Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মার্কেস স্মৃতিতে শৈশবের গ্রাম যেন উপন্যাসের শহর

আরে! এ-ই তো সেই গ্রাম। কে বলে ‘মাকোন্দো’ স্রেফ জাদু-বাস্তব দুনিয়ার শহর? যাঁরা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউড’ পড়ে কলম্বিয়ার ছোট্ট গ্রাম আরাকাতাকা ঘুরে গিয়েছেন তাঁরাই জানেন, উপন্যাসের ‘মাকোন্দো’ শহরের সঙ্গে এই গ্রামের ঠিক কতটা মিল। তথ্য বলছে, এই আরাকাতাকাতেই ছোটবেলার বেশ কতগুলো বছর কাটিয়েছিলেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস।

মার্কেস স্মরণ। কলম্বিয়ার আরাকাতাকায়। ছবি: এএফপি

মার্কেস স্মরণ। কলম্বিয়ার আরাকাতাকায়। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
আরাকাতাকা (কলম্বিয়া) শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

আরে! এ-ই তো সেই গ্রাম। কে বলে ‘মাকোন্দো’ স্রেফ জাদু-বাস্তব দুনিয়ার শহর?

যাঁরা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউড’ পড়ে কলম্বিয়ার ছোট্ট গ্রাম আরাকাতাকা ঘুরে গিয়েছেন তাঁরাই জানেন, উপন্যাসের ‘মাকোন্দো’ শহরের সঙ্গে এই গ্রামের ঠিক কতটা মিল। তথ্য বলছে, এই আরাকাতাকাতেই ছোটবেলার বেশ কতগুলো বছর কাটিয়েছিলেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। ‘মাকোন্দো’-র জন্য ছবিটা হয়তো তখন থেকেই মনে মনে আঁকতে শুরু করেছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর পর থেকে তাই শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। নজর ঘোরালেই দেখা যাবে কোথাও গিটারের সুরে, কোথাও মোমবাতির আলোয়, কোথাও বা আবার রং-তুলিতে প্রিয় ‘গাবো’কে স্মরণ করছেন গ্রামবাসীরা।

লেখকের তুতো ভাই নিকোলাস রিকোর্দো আরিয়াসের স্মৃতিতে অবশ্য জাদু-বাস্তবের স্রষ্টার অন্য ছবি। বললেন, “ওঁর হুইস্কি আর ওঁর জোক্স এ সবই খালি মনে পড়ে।” চলে যাওয়ার পরও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে গ্রামে মাঝেমধ্যেই আসতেন গাব্রিয়েল। আর তখনই হুইস্কি আর জোক্সে মজিয়ে রাখতেন সকলকে। স্মৃতিচারণ করতে করতে মুচকি হাসেন নিকোলাস।

কিন্তু আরাকাতাকার বাকি বাসিন্দাদের মুখে হাসি নেই। স্থানীয় একটি ধর্মস্থানে শুক্রবার জড়ো হন তাঁরা। ফুল, মোমবাতি, গিটারের সুর আর লোকসঙ্গীতের মূর্ছনায় চলে গাব্রিয়েল স্মরণ। এক বাসিন্দা সারা পারোদির বয়ানে, “যখনই শুনলাম উনি আর নেই, তখনই এখানে ছুটে এসেছি।” হলুদ প্রজাপতির একটি বড় সুন্দর কাট-আউট বানিয়েছেন সারা। এখানেও ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউডের ছবি খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। উপন্যাসের বিশেষ কিছু সময়ে প্রজাপতির দল চলে আসে ‘মাকোন্দো’ শহরে। আরাকাতাকাতেও এ বার সেই ছবি।

এখানেই শেষ নয়। এ গ্রামেরই কিছু চরিত্রকে উপন্যাসে ব্যবহার করেছিলেন মার্কেস। তা ছাড়া, ছেলেবেলায় ঠাকুমার মুখে শোনা আরাকাতাকার লোকগাথা, কুসংস্কার, অলৌকিক কাহিনি সব কিছুই গেঁথে গিয়েছিল নোবেলজয়ীর মনে। উপন্যাসেও তাঁর জোরালো প্রতিফলন রয়েছে। তবে গ্রামবাসীদের একাংশের মতে মিল রয়েছে পরিণতিতেও। উপন্যাসে বুয়েন্দিয়া পরিবারের তৈরি মাকোন্দো শহরটিকে বিধ্বংসী হারিকেন নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। আরাকাতাকার ক্ষেত্রে খলনায়কের ভূমিকা নিয়েছে দুর্নীতি, দারিদ্র। গ্রামের আনাচকানাচ ঘুরে দেখলে নজরে আসবে খোলা রাস্তায় বসে বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে অনর্গল সরকারের অকর্মণ্যতার কথা বলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। “নিকাশি ব্যবস্থাটুকুও নেই”, অভিযোগ নিকোলাসের। গ্রামের এমন দুর্গতির জন্য অনেকে আবার দায়ী করছেন গাব্রিয়েলকেই। তাঁদের মতে, গ্রামের ছেলে হয়েও আরাকাতাকার জন্য কিছুই করেননি প্রবাদপ্রতিম লেখক। নিকোলাস অবশ্য দাদা গাবো-র পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর যুক্তি, গ্রামের এই অবস্থার জন্য দায়ী সরকার। এ-ও জানান, তাঁর কাছ থেকে মাঝেমধ্যেই গ্রামের খোঁজ নিতেন গাব্রিয়েল। “আমি বলতাম, এ গ্রামের কথা সবাই ভুলে গিয়েছে”, খেদ নিকোলাসের।

শুনে দুঃখ পেতেন গাব্রিয়েল। জাদু-বাস্তব শহরের ছবি আঁকতে যে গ্রাম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল, আজ তারই কি না এমন পরিণতি? সবটাই হয়তো সেই সাঙ্কেতিক বার্তার মতো। সাত পুরুষ ধরেও যার অর্থ বুঝতে পারেনি বুয়েন্দিয়া পরিবার। অথচ তাতেই লেখা ছিল মাকোন্দো-র উত্থান-পতন, ভাল-মন্দের পূর্বাভাস। সময় থাকতে তা কেউ বুঝতে পারেননি।

আরাকাতাকার পরিণতিও কি এ রকমই হবে? জবাব পেতে ভবিষ্যতের অপেক্ষাই করতে হবে। সঙ্কেতে ভবিষ্যৎ লেখার মানুষটিই আর নেই যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

marques memorial arakataka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE