জঙ্গি হানায় জ্বলছে ভারতীয় দূতাবাস। হেরাটে শুক্রবার এপি-র তোলা ছবি।
কাশ্মীরে জঙ্গি-হানার পর এ বার আক্রমণ আফগানিস্তানের হেরাটে ভারতীয় দূতাবাসে (কনস্যুলেট)। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দু’-দু’বার সন্ত্রাসের শিকার হল ভারত।
আজ ভোররাতে হেরাটের ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করে ৪ সশস্ত্র জঙ্গি। টানা ন’ঘণ্টার ম্যারাথন সংঘর্ষের পর সেনার হাতে নিহত হয় চার জনই। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দূতাবাসের কর্মীরা সকলেই অক্ষত আছেন। ইরান সীমান্ত লাগোয়া আফগানিস্তানের হেরাট শহরটি তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। তাই এমন জায়গায় জঙ্গি হানা ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজর ঘোরাচ্ছে পাকিস্তানের দিকে।
তখন ভোর ৩টে বেজে ৩৫ মিনিট। রাতের অন্ধকার কাটেনি। হঠাৎই দূতাবাসের উল্টো দিকের বাড়িটি থেকে ছুটে আসতে থাকে একের পর এক গুলি। মেশিনগানের শব্দে তখন ভোরের নিস্তব্ধতা খান খান। সেই সঙ্গে গ্রেনেড হামলা। দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে দূতাবাসের একাংশ। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় আফগান সেনা-পুলিশ। দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষীরাও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেন। এর মধ্যেই রক্ষীদের নজর এড়িয়ে পাঁচিল টপকে দূতাবাস চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করে এক জঙ্গি। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় নিমেষেই। দূতাবাসের প্রহরী আইটিবিপি জওয়ানদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় জঙ্গির দেহ।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমর সিন্হা জানিয়েছেন, উঁচু পাঁচিলে ঘেরা দূতাবাস চত্বরে দু’টো বাড়ি। তারই একটিতে থাকেন হেরাটের ভারতীয় কনসাল-জেনারেল। আইটিবিপি জওয়ানদের হাতে নিহত জঙ্গি ওই চত্বরে ঢুকলে সরাসরি কনসাল-জেনারেলের বাড়িতেও হামলা
চালাতে পারত।
জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে রক্ষীরা উঠে পড়েন দূতাবাসের ছাদে। উল্টো দিকের বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে আফগান সেনা। সেখান থেকেই গুলির লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল দুই জঙ্গি। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় তারা। ৯ ঘণ্টার মুখোমুখি সংঘর্ষ থামে চতুর্থ জঙ্গিকে হত্যা
করার পরে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দূতাবাসের কর্মীরা সকলেই নিরাপদে আছেন। হেরাটের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে বেশ কিছু শুকনো খাবার পাওয়া গিয়েছে। তা থেকে গোয়েন্দাদের ধারণা, ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের পণবন্দি করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
এর আগে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে দু’বার জঙ্গিহানা ঘটেছিল। মোট ৭৫ জন নিহত হন সে বার। কিন্তু পরের পাঁচ বছর আর তেমন বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছে মার্কিন সেনা। তালিবান জমানার অবসান ঘটেছে আফগানিস্তানে। এ বছর সে দেশের মাটি থেকে পুরোপুরি ভাবে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কথা। আমেরিকা সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর থেকেই আফগানিস্তানে তালিবান হানার ঘটনা বেড়েছে। আজকের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন দায় স্বীকার করেনি।
নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দিল্লি আসার কথা আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের। আজ মোদীকে ফোন করে হেরাটের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন আফগান প্রেসিডেন্ট। জানা গিয়েছে, যে ভাবে দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছে আফগান সেনা, তার প্রশংসাই করেছেন মোদী। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। পরে ঘটনার নিন্দা করে টুইট করেছেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও আফগান সেনার দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।
এই ঘটনার পিছনে পাক সেনা ও গুপ্তচর সংস্থার হাত থাকতেই পারে বলে ধারণা ভারতীয় গোয়েন্দাদের। মোদী-জমানায় ভারত-পাক সম্পর্ক বিগড়ে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy