নামে এমন সব ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করছেন ইরানের ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীরা। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ইরানের এমন একটি পার্টির ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন এক যুবক। তাঁরা যে সাধারণ নন, তা জাহির করতে ছবিটির নাম দেন রিচ কিড্স অব তেহরান। অর্থাৎ, তেহরানের ধনী সন্তানেরা অচলায়তন আইনকে অনায়াসে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আবেদনের তোয়াক্কা না করেই রেহানেহ জাব্বেরির মতো এক নির্যাতিতাকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়। মহম্মদ জাফরিকে গদিচ্যুত করে ২০১৩ সালে ইরানের মসনদে বসেন হাসান রৌহানি। পদে বসার আগেই জাফরির ‘অচলায়তন’ নীতির সমালোচনা করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, বিশ্বের কাছে দেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবেন তিনি। নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দেবেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিবর্তনের। প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় রৌহানি বলেছিলেন, “মহিলাদের সমানাধিকার থাকা উচিত। মানবতা, জ্ঞান, বুদ্ধি আর প্রকৃতির নিরিখে নারী-পুরুষের কোনও ফারাক নেই। ঈশ্বরের কাছে তারা এক।” তবে আপাত ভাবে পূর্বতনদের ‘স্বৈরাচারী’ তকমা থেকে রেহাই পেয়েছিলেন রৌহানি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মের অনুশাসনে অচল থাকা বা বিত্তবানের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ নতুন নয়। মানবাধিকারের প্রশ্নে রৌহানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী শিরিন ইবাদির মতো সমাজকর্মীও। রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ও রৌহানির দ্বিচারিতা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন শিরিন। প্রশাসনের সেই দ্বিচারিতার ছবিই এ বার ধরা পড়ল ইনস্টাগ্রামে। এক দিকে, জাব্বেরির ফাঁসি নিয়ে উত্তাল বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলির প্রতিবাদ মিছিলের ছবি। অন্য দিকে, তেহরানের পশ্চিমী জীবন-দর্শন।

সম্প্রতি, ইনস্টাগ্রামের ওই অ্যাকাউন্টটি ‘অশালীন’ ছবির জন্য নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে তাতে কী? ইন্টারনেটে সেই বিত্ত-দর্শনের ছবি বিভিন্ন সাইটে এখনও ছড়াচ্ছে। তেহরানের এক তরুণের দাবি, প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন সেটাই তো তাঁরা করছেন বিশ্বের কাছে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই দেশের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ বাড়াচ্ছেন। ইনস্টাগ্রামে যুবকের পোস্ট, “ইরান শুধু উটে চড়ার দেশ নয়। এখানে অনেকে বিএমডব্লিউ-ও চড়ে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iran bikini party iran instagram bikini party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE