Advertisement
E-Paper

শোলাকিয়ায় রাতভর সাঁড়াশি অভিযান, এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ৮

কিশোরগঞ্জের সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ৮। বৃহস্পতিবার রাতভর পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে শোলাকিয়ায়। এখনও এলাকায় রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। এই হামলার পিছনেও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হাত রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশে প্রশাসন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৪:১১
শোলাকিয়ায় বাড়ি বাড়ি ঢুকে অভিযানে পুলিশ। ছবি: এপি।

শোলাকিয়ায় বাড়ি বাড়ি ঢুকে অভিযানে পুলিশ। ছবি: এপি।

কিশোরগঞ্জের সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ৮। বৃহস্পতিবার রাতভর পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে শোলাকিয়ায়। এখনও এলাকায় রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। এই হামলার পিছনেও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হাত রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশে প্রশাসন।

ইদের নমাজ শুরুর আগেই বৃহস্পতিবার সকালে হামলা হয় শোলাকিয়ায়। দুই পুলিশকর্মী এবং এক স্থানীয় বাসিন্দা সহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে বিরাট বাহিনী পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই হামলাকারী এবং সন্দেহভাজন সহ মোট চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার পর রাতভর সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয় এলাকায়। তাতেই আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে স্থানীয় থানা জানিয়েছে।

বুধবারই ভিডিও-য় হুমকি দিয়েছিল আইএস। জানিয়েছিল— গুলশনের পরেও একের পর এক হামলায় কাঁপিয়ে দেওয়া হবে বাংলাদেশে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইদের সকালে জঙ্গিদের বোমা-গুলি-চাপাতিতে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জ। মৃত্যু হয় এক হামলাকারী ও দুই পুলিশ কর্মী সহ চার জন। আহত অন্তত ডজন খানেক। তাঁদের হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সব চেয়ে বড় ইদের জমায়েতে নমাজ পড়েন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এ বারও অন্তত ৪ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন শোলাকিয়ায়। পুলিশের দাবি, নিরীহ মানুষদের হত্যা করা তো জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিলই, নিশানায় ছিলেন এ দিন নমাজ পড়ানোর দায়িত্বে থাকা ইমাম মৌলানা ফরিদুদ্দিন মাসুদও। সন্ত্রাসের বিরোধিতা করায় জঙ্গিরা এর আগেও হত্যার হুমকি দিয়েছে ইমাম মাসুদকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হামলার নিন্দা করে বলেন, ‘‘ইদের সকালে যারা মানুষ খুন করতে আসে, তারা কখনও মুসলমান হতে পারে না।’’

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন কঠোর সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর ফলে জঙ্গিরা জমায়েতের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। তল্লাশিতে ধরা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই বোমা-গুলি নিয়ে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। চাপাতি দিয়ে পুলিশকে কোপাতে থাকে। মারা যান দুই পুলিশকর্মী। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে এক হামলাকারী মারা য়ায়। এক জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে। দিনাজপুরে বাসিন্দা এই তরুণ পুলিশকে জানিয়েছে, তারা আট জন দিন তিনেক আগেই কিশোরগঞ্জে পৌঁছে গা ঢাকা দিয়ে ছিল। তবে জঙ্গিরা কত জন ছিল, বা সবাইকে ধরা গিয়েছে কিনা, পুলিশ কিছু জানায়নি।

কিশোরগঞ্জ জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, অন্তত এক কিলোমিটার আগে চেক পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে তল্লাশি করে সকলের ফোন ও ট্যাব জমা রাখা হচ্ছিল। কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে কয়েক জন হাজির হওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়। জেরা করতেই তারা অস্ত্র বার করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে হামলার ঘটনায় নমাজে ব্যাঘাত ঘটেনি। পুলিশ কর্তা বলেন, জনতার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল। কিন্তু পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা তা হতে দেননি।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মী জানিয়েছেন, এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ ইমাম মাসুদ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে এসে নামেন নমাজ স্থলের এক কিলোমিটার বাইরে তৈরি হেলিপ্যাডে। কয়েক জন ছেলে ব্যাকপ্যাক কাঁধে অনেক আগে থেকে এসে দাঁড়িয়েছিল। তারা ইমামের গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। পুলিশ বাধা দিলে তারা ব্যাগ থেকে গ্রেনেড ধরনের হাতবোমা বার করে ছুড়তে শুরু করে। ইমামকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ শুরু হয়। জানলা দিয়ে আসা গুলি মাথায় লেগে মারা যান পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা ঝর্নারানি ভৌমিক।

খুনোখুনি ও সন্ত্রাসকে ইসলাম-বিরোধী ফতোয়া দেওয়ার জন্য দেশের অন্য আলেম-উলেমাদের একজোট করে জঙ্গিদের বিষ নজরে পড়েন মৌলানা ফরিদুদ্দিন মাসুদ। নমাজের পরে যে খুৎবা পড়া হয়, সেখানেও শান্তির বাণী প্রচার করেন তিনি। টুইটারে ঘোষণা করেছেন— ‘ইসলামের নামে এই রক্তপাত ইসলামের গায়েই কালি ঢালছে।’ এ জন্যই খতম তালিকার শীর্ষে উঠে আসেন তিনি। পুলিশের ধারণা, এ দিন জঙ্গিদের নিশানা হয়তো তিনিই ছিলেন। তাঁকে হত্যার জন্যই জঙ্গিরা কিশোরগঞ্জে হাজির হয়েছিল।

kishorehunj attack terrorist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy