Advertisement
E-Paper

বাংলা ভাষার উৎসব ঢাকার একুশে বই মেলায়

চললেই চলা, বললেই বলা, মিললেই মেলা। চলা, বলার মতো মেলাতেও পার্থক্য। মেলার বিষয় এক হলেও ভাবনায় অমিল। ঢাকা, কলকাতার বইমেলায় সেটা স্পষ্ট। ঢাকার বইমেলাটা কেবল বই কেনাবেচার জায়গা নয়। ভাষা শহিদদের স্মরণ করার পবিত্র স্থান। মেলার নামও তাই 'অমর একুশে গ্রন্থ মেলা'।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৬:১১
ছবি- ফাইল চিত্র

ছবি- ফাইল চিত্র

চললেই চলা, বললেই বলা, মিললেই মেলা। চলা, বলার মতো মেলাতেও পার্থক্য। মেলার বিষয় এক হলেও ভাবনায় অমিল। ঢাকা, কলকাতার বইমেলায় সেটা স্পষ্ট। ঢাকার বইমেলাটা কেবল বই কেনাবেচার জায়গা নয়। ভাষা শহিদদের স্মরণ করার পবিত্র স্থান। মেলার নামও তাই 'অমর একুশে গ্রন্থ মেলা'। ১৯৫২-তে এদিনের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। যাঁদের নিয়ে অমর স্মৃতি, 'অমর ভাইয়ের' রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।' গানটি লিখেছিলেন আব্দুল গফফর চৌধুরী। লন্ডন প্রবাসী তিনি। ঢাকার কাগজে নিয়মিত কলাম লেখেন। তাঁকে দেখা না গেলেও তাঁর লেখা পড়া যায়। তিনি যদি গানটি ছাড়া আর কিছু নাও লিখতেন, বাঙালি তাঁকে ভুলত না। জাতির ভাষা চেতনাকে তিনি জাগিয়েছিলেন একটি গানে। পাকিস্তান শাসনে মাতৃভাষার অধিকার হারিয়ে মরমে মরেছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি। সেই নিপীড়ন তারা মানেনি। ধীরে ধীরে ভাষাকে ঘিরেই স্বাধীনতা আন্দোলন। বাঙালির জয়ে একাত্তরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভাষাটা রক্ত দিয়ে অর্জন করা। রক্তের ঋণ শোধ করা যায় কখনও। শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া যায়। ঢাকার একুশে বই মেলায় তাঁর সূচনা।

শুরুটা ছিল সংক্ষিপ্ত। ১৯৭২-এ একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলা একাডেমির সামনে কিছু বই নিয়ে বসে পড়েছিলেন প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা। তাঁর মুক্তধারা পাবলিশিং হাউসের বই উল্টেপাল্টে দেখতে ভিড় জমেছিল পথচলতি মানুষের। যাত্রা স্থগিত রেখে বই বাহারে তারা মুগ্ধ। কেনারও শুরু। পকেট খালি করে হাত ভর্তি বই নিয়ে বাড়ি। দেখতে দেখতে অন্য প্রকাশনা সংস্থাও জমতে শুরু করে। অনেকে আসতেই এলাকাটা মেলার চেহারা নেয়। ১৯৭৮ থেকে মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির। মেলা ডালপালা মেলতে থাকে। ১৯৮৪-তে মেলার নাম হয় অমর একুশে বইমেলা। ১৯৯০-তে সরকারি তত্ত্বাবধানে আরও একটি বই মেলা। যার পরিচিতি ঢাকা বইমেলা নামে।

বাংলাদেশে একুশে বই মেলা।

কলকাতায় বইমেলা আরম্ভ ঢাকার পরে। ১৯৭৬-এর ৫ মার্চ। একাডেমি অব ফাইন আর্টসের বিপরীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংলগ্ন একটুকরো সবুজ জমিতে। ৩৪ প্রকাশকের ৫৪টি স্টলে বইয়ের বিস্তার। অজানা মেলার কথা জানাজানি হতে সময় লেগেছে। কলেবর বৃদ্ধি ১৯৮০-তে। সে বছরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই মেলার শুরু আর শেষ। জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবার উদ্বোধন। সব মিলিয়ে বারো দিনের বই উৎসব। ১৯৯০ থেকে প্রত্যেক বছর একেকটি দেশকে ঘিরে মেলার থিম। এবার যেমন থিম কোস্টারিকা। আগে মেক্সিকো, কিউবা থেকে ফ্রান্স, ব্রিটেন, চিলি ছাড়াও বহু দেশ মেলার থিম হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থিম দু'বার। ১৯৯৮-তে প্রথম বাংলাদেশ থিমের মেলায় এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর উদ্বোধনী ভাষণের উদ্দীপনাই ছিল আলাদা। তিনি তখনও প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধক ছিলেন কবি শামসুর রহমান।

ঢাকার একুশে বইমেলা কিন্তু একবারেই বাংলাদেশের নিজস্ব। অন্য কোনও দেশের স্থান নেই। কলকাতার মতো নয়। বাংলা ছাড়া ভিন্ন ভাষা গুরুত্বহীন। এক দিক থেকে এটা বাংলা ভাষার উৎসব। সেই সমারোহে সামিল গোটা বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি মাসটা ঢাকার সব রাস্তা গিয়ে মিশছে বই মেলায়। মেলায় জলপ্রপাতের মতো আছড়ে পড়ছে নতুন নতুন বই। পুলকিত পাঠক। খুশি প্রকাশক।

আরও পড়ুন- যশোরের সাগরদাঁড়িতে মধুসূদনের জন্মদিনের মেলা

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy