Advertisement
E-Paper

ঢাকা সফরে আসছেন চিনা প্রেসিডেন্ট, মহা উদ্বেগে পাকিস্তান

ঘুড়িতে চ্যাম্পিয়ান চিন। কেন হবে না! তিন হাজার বছর আগে আকাশে প্রথম ঘুড়ি ওড়ায় যে তারাই। নিছক খেলা নয়, রণকৌশলের দাপটে ঘুড়ি ওড়ায়। অন্য দেশের আকাশে চিনের ঘুড়ি মানে বিপদ সঙ্কেত। ভিতুরা পালাত। সাহস থাকলে রুখে দাঁড়াত।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ১৬:২৭
এই করমর্দনেই অশনি সঙ্কেত দেখছে ইসলামাবাদ। —ফাইল চিত্র।

এই করমর্দনেই অশনি সঙ্কেত দেখছে ইসলামাবাদ। —ফাইল চিত্র।

ঘুড়িতে চ্যাম্পিয়ান চিন। কেন হবে না! তিন হাজার বছর আগে আকাশে প্রথম ঘুড়ি ওড়ায় যে তারাই। নিছক খেলা নয়, রণকৌশলের দাপটে ঘুড়ি ওড়ায়। অন্য দেশের আকাশে চিনের ঘুড়ি মানে বিপদ সঙ্কেত। ভিতুরা পালাত। সাহস থাকলে রুখে দাঁড়াত। আগ্রাসনই চিনের নেশা। স্বভাবটা বদলায়নি। তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি মা ইং জেও জানেন না সত্যিই দেশটা তাঁদের থাকবে কিনা। চিনের সঙ্গে মিলবে, না স্বাতন্ত্র নিয়ে বাঁচবে। চিন তাইওয়ানকে নিজেদের ২৩তম প্রদেশ বলে দাবি করে। ১৯৫৩তে তিব্বত দখল করে চিন। বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা এক লাখ তিব্বতি নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। ১৯৯৭-এর ১ জুলাই ১৫৬ বছরের শাসন শেষ করে ব্রিটেন হংকংকে চিনের হাতে তুলে দেয়। ১৯৯৯-এর ২০ ডিসেম্বর পর্তুগিজদের হাত থেকে ম্যাকাও কেড়ে নেয় চিন। ১৯৬২তে চিনের নেতা মাও জে দং দিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে আলিঙ্গন করে বলেন, ‘হিন্দি চিনি ভাই ভাই।’ দেশে ফিরেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরেও ভারতের অনেকটা অঞ্চল দখলীকৃত ছাড়েনি চিন। উল্টে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টন আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দুই রাষ্ট্র ভারত-চিন। দুনিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে। চিন সেটা জানে বলেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে চাপে রাখতে মুঠোয় ভরেছে পাকিস্তানকে। কাশ্মীরের দিকে তীক্ষ্ণ নজর। আপাতত কাশ্মীরের ৬০ ভাগ ভারতের, পাকিস্তানের দিকে ৪০ ভাগ। তার থেকে তারা অন্যায়ভাবে চিনকে দিয়েছে ১০ ভাগ। সেই টুকরোটা আকসাই চিন। ৭৮,১১৪ বর্গ কিলোমিটার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৫,১৮০ বর্গ কিলোমিটার পাকিস্তান দিয়েছে চিনকে। কাশ্মীরে চিন অধিকৃত এলাকা ৩৭,৫৫৫ বর্গ কিলোমিটার। স্ট্র্যাটেজিক কারণেই কাশ্মীরকে চিন ব্যবহার করতে চায়। চিন জলের মতো টাকা ঢালছে পাকিস্তানে। যে সব প্রকল্পের নামে পাকিস্তান টাকা নিচ্ছে তার অধিকাংশই অচল। পাওয়া টাকার একটা বড় অংশ যাচ্ছে সন্ত্রাসী শক্তিকে উজ্জীবিত রাখতে। তাদের নিশানা যে বাংলাদেশ আর ভারত, চিন জানে। জেনেও চুপ। কাশ্মীরের উরিতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, জৈশ-ই-মহম্মদের হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পরও চিন নীরব। রাষ্ট্রপুঞ্জের সব দেশ পাকিস্তানকে দুষছে। চিন কিছুই বলছে না।

এই ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়াতে ক্ষমতার নতুন সমীকরণ হয়েছে। নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন বাতিল। বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ভারতের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে ইসলামাবাদের সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, সার্ক শীর্ষ বৈঠক স্থগিত। চাপে পাকিস্তান। আঘাতের প্রত্যাঘাতে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানে ঢুকে ২৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। নিহত ৩৮ জঙ্গি। প্রতি আক্রমণে পাকিস্তান থমকেছে। চিনের তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল আর গাজিপুরে জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাব হানা, হত ৪, উদ্ধার অস্ত্রশস্ত্র

আগুন কত দূর ছড়াবে স্পষ্ট নয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ১৪ অক্টোবর দু’দিনের বাংলাদেশ সফর চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর। ২০১৩তে তিনি প্রেসিডেন্ট হন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন লি কেকিয়াং। তাঁরা অর্থনৈতিক সংস্কারে মন দেন। বাজার অর্থনীতি মেনে সমাজতান্ত্রিক বাঁধন শিথিল করেন। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট দেং জিয়াওপিং যে পরিবর্তনের কাজটা শুরু করেছিলেন সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যান জিনপিং। বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব বড় প্রকল্পের দায়িত্বে চিন। পদ্মা সেতু থেকে ঢাকা-সিলেট চার লেনের মহাসড়ক তারাই করবে। ২৫টি প্রকল্পের দায় কাঁধে নিয়ে নির্বিকার। অর্থায়নের তাগিদ নেই। তাগাদা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। চিনের হাতে আটকে থাকায় প্রকল্পগুলো অন্য কোনও দেশও পাচ্ছে না। চিনের দেওয়ার কথা ২ হাজার ৯ কোটি ডলার। দিচ্ছে না। অর্থ ছাড়া উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব। জিনপিংয়ের কাছে অর্থের দাবি পেশ করা হবে। সুরাহা না হলে বাংলাদেশ ছাড়বে না। রাজনীতি, কূটনীতির চেয়ে বাংলাদেশের কাছে এখন উন্নয়নই বড়। প্রকল্প ঝুলিয়ে রেখে চিন যদি বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দাবি করে, হবে না। পাকিস্তানের মতো প্রকল্প নিয়ে ছেলেখেলা চলে না বাংলাদেশে। অগ্রসর হওয়ার রাস্তায় কোনও বাধাই মানেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে এই সব টানাপড়েনের মধ্যেই জিনপিংয়ের ঢাকা সফর নিয়ে কিন্তু ঘোর চিন্তায় পাকিস্তান। যে চিনকে দাদা বলে নিজের অপকর্ম চালিয়ে যেতে চাইছে পাকিস্তান, সেই চিন কিনা শত্রু বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে! ঢাকার সঙ্গে বেজিঙের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি মানেই তাদের ক্ষতি, এটা হাড়ে হাড়ে বোঝে ইসলামাবাদ। তাই উদ্বেগ তো হবেই।

China Bangladesh Sino-Bangladesh Relationship Pakistan Concerned
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy