নিয়ম ভাঙার নিয়ম নেই। থরে থরে সাজানো লোভনীয় বারবিকিউয়ের আশায় দু’-তিন ঘণ্টাও তাই ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ক্রেতারা। আজ পর্যন্ত কেউ লাইন টপকে সোজা কাউন্টারে পৌঁছেছেন, এমন অভিযোগ কানে আসেনি রেস্তোরাঁ মালিকের। এত দিনের নিয়মও শেষে ভেঙে গেল বৃহস্পতিবার। আর ভাঙলেনও এমন এক জন, যাঁর হাতেই রয়েছে দেশের নিয়ম-নীতি তৈরির গুরুভার।
ওয়াশিংটন ছেড়ে তিন দিনের সফরে বেরিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। লক্ষ্য বলতে, ডেমোক্র্যাটিক দলের হয়ে মানুষের থেকে চাঁদা তোলা। গত কাল অস্টিনে প্রচারের পর বিখ্যাত ফ্রাঙ্কলিন বারবিকিউয়ে ঢোকেন প্রেসিডেন্ট। তখন সবে দুপুর গড়িয়েছে। ফলে ক্রেতাদের ভিড়ে যথারীতি জমজমাট রেস্তোরাঁ চত্বর।
প্রেসিডেন্ট আর কী করেন! মেলা কাজ পড়ে আছে যে। লাইন টপকে তাই এগিয়ে যান কাউন্টারের দিকে। পরে ওবামা বলেন, “লাইনটা বেশ লম্বা। আমি মাঝখান থেকে লাইন ভেঙে ঢুকে পড়লাম। এ ভাবে সুবিধে নেওয়ায় খারাপই লাগছে।”
বছর দশেক বয়স এই ফ্রাঙ্কলিন রেস্তোরাঁর। মালিক আরন ফ্রাঙ্কলিন জানালেন, “ও-সব লাইন-টাইন ভাঙা আমার দোকানে পাবেন না।” কিন্তু প্রেসিডেন্ট যে নিয়ম মানলেন না? “খাবার অর্ডার দিতে ওবামা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। এর পর কি আর কিছু বলা যায়” জবাব আসে ঘাবড়ানো গলায়। প্রেসিডেন্টকে হাতের নাগালে পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেননি আরন। মেয়েকে ডেকে এনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছবি তুলিয়ে নিয়েছেন। কেমন লাগল বারাক ওবামাকে? এ বার আর উত্তর আসতে দেরি হয়নি। “মিশে তো মনে হল ভাল মানুষ,” জানিয়েছেন ফ্রাঙ্কলিন।
যাঁকে টপকে ঢুকে পড়েছিলেন, তাঁকেও পুরোপুরি নিরাশ করেননি প্রেসিডেন্ট। জায়গা ছেড়ে দেওয়ায় এক বাবা-মেয়ের খাবারের বিলটা মিটিয়েছেন নিজের কার্ড থেকেই। তাঁর নিজের বিলের অঙ্ক অবশ্য কম কিছু হয়নি। আট পাউন্ড ব্রিসকেট, সসেজ, আর টার্কির বড় বড় বাক্স নিয়ে প্রেসিডেন্টের রক্ষীরা যখন দোকান ছাড়ছেন, ওবামা তখন তিনশো ডলারের বিল মেটাচ্ছেন কাউন্টারে।
প্রেসিডেন্টের নিয়ম ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও। ঠিক হয়েছে কি ভুল, তা নিয়ে জোরদার তর্কও চলেছে টুইটারে। বারাক ওবামা সদলবলে দোকান ছাড়ার পর ভোটাভুটির আসর বসিয়েছিল ফ্রাঙ্কলিন বারবিকিউ। টুইটারে বিরুদ্ধ মত যা-ই থাকুক না কেন, সেখানে কিন্তু বিপুল ভোটে জিতে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ১৪৫টা ভোট পড়েছে ওবামার পক্ষে। আর বিপক্ষে মোটে ৫৫টা।
ভোটাভুটির ফল যা-ই হোক, বিরোধীরা কিন্তু এমন সুযোগ ছাড়তে নারাজ। তাঁদের দাবি, মেক্সিকো-টেক্সাস সীমানায় এখন উদ্বাস্তু সমস্যা প্রবল। ওবামা টেক্সাসে গিয়েছেন, কিন্তু ওই এলাকায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তার বদলে চাঁদা তোলায় মন দিয়েছেন তিনি। বিরোধিদের দাবি, মার্কিন কংগ্রেসে ক্রমশ জনপ্রিয়তা কমছে ওবামার। ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে তাই ঘেরাটোপ ভেঙে জনতার মাঝে গিয়েই দাঁড়াতে হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy