নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়ির উপরে বন্দুক হাতে কিশোররা। ছবি: রয়টার্স
গভীর রাতে সদর দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। বাড়ির কর্তা ইরাকের পুলিশ অফিসার। আধো ঘুম চোখে দরজা খুলতেই ‘খেল’ শুরু! হাত পিছমোরা করে বেঁধে, চোখে পটি পরিয়ে আগন্তুকেরা তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলল শোয়ার ঘরে। এক জন তখন পিছনে দাঁড়িয়ে আপন মনে ধর্মীয় পাঠ করে চলেছেন। ঘরে পৌঁছতেই আর এক জন বের করলেন বিশাল ছোরা। নিমেষে ধড় থেকে আলাদা করে দিল মুণ্ডুটা।
শেষ দৃশ্যটার ছবি তুলে রেখেছিল জঙ্গিরা। পরে সেটাই তারা পোস্ট করে দেয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। সঙ্গে টুইট “এটাই আমাদের ফুটবল, চামড়া দিয়ে তৈরি... বিশ্বকাপ!”
এটাই এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের ছবি। এই গৃহযুদ্ধ কার্যত দুই গোষ্ঠীর। সাদ্দাম হুসেনের একনায়কতন্ত্রের পতনের পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেই সংঘর্ষকে সামনে রেখে ইরাকে বাড়তে থাকে জঙ্গি কার্যকলাপ। ২০১১ সালে আমেরিকা পাকাপাকি ভাবে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পর এখন দারুণ ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গিরা। দেশের সাধারণ মানুষ, সেনা, পুলিশকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছে জেহাদি জঙ্গিগোষ্ঠী। প্রায় গোটা দেশটাই এখন তাদের কবলে। বিভিন্ন শহর দখল করতে করতে জঙ্গিরা রাজধানী বাগদাদের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, বাগদাদের শুধুমাত্র একটা রাস্তাতেই ১৭টি দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএস-এর দাবি, এখনও পর্যন্ত তারা ১৭০০ সেনাকে নিকেশ করেছে। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জ বলছে, সংখ্যাটা অনেক বেশি।
হত্যালীলার পাশে মাঝেমধ্যেই ইন্টারনেটে ভেসে উঠছে জঙ্গিদের পোস্ট করা নানা ভিডিও। এমনই এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, চলন্ত গাড়ি থেকে পথচারী, আশপাশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে সশস্ত্র জঙ্গিরা। আর এক দল সন্ত্রাসবাদীর হাতে ক্যামেরা। তারাই রেকর্ড করছে গোটা ঘটনাটা। ভিডিওতে পরের দৃশ্যটা ক্লোজ আপে ধরা। আক্রান্তদের গাড়ির ভিতরটা রক্তে ভাসছে। আসনে এলিয়ে পড়েছে নিথর দেহগুলো।
পরিস্থিতি দেখেশুনে গত কাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়ে দেন, ইরাককে বাঁচাতে ব্যর্থ সে দেশের সরকার। আমেরিকার পক্ষে কী কী করা সম্ভব, তা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। ওবামার পর আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাঁরা ইরাকে সেনা পাঠাবেন না। যদিও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০ জন ব্রিটিশ নাগরিক বন্দি রয়েছেন ইরাকের জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়। বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বলেছেন, “নাক গলানোর প্রশ্নই উঠছে না। তবে সন্ত্রাসবাদ রুখতে ইরাককে কী ভাবে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে অবশ্যই ভেবে দেখা হবে।” শোনা যাচ্ছে, মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে ব্রিটেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy