Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh News

মংলা-চট্টগ্রাম-কলকাতা জুড়েছে যাত্রীবাহী জাহাজ

ঘ্রাণে অর্ধেক, স্বাদে পূর্ণ ভোজন। না খেয়ে না শুঁকে শুধু দেখেও আশ্চর্য সুখ। ২০০ রংয়ের রসগোল্লা। লাল, নীল, হলদে, সবুজ, বেগুনি, কালো কী নেই। শুদ্ধ শ্বেত খোলস ছেড়ে রসগোল্লার বৈচিত্রে মুক্তি। মিষ্টিতে আটকে নেই। একই সঙ্গে টক ঝাল মিষ্টি। ফুচকার খাট্টা-মিঠা।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ১৩:৩৫
Share: Save:

ঘ্রাণে অর্ধেক, স্বাদে পূর্ণ ভোজন। না খেয়ে না শুঁকে শুধু দেখেও আশ্চর্য সুখ। ২০০ রংয়ের রসগোল্লা। লাল, নীল, হলদে, সবুজ, বেগুনি, কালো কী নেই। শুদ্ধ শ্বেত খোলস ছেড়ে রসগোল্লার বৈচিত্রে মুক্তি। মিষ্টিতে আটকে নেই। একই সঙ্গে টক ঝাল মিষ্টি। ফুচকার খাট্টা-মিঠা। কাঁচা লঙ্কার কড়া ঝাল, গোলাপের সুবাস। এক দিনে সব খাওয়া অসম্ভব। কলকাতায় পর্যটক টানার মোক্ষম টোপ আপাতত এটাই। রসগোল্লাটা বাঙালির গায়ে জড়িয়ে। এবার রূপে গুণে অসীম। স্রষ্টা স্বাতী শরাফ।

পর্যটনের গতিবিধি পাল্টাচ্ছে। আকাশ সড়ক ছেড়ে এ বার জলপথে। দুনিয়াকে বেঁধে ফেলা সমুদ্রের ঢেউয়ে। বিলাসবহুল ক্রুজ লাইনার নীল সাগর সাঁতরাচ্ছে। হংসের মতো পৌঁছচ্ছে এ দেশ থেকে সে দেশ। নোঙর করে দু'এক দিন থাকা। জায়গাটা আশ মিটিয়ে দেখা। সেখানকার খাবারদাবার মনের সুখে চেখে ফের যাত্রা। জাহাজে যাত্রী সফর বন্ধ হয়েই ছিল। জাহাজ বলতেই বোঝাত পণ্য পরিবহণ। এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য সরবরাহ। তাতে সুবিধাই বেশি। খরচ কম, নিশ্চিন্তে গন্তব্য সন্ধান। যাতায়াতের সময়টা কমাতে পারলে কথাই নেই। তা হওয়ার নয়। ৩০ নটিক্যাল মাইল স্পিড অব্যাহত রাখতেই প্রাণান্তকর অবস্থা। জলহস্তির থেকে ঘোড়ার গতি দাবি করলে হবে কেন। মংলা, চট্টগ্রাম, কলকাতা বন্দর যে জুড়েছে তাই না কত।

আরও পড়ুন, বাংলাদেশের উপজেলা ভোটে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল বিএনপি-র

কলম্বাস, ভাস্কো-দা-গামারা যখন জাহাজে দেশ আবিষ্কারে বেরিয়েছেন তখন পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। পদে পদে বিপদ। জলদস্যু ছাড়া সমুদ্র প্রাণীর আক্রমণ। তিমির কবলে পড়লে রক্ষে নেই। মনসামঙ্গলের চাঁদ-বণিকের বিপদটা ভয়ঙ্কর। মূল্যবান পণ্য বোঝাই জাহাজ চোখের সামনে ডুবছে, তিনি অসহায়। অবশেষে বুদ্ধির উদয়। তেলের পিপে খুলে ঢালা হল ঢেউয়ের মাথায়। তেলের চাপে মাথা নোয়াল তরঙ্গ। শান্ত সমুদ্রে ময়ূরপঙ্ক্ষী ভাসল নিশ্চিন্ত আনন্দে।

সমুদ্রের খেয়াল খুশি আন্দাজ করা কঠিন। রোলিং-পিচিং শুরু হলে যাত্রীরা কে কোথায় ছিটকোবে কেউ জানে না। আবহাওয়ার খোঁজ রেখে যাত্রা করলে বিপদ কিছুটা এড়ানো যায়। টাইটানিক কিন্তু পারেনি। অমন বিলাসবহুল দামি জাহাজ ডুবেছে। অধিকাংশ যাত্রীর সলিল সমাধি। শঙ্কায় পিছিয়ে এলে চলবে কেন। ১৯৮৯ থেকে চলছে 'সিলভার ডিসকভারার' । দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে সাগর ঢেউয়ের মাথায় মাথায়। ৯৩ যাত্রী, ৯৮ জাহাজ কর্মী নিয়ে জাহাজ চলেছে দেশ খেকে দেশান্তরে। কলকাতার খিদিরপুরের ৮ নম্বর জেটিতে দু'দিনের জন্য নোঙর করেছিল। সেখান থেকে চলে গেল বাংলাদেশের মংলায়। যাত্রীদের সুন্দরবন দেখার আবদার। লাভ হয়নি। ইচ্ছে ছিল সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখার। বাঘেদের অসম্ভব দেমাক। মুহূর্তের জন্যও দেখা যায়নি। কিন্তু হরিণ ইতস্তত ছুটে বেরিয়েছে। বাঘ যে আছে সেটাই তার প্রমাণ। বাঘের বদলে হরিণ দেখে কী লাভ।

আরও পড়ুন, কসোভোকে স্বীকৃতি দিল বাংলাদেশ

জাহাজটা ঘুরছে তো ঘুরছেই। যাত্রী বদলাচ্ছে, কর্মী নয়। মাদাগাস্কার, মরিশাস, সেশেলস, তানজানিয়া, ওমান হয়ে ভারতে। ভারত বলতে শুধু কলকাতায়। অন্য কোথাও নয়। বাঙালি খাবারের কথা কানে শুনেছে। মুখে তোলাটাই লক্ষ্য। সাধ মিটেছে। সব চেয়ে বেশি উল্লাস রসগোল্লাতেই। রং দেখেই ভ্যাবাচাকা। যাত্রীদের বলা হয়েছে ১২ মার্চ হোলি। রংয়ের উৎসব। রং খেলা দেখতে হলে ক'দিন সবুর করতে হবে। অত সময় নেই। বাংলাদেশে ছুঁয়ে সাত সাগর যাত্রা। বাংলাদেশ থেকে মায়ানমার, তাইল্যান্ড, মংলায় খাওয়াটা মন্দ হয়নি। কাচ্চি বিরিয়ানির সঙ্গে রেশমি কাবাব। সফরে মাথা পিছু ভাড়া ১০ হাজার ২৫০ ডলার। ভাড়াটা কমলে বাঙালিও জাহাজে পা রাখতে পারে। ঘুরপাক খেতে খেতে দেখতে পারে দুনিয়াটাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE