মাচুপিচুর দেশে রেলপথ সম্প্রসারণে পরামর্শ দেবে ভারতীয় রেল।
পাহাড়ি-পথে লাইন বিছিয়ে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে নজর কাড়লেও দক্ষিণ আমেরিকার প্রান্তিক দেশ পেরুতে এখনও প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার রেলপথ নিছকই পড়ে রয়েছে। লাইন পাতা থাকলেও সে পথে ট্রেন চলাচল নেই। কারণ, সেই সব রেলপথের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বা ‘ইন্টার কানেক্টিভিটি’ গড়ে ওঠেনি। ফলে, প্রায় ৪৪০০ কিলোমিটার রেলপথ গড়েও যাত্রী পরিবাহী ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা সে দেশে তেমন অনায়াস নয়।
রেলপথে সেই যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজ করতেই এ বার সরেজমিনে ভারতে আসছেন পেরু রেল-এর উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ভারতীয় রেলের বিস্তার, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য, রেলের বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন ও কামরা তৈরির কারখানা, মেট্রো রেলের সুবিধা সবই খুঁটিয়ে দেখবেন ওই প্রতিনিধিরা। মন্ত্রী বলেন, “সব কিছু ঘুরে দেখে সে দেশের রেল কর্তারা যে ধরনের পরামর্শ চাইবেন, ভারতীয় রেল সাধ্যমতো তা দেওয়ার চেষ্টা করবে।”
দক্ষিণ আমেরিকার ওই দেশে সদ্য পাঁচ দিনের সফর সেরে ফিরেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী। রেল বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দেশের সম্পর্কের সেতু গড়তে ভারতীয় রেলকেই প্রাধান্য দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মন্ত্রী-সহ রেল কর্তাদের পেরু-সফর। রেল কর্তারা জানান, ভারতে রেলপথ চালু হওয়ার দু’বছর আগে ১৮৫১ সালে পেরুতে রেল চলাচল শুরু হয়। তবে তার বিস্তার তেমন ঘটেনি। অন্য দিকে, ভারতে প্রায় ৬৫,৩২৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। যার সিংহভাগ জুড়েই যাত্রিবাহী ট্রেনের চলাচল। অধীর বলেন, “এই তথ্যই অবাক করেছে পেরু-রেল কর্তৃপক্ষকে।” ভারতে এসে সরেজমিনে সেই যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যই চাক্ষুষ করতে চান সে দেশের রেল কর্তারা। পেরু ও ব্রাজিলের মধ্যে ২২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক রেলপথ গড়ার কাজও শুরুর মুখে। রেল বোডের্র এক কর্তা বলেন, “এ দেশের দীর্ঘ রেলপথ থেকে সে ব্যাপারেও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চান পেরু রেলের কর্তারা।”
পেরু-রেল সূত্রে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে রেল-যোগাযোগের ছবি দেখে তাঁরা ‘মুগ্ধ’। এ দেশের বিভিন্ন বন্দর-শহর এবং বিমানবন্দরগুলির সঙ্গেও রেল যোগাযোগ কেমন তা জানতেও আগ্রহী তাঁরা। এ দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করতে চান তাঁরা। অধীর বলেন, “রেল এবং বিমান প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে। এ মাসের মাঝামাঝি, পেরুর ওই প্রতিনিধি দল দিল্লি এলে ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে।”
১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পেরুর জাতীয় সরকারের হাতেই ছিল সে দেশের রেলমন্ত্রক। নাম ছিল ‘এমপ্রেসা ন্যাশিওনাল দে ফেরোক্যারিলস দেল পেরু’ (ইএনএএফইআর)। তবে, গত পনেরো বছর ধরে সে দেশে ট্রেন চলাচলের সিংহ ভাগই গিয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। ইএনএএফইআর অর্থাৎ সরকারি রেলমন্ত্রকের হাতে রয়েছে সীমিত কয়েকটি পথে যাত্রী পরিবহণ আর পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ব।
পেরুর রেল চলাচলের মূল নিয়ন্ত্রক এখন বেশ কয়েকটি মার্কিন এবং পশ্চিম ইওরোপীয় দেশের বেসরকারি রেল সংস্থা। তার মধ্যে ‘ইনকা রেল’ কিংবা ‘ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস গ্রুপ’-এর মতো রেল-সংস্থাও রয়েছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম রেলপথ রয়েছে পেরুতে। রেল সূত্রেই জানা গিয়েছে, কাসকো শহর থেকে মাচুপিচু, সেই রেলপথে নিত্য বিপুল পর্যটক নিয়ে ট্রেন চালায় ইনকা-রেল। পুনো থেকে তিতিকাকা হ্রদের কোল ঘেঁষে কাসকো কিংবা লিমা-হুয়াঙ্কো রেলপথে পর্যটক স্পেশ্যাল ট্রেন চালায় ফেরোকারিল সেন্ট্রাল নামে একটি সংস্থা।
তবে বেসরকারি রেল-সংস্থাগুলি পর্যটনের বাইরে, সাধারণ যাত্রী পরিবহণের প্রশ্নে তেমন আগ্রহী নয়। ইএনএএফইআর সূত্রে জানানো হয়েছে, যাত্রী পরিবহণ চালু করতে তাই রেলমন্ত্রককে ফের সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ভাবছে পেরু। তাই সম্পূর্ণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশের রেল পরিকাঠামো কী ভাবে চলছে তা খুঁটিয়ে দেখতেই এ দেশ সফর পেরুর রেল কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy