বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক নদী শুকিয়ে মরে গেছে গত ৪৫ বছরে। ছিল ১৩০০-র মতো। শুকিয়ে এখন তার সংখ্যা নেমে এসেছে ৭০০তে। গভীর উদ্বেগজনক এই তথ্য উঠে এল বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের রিপোর্টে। গতকাল, শুক্রবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে নদী বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে ‘নদ-নদী রক্ষায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন হয়। নদীনালার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জাগানো প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় সেখানেই।
প্রকৌশলী জাবের আহম্মেদ ও মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন-এর যৌথভাবে উপস্থাপিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর সাড়ে চার দশকে ১৩০০ নদ-নদী থেকে এখন মাত্র ৭০০তে নেমে এসেছে তো বটেই, বেঁচে থাকা নদ-নদীর মধ্যেও প্রবাহমান নদীর সংখ্যা অর্ধেক।
নদ-নদী সংকটে আসন্ন পরিস্থিত মোকাবিলা করতে কিছু জরুরি পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে- ঢাকার আশপাশের এলাকার মাত্রাতিরিক্ত দূষণ রোধে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এগুলি বাস্তবায়ন করা জরুরি। নদী রক্ষায় সরকারের কাছে মোট ১৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: ৮০ ভাগ রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার, জানাল কফি আনান কমিশন
স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে আছে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, কৃত্রিম লেক বা সমুদ্র সৈকতে ইঞ্জিন চালিত নৌকার পোড়া মবিল, তেল, গৃহবর্জ্য ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন-সহ অপচনশীল বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া। এ জন্য জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়।
নদীর সীমানা রক্ষায় স্থায়ী সার্ভে কমিটি গঠন করে তিন মাস পর পর নদীর পাড় সরেজমিনে পরিদর্শন করে নৌ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ দখল থেকে নদীকে রক্ষা করতে, দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
মধ্য মেয়াদী পাঁচটি সুপারিশ করেছে নদী বাঁচাও আন্দোলন। সুপেয় জলের আধার সৃষ্টির জন্য ভরাট ও অর্ধ ভরাট হয়ে থাকা মজা পুকুর এবং দীঘিগুলোকে খনন ও পুনঃখনন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা। মাঝারি ও ছোট নদী-নালা, খাল-বিলগুলোকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা।বন্যা কবলিত এলাকায় উচ্চ ফলনশীল ও দ্রুতবর্ধনশীল ফসলের ব্যবস্থা করা। নদীবান্ধব অর্থনীতি ও যোগাযোগে ব্যবস্থা চালুর জন্য নদী বন্দরগুলো পুর্নগঠন ও সংস্কার করা এবং পরিকল্পিতভাবে নদী-নালা ও খাল-বিলের উপর ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা।
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে শিল্পবর্জ্যের দূষণ থেকে নদী রক্ষায় শিল্পকারখানায় ২৪ ঘণ্টা ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান) চালু রাখা; বিভিন্ন হাওড়-বাওড়-বিল ও পতিত নদী-নালাগুলোর উৎসমুখের বাঁধাগুলো সরিয়ে নিম্নভূমিতে জলের প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মহঃ আতাহারুল ইসলাম, প্রকৌশলী মহঃ ইনামুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজা খাতুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy