ঢাকার অভিজাত বনানী এলাকার এক বহুতলে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগে। আতঙ্কে পাইপ ও তার বেয়ে নীচে নামার চেষ্টা করেন কয়েক জন। ছবি এপি।
চকবাজারের ঘিঞ্জি চুড়িহাট্টা গলির পরে এ বার অভিজাত বনানী। ফের বহুতলের আগুন আতঙ্ক ছড়াল বাংলাদেশের রাজধানী শহরে। সেই সরু গলি, আশপাশে জলাশয়ের অভাবে আগুন নেভাতে গিয়ে হিমশিম খেলেন দমকল কর্মীরা। সড়ক এড়াতে হেলিকপ্টার থেকে জল ঢালা হল বহুতলটির ওপরে। সেই সময়ে আতঙ্কে লাফ দিয়ে পড়ে, ধোঁয়ায় দম আটকে প্রাণ হারালেন শ্রীলঙ্কার এক নাগরিক-সহ ২৫ জন। জখম অন্তত ৩৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।
গত মাসের ২১ তারিখে ঢাকায় ভাষা আন্দোলন স্মরণের অনুষ্ঠান ম্লান হয়ে গিয়েছিল অদূরে পুরনো ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় পর পর কয়েকটি বহুতলে আগুন ছড়িয়ে পড়ায়। ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় বিশাল সেই অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আসলেও প্রাণ হারান অন্তত ৭০ জন। জখম হয়ে এখনও হাসপাতালে বহু মানুষ। তার ঠিক ৩৬ দিন পরে বৃহস্পতিবার বনানীর ২২ তলা এফ আর টাওয়ারের সাত তলায় আগুনের হলকা দেখা যায় স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে একটা নাগাদ। খুব অল্প সময়ে তা ওপরের ফ্লোরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, ৩২ নম্বর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এই বাড়ির সব ফ্লোরেই বাণিজ্যিক সংস্থার অফিস, দোকান ও রেস্তোরাঁ। দুপুরে সব অফিসই ছিল জনাকীর্ণ। বেলা ১২টা ৫২ মিনিটে আগুনের খবর পাওয়া মাত্র ১৩টি গাড়ি নিয়ে তাঁরা রওনা হয়ে যান। কিছু ক্ষণের মধ্যে আরও ১২টি গাড়িও কাজে যোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সরু রাস্তা, আশপাশে জলের ভাঁড়ারের অভাব ও ভিড় সরিয়ে কাজ শুরু করতে কিছু অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল দমকল বাহিনীকে। তবে দ্রুত তাঁরা ল্যাডার খুলে জলের ফোয়ারা ছোড়া শুরু করেন। তত ক্ষণে সেনাবাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার আকাশ থেকে জ্বলন্ত বহুতলটির ওপরে জল ঢালতে থাকে। আগুনের হলকায় জানলার কাচ ভেঙে পড়তে থাকে। কেউ কেউ সেখান দিয়ে হাত বাড়িয়ে সাহায্যের আর্জি জানাতে থাকেন। পাইপ ও তার বেয়ে বেশ কিছু মানুষ নেমে আসার চেষ্টা করার সময়ে রাস্তার ওপর আছড়ে পড়েন। কয়েক জন আতঙ্কে লাফ দেন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এই কাজ করতে গিয়েই মারা যান শ্রীলঙ্কার এক নাগরিক-সহ ৭ জন। দমকলের কর্তা দেবাশিস বর্ধন জানান, সন্ধ্যা পাঁচটার সময়ে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে হতাহতদের উদ্ধারে তল্লাশি শুরু করেন। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উদ্ধার কর্মীরাও পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন। আগুনে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সপ্তম থেকে দ্বাদশ তলা।
এফ আর টাওয়ারের গায়ে গায়ে লাগা দু’টি বহুতলও নিরাপত্তার কারণে খালি করে দেওয়া হয়। তারই একটিতে একটি টেলিভিশন সংস্থা এবং একটি রেডিয়ো চ্যানেলের দফতর। দুপুরের পর থেকে তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে হয়।
কী করে আগুন লাগল, তা নিয়ে বেঁচে ফেরা মানুষেরা নানা কথা বলছেন। অনেকের দাবি, সাত তলায় একটি অফিসের ক্যান্টিন থেকে প্রথম আগুনের সূচনা। আবার আর এক জন জানিয়েছেন, ওই তলায় বৈদ্যুতিক সংযোগে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছিল। তা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। দবে দমকলের কর্তা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আগুন লাগার কারণ উপযুক্ত তদন্তের পরেই জানা যাবে। ভবনটির অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থায় কোনও গাফিলতি ছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy