খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কাকুপে দলের খেলোয়াড় ম্যাক্সি রবিন। ছবি: এপি।
ভিলা ২১-২৪। নেশাখোর, মাদক পাচারকারী আর কুখ্যাত অপরাধীদের ঠিকানা। আর্জেন্তিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের এই ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় দিনের বেলায় ঢুকতেও বুক কাঁপবে যে কোনও বহিরাগতেরই। তবে সারা বিশ্বকে এখন দারিদ্র আর অপরাধের সঙ্গে লড়াই করতে শেখাচ্ছে এই ভিলা ২১-২৪-এর ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা। হাতিয়ার বলতে মাত্র কয়েকটি সরঞ্জাম। ব্যাট, বল, গ্লাভস আর উইকেট।
মারাদোনার দেশের ছেলেরা ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেট নিয়ে মাতোয়ারা? বিশ্বাস করা শক্ত হলেও ঘটনাটা সত্যি। ক্রিকেটের সাহায্যেই ওই কুখ্যাত বস্তির দরিদ্র শিশুরা এখন জীবনের অন্য মানে খুঁজে পেয়েছে।
আসলে মাদক, অপরাধ আর হতাশা থেকে বস্তির শিশুদের মুক্ত করতে প্রথমে কাজে নেমেছিলেন ড্যানিয়েল জুয়ারেজ নামে এক প্রাক্তন ক্রিকেটার। আর্জেন্তিনার অন্যতম নামকরা একটি ক্লাবে নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনিই প্রথম ওই বস্তিতে শিশুদের ক্রিকেট খেলা শেখাতে শুরু করেন। সেই শুরু। তার আগে পর্যন্ত দেশের অভিজাত স্কুলের পড়ুয়ারাই শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেত। কিন্তু জুয়ারেজ সেই প্রথা ভাঙেন। বস্তির শিশুদের নিয়ে তৈরি করেন কাকুপে দল।
অভিজাত সেন্ট জর্জেস কলেজ স্কুলের ছাত্ররাও ওই শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। এখন আট থেকে পনেরো বছর বয়সি ৩০ জন ছেলেকে সপ্তাহে দু’দিন খেলা শেখান জুয়ারেজ। সম্প্রতি আইসিসি-ও ‘বেস্ট স্পিরিট অব দ্য ক্রিকেট ইনিশিয়েটিভ’ সম্মানে ভূষিত করেছে কাকুপেকে। আইসিসি তাদের এক বার্তায় বলেছে, “কাকুপের সদস্যরা গোটা বিশ্বের পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের জন্য উদাহরণ।”
ভারতীয় উপমহাদেশ বা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো ততটা না হলেও আস্তে আস্তে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মারাদোনার দেশে। তবে জুয়ারেজের আক্ষেপ, এখনও বিত্তশালীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ২২ গজের এই খেলা। আর্জেন্তিনার গ্রাম্য এলাকায় জনপ্রিয় এক সন্ন্যাসী কাকুপের নামে নিজের ক্রিকেট দলের নাম রেখেছেন জুয়ারেজ। কাকুপে কমিউনিটি সেন্টারেরও অন্যতম আকর্ষণ এই খেলা।
খেলাধুলোর মাধ্যমে গরিব ছেলে-মেয়েদের ঠিক পথে চালিত করার রাস্তা দেখিয়ে গিয়েছেন বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসও। এই বুয়েনস আইরেস শহরেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। পোপের এক বন্ধু রেভারেন্ড পেপে ডি পাওলা জানালেন, জুয়ারেজের এই প্রচেষ্টায় তিনিও ভীষণ ভাবে যুক্ত। তিনি আরও জানালেন, কাকুপে দলের তিন সদস্য এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
১৪ বছরের অ্যালেক্সিস জায়োনা ছোট বয়সেই কাকুপে দলে খেলতে শুরু করেছিল। তখন থেকে ক্রিকেটকে ভালবাসতে শেখা। আর্জেন্তিনার অনুর্ধ্ব-১৩ দলের হয়ে খেলতে পেরু গিয়েছিল সে। ক্রিকেট নিয়ে তার উপলব্ধি, “জীবনেও তুমি এটা ব্যবহার করতে পারো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy