Advertisement
E-Paper

বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গণতন্ত্রই জিতল

আইনের ফাঁসে আটকে রইল ৪৭০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। একসঙ্গে সব ভোট করতে পারলে ভাল হত। তা আর হল কই। আইন বড় বালাই। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করেও শেষ মুহুর্তে হাল ছেড়েছে। তাদের মনোভাব ছিল, যে কটা পড়ে থাকে থাক। বাকিগুলো তো হয়ে যাক। বাংলাদেশের ৪ হাজার ৫৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদ বা ইউপি-র মধ্যে ভোট সম্পন্ন ৪ হাজার ৮৫টিতে।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ১৮:৪৬
চলছে ভোটগ্রহণ। ছবি সৌজন্য বাংলা ট্রিবিউন।

চলছে ভোটগ্রহণ। ছবি সৌজন্য বাংলা ট্রিবিউন।

আইনের ফাঁসে আটকে রইল ৪৭০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। একসঙ্গে সব ভোট করতে পারলে ভাল হত। তা আর হল কই। আইন বড় বালাই। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করেও শেষ মুহুর্তে হাল ছেড়েছে। তাদের মনোভাব ছিল, যে কটা পড়ে থাকে থাক। বাকিগুলো তো হয়ে যাক। বাংলাদেশের ৪ হাজার ৫৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদ বা ইউপি-র মধ্যে ভোট সম্পন্ন ৪ হাজার ৮৫টিতে। ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন ছ’ধাপে ভোট শেষ। আগে ইউপি ভোট হত এক দিনে। রণক্ষেত্র হয়ে উঠত গোটা দেশ। ভোট থামলে তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস। এ বার ভোট ছ’দিনে হওয়াতে বিশৃঙ্খলা বা হিংসার মাত্রা অনেক কম। তবুও সংঘর্ষে নিহত ১২১। মৃতের সংখ্যা দেখে বিশেষজ্ঞরা কপাল চাপড়ে বলতে শুরু করেছেন, সব শেষ। দেশে গণতন্ত্র বলে কিছু রইল না। পশ্চিমবঙ্গেও এমনটা হয়। গণতন্ত্র হারানোর আশঙ্কায় ঝড় ওঠে। আবার থেমেও যায়। পশ্চিমবঙ্গে এ বার যেমন বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দু’দিন মাথার ওপর শঙ্কার মেঘ ঘুরপাক খেলেও, পরের দিকে সেটা কেটে রোদ ওঠে। ভোট হয় স্বাভাবিক নিয়মেই। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন সাত দিন ধরে চলেছে। বাংলাদেশের ভোটেও শুরুতে তুলনামূলক বেশি গোলমাল থাকলেও আস্তে আস্তে সেটা কমেছে। হ্রাস পেয়েছে হতাহতের সংখ্যা। নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা কর্মমুখী। মানুষ তাঁদের জিতিয়েছে। এবার কাজের কৈফিয়ত চাইবে।

সব জায়গায় আর্থ-সামাজিক ছবিটা এক নয়। পশ্চিমবঙ্গে আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে সাত দিনে ভোট করতে হয়। কেরল, তামিলনাড়ুতে ভোট হয় একদিনে। পোলিং বুথে পুলিশের দরকার পড়ে না। হোমগার্ড দিলেই চলে যায়। কেরল, তামিলনাড়ুতে কর্মসংস্থানের অভাব নেই। তামিলনাড়ু উৎপাদনশীলতায় শীর্ষে। নীতিগত সমর্থন বা প্রত্যাখ্যানের খাতিরে মানুষ ভোট দেয়। পশ্চিমবঙ্গে তা নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা হচ্ছে রাজনীতি। নির্দিষ্ট দলের ওপর বাজি ধরে ভোটের ময়দানে নামে। সমর্থিত দল হারলে সর্বনাশ। ক্ষমতা তো যাবেই, উল্টে খাওয়া পরা জুটবে কিনা সন্দেহ। অনিশ্চয়তা, অসহায়তা থেকে বেপরোয়া বাঁচার লড়াই। দরকারে অন্যকে খুন করে জীবনের সন্ধান। বাংলাদেশেও অনেকটা একই ছবি। তার মানে কী গণতন্ত্র নেই? অবশ্যই আছে। নির্বাচন নয়ছয় করা লোকের সংখ্যা কত। এক শতাংশও নয়। বড়জোড় হাজারে এক। তাদের দৌরাত্মে গণতন্ত্র উঠে যাবে আর কোটি কোটি মানুষ বসে বসে দেখবে, তাই কী হয়।

বাংলাদেশে ইউপি সবে রাজনৈতিক রং পাচ্ছে। মাথাটা রাঙানো হয়েছে, দেহটা নয়। শুধু চেয়ারম্যান পদটা রাজনৈতিক। প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ আর সংরক্ষিত পদে প্রার্থীরা নির্দলীয়। পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সেটা হয় না। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে ওপর থেকে নীচ, সব সদস্যরাই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। প্রত্যেকের লড়াই দলের প্রতীক চিহ্নে। এখানে একার কোনও ব্যাপার নেই। একজন প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসে ছড়ি ঘোরাবে, সেটা হবে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি মাত্রেই সমান অধিকার। যে ওপরে থাকবে, তার কাজ নেতৃত্ব দেওয়া। হুকুম চালানো নয়। অন্যথায় সব অচল। রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে পারে না। গণতন্ত্র ব্যাহত হলে দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোই। বাংলাদেশে ইউপি নির্বাচনে গণতন্ত্রই জিতেছে। উটকো ঝামেলা রাস্তা রুখতে চাইলেও, মানুষের আবেগে সব ঝঞ্ঝাট ঝরা পাতার মতো উড়েছে।

আরও পড়ুন:
নিন্দুকেরা নিন্দে করুন, বাংলাদেশের জাম্বো বাজেট উন্নয়নের সাহসী ডানা

Bangladesh Election Amit Basu Seikh Hasina
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy