Advertisement
E-Paper

পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের অভয়াশ্রম বেড়ে ৪২০ বর্গকিলোমিটার হচ্ছে

কলকাতার মেট্রো মার্কেটে একুশ কেজির কাতলা। দেখলে পলক পড়ে না। কৌতুহলের হাওয়া। বিশাল মৎস্যের উৎস কোথায়। ম্যানেজারের সহাস্য জবাব, মধ্যপ্রদেশের সরোবরে। ওরা মাছ খায় না। মাছটার আয়ু ফুরিয়েছে ধরে নিয়েই পাঠিয়েছে। মরবেই যখন বাঙালি খেয়ে বাঁচুক। পশ্চিমবঙ্গে মাছেদের বড় হওয়ার সুযোগ নেই।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ১২:৩৬

কলকাতার মেট্রো মার্কেটে একুশ কেজির কাতলা। দেখলে পলক পড়ে না। কৌতুহলের হাওয়া। বিশাল মৎস্যের উৎস কোথায়। ম্যানেজারের সহাস্য জবাব, মধ্যপ্রদেশের সরোবরে। ওরা মাছ খায় না। মাছটার আয়ু ফুরিয়েছে ধরে নিয়েই পাঠিয়েছে। মরবেই যখন বাঙালি খেয়ে বাঁচুক। পশ্চিমবঙ্গে মাছেদের বড় হওয়ার সুযোগ নেই। চোখ ফুটতে না ফুটতেই কেটেকুটে রেঁধে ভাতের পাতে। আগলে রাখার চেষ্টা কম নয়। আগল ভাঙতে কতক্ষণ। খাল বিল নদী সাগরে জাল পড়ছে তো পড়ছেই। খুদে হলেও ছাড় নেই। ধরা আর খাওয়া। বারণ করলে শুনছে কে। নিষেধাজ্ঞাকেও বুড়ো আঙুল। ইলিশের আকাল সেখানেই। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এ বছর মন্দের ভাল। চার মাস জাল ফেলা বন্ধ রেখে সুফল মিলেছে। মাছ বেড়েছে সংখ্যায়, ওজনে। তুলনায় বাংলাদেশে বেশি, পশ্চিমবঙ্গে কম। সার কথাটা বাঙালি শিখেছে। রেখে খাও, বেশি খাবে। ইলিশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের সচেতনতা আরও বেশি। নদীতে নদীতে গড়ছে ইলিশের অভয়াশ্রম। যেখানেই জাটকা বা খোকা ইলিশের ঝাঁক সেখানেই নিষেধাজ্ঞার বেড়া। জাল ফেললেই জেল, জরিমানা।

পাঁচটি অভয়াশ্রমের পর ছ’নম্বরটির তোড়জোড় চলছে। বরিশালের হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন অভয়াশ্রমটি হবে। মেঘনার তিন শাখা নদী ধর্মগঞ্জ নয়াভাঙ্গুলি লতাকেও তার আওতায় আনা হয়েছে। সব থেকে বেশি ইলিশ এখানেই। ইলিশ সন্ধানে নদীর পর নদী তোলপাড় করার পর সিদ্ধান্ত। পর্যবেক্ষণ শুরু ২০০৯-এ। ২০১১তে সেখানেই বিশাল ইলিশ সাম্রাজ্যের খোঁজ মেলে। সেখান ছেড়ে ইলিশকুল কোথাও যেতে চায় না। কেন যাবে। জল মিষ্টি, গভীরতা বেশি, আহার মনের মতো। নিজের ভালমন্দ ইলিশও বোঝে। মনের খুশিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়। সমৃদ্ধ ইলিশ সমাজ সুখে দিন কাটায়। হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর, আবুপুর, চর মেমানিয়া, গৌরবদীর পাশে মেঘনায় সারা বছর ইলিশের বাস।

আরও পড়ুন...
তিস্তা নিয়ে মোদীকে চাপ বাংলাদেশের

১০০ মিটারে জাল ফেলে ঘন্টায় ৫০টির বেশি ইলিশ ধরতে পারলেই জায়গাটা ইলিশ সাম্রাজ্য। তাদের বাঁচাতে এলাকাটা হয়ে ওঠে অভয়াশ্রম। চাঁদপুর, বরিশাল শরিয়তপুর জেলায় মেঘনা যেন ইলিশের দেশ। ভোলায় রামদাসপুর, ভাষাণচর ইলিশের স্বপ্নপুরী। চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর হয়ে, আলেকজান্ডারে মেঘনার নিম্ন অববাহিকার ১০০ বর্গকিলোমিটার, ভোলার চর ইলিশ থেকে চর পিয়ালো মেঘনার শাহবাজপুর শাখার ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তমের তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ বর্গ কিলোমিটার, পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলার আনারমানিক নদীর ৪০ বর্গকিলোমিটার, শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলায় পদ্মার নিম্ন অববাহিকার ২০ কিলোমিটারে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম। এই পাঁচটির সঙ্গে আরও একটি অভয়াশ্রম যুক্ত হলে ইলিশের নিরাপত্তা বলয় আরও বাড়বে। ছিল ৩৫০ বর্গকিলোমিটার। আরও ৭০ বর্গকিলোমিটার বেড়ে হবে ৪২০ বর্গকিলোমিটার।

বড় ইলিশ পেতে দরকার মাত্র দুমাসের ধৈর্য, সংযম। ৬০টা দিন মৎস্যজীবীরা ইলিশ মুখো না হলেই যথেষ্ট। ইলিশ বাড়ে তাড়াতাড়ি। এই সময়টুকু পেলেই তারা খোকা থেকে সাবালক হয়ে উঠবে। নদী-সাগর এক করে যৌবন তরঙ্গে ভাসবে। জালে পড়লে দেখেই মন ভরবে। রান্নার পর পাতে পড়লে তো কথাই নেই। কথা বলার সময়ই থাকবে না।

Hilsa Meghna River New Sanctuary Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy