Advertisement
E-Paper

মির কাসেমরা যে ওদেরই লোক ছিল প্রমাণ করে দিচ্ছে পাকিস্তান

ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি যুদ্ধপরাধী মির কাসেম আলির, ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে দশটায়। ফাঁসিতে শেষ নিঃশ্বাস সুনিশ্চিত শাহজানের নেতৃত্বে চার জল্লাদের। বিশ মিনিট ঝুলে থাকার পর মাটিতে টেনে নামানো দেহ পরীক্ষা গাজিপুর জেলা সিভিল সার্জেনের।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:০০
জেলের পথে মির কাসেম আলি। ছবি: এএফপি।

জেলের পথে মির কাসেম আলি। ছবি: এএফপি।

ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি যুদ্ধপরাধী মির কাসেম আলির, ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে দশটায়। ফাঁসিতে শেষ নিঃশ্বাস সুনিশ্চিত শাহজানের নেতৃত্বে চার জল্লাদের। বিশ মিনিট ঝুলে থাকার পর মাটিতে টেনে নামানো দেহ পরীক্ষা গাজিপুর জেলা সিভিল সার্জেনের। মৃত্যু সত্যি জেনে কাসেমের পায়ের শিরা কেটে মৃত্যু দলিল লেখা। পরের কাজ সংক্ষিপ্ত। লাশ গোসল করিয়ে কাফনের কাপড়ে মুড়ে কফিনে ঢোকান। রাতেই দেহ গ্রামের বাড়ি মালিবগঞ্জের হরিরামপুরে। দাফন সেখানেই। শেষ সঙ্গী ৪০ জন আত্মীয়স্বজন। স্বস্তির নিঃশ্বাসের সঙ্গে উল্লাস বাংলাদেশে। কান্না পাকিস্তানের। প্রাণের দোসরের মৃত্যুতে অশ্রুনদী।

এমন নদী আগেও বয়েছে ইসলামাবাদে। কাশেমের সহযোগীদের ফাঁসিতে। জামাতে ইসলামি নেতা মতিউর রহমান নিজামি, আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদ, মহম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লার প্রাণদণ্ডেও খণ্ডবিখণ্ডিত পাকিস্তান হৃদয়। তাদের ফাঁসি দেওয়াটা যে কতবড় অন্যায় চিৎকার করে জানিয়েছে। জাতীয় পরিষদে শোক প্রস্তাব। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে প্রতিবাদ। এতে স্পষ্ট করা, যারা মরেছে তারা পাকিস্তানেরই লোক। তাদের হয়েই কাজ করেছে আজীবন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা পারেনি ওরা তাই করে দেখিয়েছে। একাত্তরে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি হয়েও তারা পাকিস্তানি ভাবনায় উজ্জীবিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে জেহাদ। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে মাটি ভিজিয়ে জানিয়ে দেওয়া, পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তি চাওয়ার শাস্তি মৃত্যু।

পাকিস্তান শাসন অক্ষুন্ন রাখার কাজে পুরস্কার পাহাড় প্রমাণ। তাদের দাসত্বের মজুরিতে মির কাশেম আলিও রাজা-উজির। সম্পদ ৪০ হাজার কোটি। ইসলামি ব্যাঙ্ক, চিকিৎসা কেন্দ্র ইবলে সিমা ট্রাস্ট, নয়া দিগন্ত সংবাদপত্র, দিগন্ত টেলিভিশনের মালিকানা। অগুনন এনাজিও’র কর্তৃত্ব। নেই ঘরের সন্তান কাসেম কৈশোরে ১০০ টাকার নোট ভাল করে চেনেনি। যৌবনে অর্থের বন্যায় ভাসমান। মুক্তি যোদ্ধাদের শেষ করার পারিতোষিক, চট্টগ্রামের চন্দ্রমোহন নাথের ‘মহামায়া ভবন’ কেড়ে ডালিম হোটেলে রূপান্তরিত। অ্যাডল্ফ হিটলারের হত্যা শিবিরের আদলে ‘টর্চার সেল’, সশস্ত্রবাহিনী নিয়ে খোলা জিপে শহরে ঘুরে ঘুরে মুক্তি সেনাদের ধরে সেখানে পোরা। খুন করে কর্ণফুলিতে ছুঁড়ে ফেলা। যন্ত্রণায় নদীর কান্না, কাসেমের হাসি।

কাসেমের ফাঁসিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রক দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, মিথ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় কাসেমের ফাঁসি গণতন্ত্র বিরোধী। এই মন্তব্যে গর্জে উঠেছে বাংলাদেশ। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সামিনা মেহতাবকে কড়া কথায় জানানো হয়েছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ। ইসলামাবাদের এ কাজে তাদের অপরাধই স্বীকৃতি পাচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি জানিয়েছে।

পাকিস্তানের কণ্ঠস্বরে আগের ঝাঁঝ নেই। তারা বুঝতে পারছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। পশ্চাপদ হয়ে অগ্রগামী দেশের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক লড়াই সম্ভব নয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বাংলাদেশের পাশে। বাংলাদেশের থেকেই এবার পাকিস্তানের গণতন্ত্রের শিক্ষা নেওয়ার পালা।

আরও পড়ুন:
‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’-এর ফাঁসির নিন্দায় সর্বসম্মত পাক পার্লামেন্ট

Mir Quasem Ali International Tribunal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy