Advertisement
E-Paper

জামদানির পর ইলিশের মালিকানা সত্ত্ব পেতে উদ্যোগী হল বাংলাদেশ

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ও ঐতিহ্য। ইলিশের বিচরণ বাংলাতেই। আর পদ্মার ইলিশের খ্যাতি তো বিশ্ব জুড়ে। এ কারণে জামদানির পর ইলিশের স্বত্ব বা মালিকানা সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ১৭:৪৪
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ও ঐতিহ্য। ইলিশের বিচরণ বাংলাতেই। আর পদ্মার ইলিশের খ্যাতি তো বিশ্ব জুড়ে। এ কারণে জামদানির পর ইলিশের স্বত্ব বা মালিকানা সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের মৎস্য অধিদফতর ইলিশকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক স্বত্ববিষয়ক সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে ইলিশের নিবন্ধন করা হচ্ছে। এ জন্য আজ রবিবার মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জিআই নিবন্ধনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

রবিবার দুপুরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিনিয়র শিল্প সচিব মহঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার কাছে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ এই আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
আবেদন গ্রহণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বর্তমান সরকার জিআই পণ্য সহ মেধাসম্পদের মালিকানা সুরক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। জিআই পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ও নিবন্ধনের লক্ষ্যে বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সহায়তায় এরই মধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য জিআই পণ্যকেও নিবন্ধন দেওয়া হবে।
সচিব জানান, এ নিবন্ধন হলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইলিশকে নিজস্ব পণ্য বলে দাবি করতে পারবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে কোনও দেশ আপত্তি করলে তখন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মৎস্য অধিদফরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, “ইলিশ মাছ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার সহ কয়েকটি দেশের উপকূলে পাওয়া যায়। কিন্তু পদ্মা ও মেঘনার রুপোলি ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ অন্য কোনও দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকী ভারতীয় অংশ গঙ্গায় যে ইলিশ পাওয়া যায়, তা স্বাদে-গন্ধে পদ্মার ইলিশের ধারেকাছে নেই। ইলিশের সঙ্গে বাংলাদেশের নামটিই আগে আসে। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে এর নিবন্ধন হলে বিশ্বব্যাপী এর ব্র্যান্ডিং হবে। রফতানি পণ্য হিসেবে ইলিশের কদর বাড়বে। দামও পাওয়া যাবে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইলিশ পাবে আলাদা মর্যাদা। যেমন তাইল্যান্ডের জেসমিন রাইস কিংবা পর্তুগালের অলিভ অয়েলের এ রকম আলাদা মর্যাদা রয়েছে”।
এর আগে চলতি বছরই বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে জামদানিকে নিবন্ধন দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এর পরপরই ইলিশকে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হল। এর ফলে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস বা ভৌগোলিক নির্দেশক হল একটি প্রতীক, যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যের বিশেষ গুণাগুণ প্রচার করে থাকে। বিশ্ব বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই জিআই পণ্যের মালিকানা পাওয়া।
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য বলতে বোঝায়, যে পণ্য ঐতিহ্যগতভাবে একটি এলাকার এবং যার উৎপত্তির সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে ওই এলাকার নাম জড়িয়ে আছে। অঞ্চলের নাম ঘিরে ওই পণ্যের বিশেষ খ্যাতি থাকে।
জিআই পণ্য সম্পর্কে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের পরীক্ষক বেল্লাল হোসেন বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন হলে ওই পণ্যের ওপর বাংলাদেশের একক মালিকানা তৈরি হবে; বিশ্বে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। বিশ্বব্যাপী জিআই পণ্যের চাহিদা যেমন ভাল, তেমনই এর জন্য বাড়তি দাম দিতেও রাজি থাকেন ক্রেতারা। এতে পণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি মিলবে। ইউরোপের বাজারে একই ধরনের পণ্যের মধ্যে জিআই পণ্য বাড়তি দামে কেনাবেচা হয়। তা ছাড়া জিআই পণ্যকে ঘিরে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগও আসবে। তিনি বলেন, এক পণ্য দুই দেশের হলেও তার ধরন ও গুণাগুণ দুই রকম। ভারত ও মায়ানমারের ইলিশ থাকলেও বাংলাদেশের ইলিশ আলাদা। জিআই নিবন্ধন হলে ব্র্যান্ডিং হবে বাংলাদেশের ইলিশের।
বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা থেকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য নিবন্ধন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সংস্থা পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরকে। ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস চুক্তির আওতায় বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য দেশগুলো তাদের দেশের পণ্য নিবন্ধন করতে পারে। ডব্লিওটিওর সদস্য প্রতিটি দেশের নিজেদের জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্য সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে। চুক্তির আওতায় ভারত এরই মধ্যে চার শতাধিক পণ্যের স্বত্ব নিজেদের করে নিয়েছে।
জানা যায়, জিআই নিবন্ধন পেতে হলে ওই পণ্য যে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমানা বা ভূখণ্ডে উদ্ভব বা তৈরি হয়েছে, তার ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে হয়। জিআই নিবন্ধন দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ওই প্রমাণপত্র সহ একটি প্রবন্ধ তাদের নিজস্ব জার্নালে প্রকাশ করতে হয়। জার্নালে প্রকাশের দুই মাসের মাথায় অন্য কোনও দেশের পক্ষ থেকে ওই তথ্যের ব্যাপারে যদি আপত্তি তোলা না হয় বা অন্য কোনও সংস্থা ওই পণ্যের নিবন্ধনের দাবি না করে, তা হলে যে দেশ প্রবন্ধ প্রকাশ করে জিআই নিবন্ধন চেয়েছে, সেই দেশের নামে পণ্যটি নিবন্ধিত হয়ে থাকে।
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) এক গবেষণা তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রকৃতি, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত- এ তিন শ্রেণির ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য রয়েছে। প্রকৃতি ও ঐতিহাসিকগত শ্রেণিতে আছে ইলিশ মাছ, জামদানি, কুমিল্লার রসমালাই, ফজলি আম ও পাট অন্যান্য পণ্য। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে নিম, কালোজিরে, শুঁটকি। আর প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে মসলিন, মিরপুরের কাতান, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, কুমিল্লার খাদি কাপড় ও মণিপুরি শাল। এসব পণ্য নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের ঐতিহ্য ও সুনাম বহন করে চলেছে।

আরও খবর...

সন্ত্রাসের আঁতুরঘর বলে চিহ্নিত ঢাকার দেড় ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

Hilsa Jamdani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy