কলকাতার সঙ্গে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট বাবাকে জড়িয়ে।
ছোটবেলা থেকে এ শহরটাকে পাল্টাতে দেখেছি। শহর তো পাল্টাবেই। পরিবর্তনই নিয়ম। শহর পাল্টে নতুন হয়েছে, ডিজিটাল হয়েছে। ওয়ান জি থেকে থ্রি জি থেকে এখন ফোর জি। নেক্সট শুনছি ফাইভ জি হবে। সব মিলিয়েকলকাতা কলকাতার মতোই মজে আছে।
কলকাতায় হোলিও হয়, পার্টিও হয়, মজাও হয়। কিন্তু আমার হোলি মানে বাবা-মায়ের পায়ে আবীর দেওয়া। সেই সংস্কৃতিটা এখনও রয়েছে আমার মধ্যে। যদিও বাবা আর আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট আমার বাবাকে জড়িয়ে।যখন ছোট ছিলাম সল্টলেকের এফডি ব্লকে টাইটানিক জাহাজ নিয়ে একটা থিম পুজো হয়েছিল। সেই পুজো দেখতে এত জনস্রোত যে বাবা আমাকে তাঁর কাঁধে তুলে ঠাকুর দেখিয়েছিলেন।যেন জনস্রোতের মাথায় ভাসতে ভাসতে চলেছিলাম আমি।এই সময়টা আর কোনওদিন আসবে না। এরকম কত ছোট ছোট স্মৃতি কলকাতা শহরটার সঙ্গে জড়িয়ে।
স্কুল লাইফটাও কোনওদিন ফিরে আসবে না। স্কুল লাইফে টিফিন বেলায় স্কুলের ভেতর থেকে হাত বের করে বলছি, ‘কাকু, আমাকে ওই আচারটা দিন বা ফুচকাটা দিন বা ওই খাবারটা দিন’। তখন মূল্য যথেষ্ট কম ছিল। এক টাকা বা দু টাকা বা তিন টাকা। এই পরিমাণ জিনিসেরই এখন অনেকটা মুল্য।
‘‘মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে পুরনো বই কিনি’’
দুপুর বেলা আসত ‘দাঁতের লড়াই’। বিশাল বড় একটা ডান্ডার মাথায় আটকানো থাকত এক দলা মাখা আটার মতো জিনিস।ওটাই আমাদের ক্যান্ডি। কাঠিতে জড়ানো ওই ক্যান্ডি চিবোনো যেত না। দাঁতে লেগে যেত। খুব মিষ্টি। এখন দেখতেই পাই না। ‘দাঁতের লড়াই, দাঁতের লড়াই’ বলে চিৎকার করতে করতে কাকুগুলো বিক্রি করতে আসতো। ক্যান্ডিগুলো গ্লু-এর মতো। কাঠির মাথায় জড়ানো।এটা খুব মিস করি। তখনকার সময় ওটাই ছিল আমাদের ক্যান্ডি। এখন সুন্দর করে র্যাপ করে শপিং মলগুলোতে ক্যান্ডি বিক্রি হয়।
সুপুরি গাছের পাতা শুকনো হয়ে পড়ে গেলে ওটার ওপর উঠে বসতাম। কোনও খেলার বন্ধু সেই পাতার উল্টোদিক ধরে টেনে নিয়ে যেত।আমার ছোটবেলায় নীহার নারকেল তেলের টিনের কৌটো পাওয়া যেত। সেগুলো দিয়ে আমার ঠাম্মা একতারা বানিয়ে দিত। নারকেলের শুকনো মালা দিয়ে পাল্লা-বাটখারা বানিয়ে খেলতাম। কাগজের নৌকা, এরোপ্লেন বানাতাম। মেলায় পাওয়া যেত এক ধরনের নৌকা। তেল আর সলতে দিয়ে জ্বালিয়ে দিলে নৌকাটা জলের ওপর গোল হয়ে ঘুরতো। সেগুলো কিনে রাখতাম। বৃষ্টি হলে আমাদের বাড়ির সামনে জল জমে যেত। তখন ওই নৌকাগুলো জ্বালিয়ে ভাসাতাম। ভাসতে ভাসতে কোথায় চলে যেত। জলে নেমে নিয়ে আসতাম। ছোট ছোট ছিপ বানিয়ে জলের ওপর ফেলে বসে থাকতাম। কোনদিন যদিও মাছ ওঠেনি। যে কলকাতাকে আমি দেখে এসেছি, প্রচণ্ড হ্যাপি একটা কলকাতা।এসবই খুব মিস করি।কলকাতা আমার কাছে অদ্ভুত একটা নস্টালজিয়া হয়ে থাকবে।
কলকাতার রসগোল্লা আমার খুব প্রিয়। এটা নিয়ে গানও আছে। কলকাতার ফুচকা প্রচণ্ড পপুলার। আমি প্রচণ্ড ভালবাসি। আমার স্কুল মহেশতলা বয়েজের পাশে ফুচকার দোকান আছে।আমার মাধ্যমিক নেতাজি সুভাষ বিদ্যালয় থেকে। এই দুটো স্কুলেই ফুচকা বরাবর হিট ছিল। আর ছিল টিফিন হলেই ঝালমুড়ি। নর্থ কলকাতার মাটির ভাঁড়ে চা, সন্ধ্যেবেলা সিঙ্গাড়া। ওদিকে কফি হাউসও আছে। মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে পুরনো বই কিনি।
আমার কাজ দর্শকদের এন্টারটেন করা। সেই স্কিলটাকেই গ্রুম করি। আফটার প্যাকআপ আম জনতা যেভাবে লাইফ লিড করে আমিও সেইভাবে লাইফ লিড করি। এটাই হলাম আমি। আমার গার্লফ্রেন্ডও কলকাতার। কলকাতাতেই প্রেম, কলকাতাতেই থাকি আমরা, তার সঙ্গে কলকাতাতেই বিয়ে হবে আশা করি। কলকাতার রাস্তায় ঘুরতে প্রচণ্ড পছন্দ করি। কিন্তু অনেস্টলি বলছি, সাত-আট বছর আগে যে লাইফ লিড করতাম সেটা এখন আর নেই। নিজের ইচ্ছে মতো রাস্তায় ঘোরার দিন শেষ। রাস্তায় আমার ধারাবাহিক ‘ত্রিনয়নী’-র দর্শক এসে কথা বললে নিশ্চয় ভাল লাগে। কিন্তু ব্যক্তিগত স্পেসটা হারিয়ে যায়। সেজন্য আর আগের মতো ঘোরা হয় না।
‘‘নর্থ কলকাতার মাটির ভাঁড়ে চা, সন্ধ্যেবেলা সিঙ্গাড়া।’’
মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় বন্ধুর বাইকে করে বেরিয়ে সারা রাত ঠাকুর দেখতাম। দক্ষিণ কলকাতা শেষ করে উত্তর কলকাতা চলে যেতাম। বন্ধুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত যে কে কত তাড়াতাড়ি উত্তর ও দক্ষিণের ঠাকুর দেখা শেষ করতে পারে। তাড়াতাড়ি ঠাকুর দেখতে হবে আর ছবি তুলে রাখতে হবে। ভিজিএ ক্যামেরা ছিল তখন। সোনি ওয়াকম্যান আর নোকিয়ার বড় বড় হ্যান্ডসেট ছিল তখন। ছোট ছোট ক্যামেরা। বেসিক্যালি আমার ছিল না, বাবার থেকে ধার নিয়ে গিয়ে তুলতাম।
প্রথম রেস্তরাঁতে গিয়ে অবাক হয়ে গেছিলাম। মনে হয়েছিল বিশাল বড় ব্যাপার স্যাপার। আজ সেই রকম জায়গাগুলো আমার কাছে বড্ড ছোট লাগে। শপিং মল বা বড় বড় বিল্ডিং-এ ঢুকে মনে হয় আকাশটা দেখতে পাচ্ছি না। এগুলো খারাপ বলছি না। কিন্তু ছোটবেলার অন্যরকম কলকাতার নস্টালজিয়াটা সামনে এসে দাঁড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy