Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকায় ফের হামলার হুঁশিয়ারি, চোখের জলে বিদায় নিহতদের

শুক্রবার রাতে গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। হামলার সময়ে দু’জনেই রেস্তোরাঁয় হাজির ছিলেন।

আর্মি স্টেডিয়ামে স্মরণসভার পরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরের কফিনবন্দি দেহ। সোমবার ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স

আর্মি স্টেডিয়ামে স্মরণসভার পরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরের কফিনবন্দি দেহ। সোমবার ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স

অনমিত্র সেনগুপ্ত ও কুদ্দুস আফ্রাদ
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫১
Share: Save:

শুক্রবার রাতে গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। হামলার সময়ে দু’জনেই রেস্তোরাঁয় হাজির ছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক সোমবার এ খবর জানিয়েছেন। হামলাকারীদের নেতার পরিচয়ও জানা গিয়েছে। বগুড়ার একটি মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র এই খায়রুল ইসলামের বাবা-মাকে আটক করেছে পুলিশ। ঢাকায় আরও একটি জঙ্গি হানার বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন পুলিশ প্রধান।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, আটক দু’জনের এক জন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। জঙ্গি সংস্রবের কারণে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যূত করা হয়েছিল। আর এক জন তরুণকে রবিবার মধ্যরাতে অসুস্থ ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাশের একটি জলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে বেকারির কর্মী ছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে। কী ভাবে সে ওখানে গেল, কেনই বা গা-ঢাকা দিয়ে ছিল, তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

জঙ্গি হানায় নিহতদের এ দিন চোখের জলে স্মরণ করা হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে একটি মঞ্চে তিনটি কফিনে তিন জনের মরদেহ রাখা হয়। ইশরাত আখন্দ ও ফারাত হোসেনের কফিন ঢাকা ছিল বাংলাদেশের পতাকায়। দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় অবিন্তা কবিরের কফিনে বাংলাদেশ ও মার্কিন পতাকা ঢাকা দেওয়া হয়। মঞ্চের পিছনে ছিল ভারত, বাংলাদেশ, ইতালি, জাপান ও আমেরিকার পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দেন তিন জনের কফিনে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি বিদেশে থাকায় তাঁর পক্ষেও ফুল দেওয়া হয় মরদেহে।

নাম গোপনের শর্তে পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার বেকারিতে হামলার খবর পেয়েই বনানী থানার পুলিশ সেখানে যায়। কিন্তু এটা যে জঙ্গিহানা, ঘুণাক্ষরেও তারা ধারণা করতে পারেনি। পুলিশের কাছে খবর ছিল, আক্রমণকারীদের এক জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও অধিকাংশই ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছে। ওই পুলিশ অফিসার জানান— ভাবা হয়েছিল, স্থানীয় দুষ্কৃতীরা হয়তো হোটেল মালিককে হুমকি দিতে ঢুকেছে। বনানী থানার ওসি খালিদ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ ়তাই এক রকম বিনা প্রস্তুতিতে রেস্তোরাঁটির চত্বরে ঢুকে পড়ে। সে সময়েই তাদের লক্ষ করে গ্রেনেড ধরনের শক্তিশালী ‘আইইডি’ ছোড়ে আক্রমণকারীরা। তার স‌্প্লিন্টারে জখম হয়ে প্রাণ হারান সালাউদ্দিন। আইইডি-র ঘায়ে মারা যান পুলিশ অফিসার রবিউল ইসলামও।

সন্তানহারার কান্না। তারিশি জৈনের শেষকৃত্যে তাঁর বাবা-মা। সোমবার গুড়গাঁওয়ে। ছবি: এপি

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আজ দুই পুলিশ অফিসারের শোক সভা হয়। সেখানেই দু’জনকে আটকের খবর জানান মহানগর পুলিশের প্রধান। তিনি বলেন, এত বড় সংগঠিত জঙ্গিহানা বাংলাদেশে আগে হয়নি। গুলশনের একটি বড় শপিং মলে আরও একটি হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বত্র কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

ডি কে হোয়াং নামে দক্ষিণ কোরিয়ার এক পোশাক ব্যবসায়ী শুক্রবার রাতে গুলশনের একটি বাড়ি থেকে হোলি আর্টিজান বেকারির বেশ কিছু ভিডিও রেকর্ডিং করেন। এমন পাঁচটি ভিডিও খতিয়ে দেখে পুলিশ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে। জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির-এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সপরিবার তিনি রেস্তোরাঁটিতে এসেছিলেন। নিবরাস ইসলাম নামে এক হামলাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্র ছিল বলে তিনি চিনতে পারেন। ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রাণে বাঁচতেই তিনি ওই হামলাকারীর সঙ্গে হেসে কথা বলেন। এ দিক ও দিক ঘোরাফেরাও করেন। পুলিশ জেনেছে, এই নিবরাসও হিজবুত তাহরির-এর জঙ্গি। হামলা পরিচালনায় ওই শিক্ষকের কোনও হাত রয়েছে কি না জানতেই তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

অন্য জনকে রবিবার মধ্যরাতে স্থানীয় জলা থেকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানালেও তার পরিবারের দাবি, পুলিশ আগেই তাকে আটক করেছে। ওই তরুণের বাবা জানিয়েছেন, একটি হাসপাতালে হাতকড়া পরা অবস্থায় তাকে দেখতে পান। বাবার অভিযোগ, পুলিশের মারধরেই তাঁর ছেলে মৃত্যুমুখে। রেস্তোরাঁয় পাচকের সহকারীর কাজ করত সে। পুলিশ যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হামলাকারীদের নেতা হিসেবে খায়রুল ইসলাম নামে বগুড়ার বাসিন্দা এক তরুণকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কর্মী হিসেবে পরিচিত খায়রুল স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খায়রুলের বাবা-মাকে জেরার জন্য আটক করেছে পুলিশ। খায়রুলের মা পেয়ারা বেগম জানিয়েছেন, এক বছর ধরে বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না ছেলের। হামলাকারীদের মধ্যে বগুড়ার আর এক মাদ্রাসা ছাত্রকেও চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

condolence Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE