Advertisement
E-Paper

‘সুরাইয়া প্রেম করে জেনে মাথায় খুন চেপে গিয়েছিল’

ঢাকার ক্লাস এইটের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার খুনি ওবায়দুল হক আদালতে স্বীকারোক্তি দিল। খুনের কথা স্বীকার করার পাশাপাশি দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের বিশদ বর্ণনাও। যে টেলারিং শপে ওবায়দুল কাজ করত, এক বছর আগে সেখানেই রিশাকে প্রথম দেখেছিল সে। এর পর লাগাতার প্রেম নিবেদনের চেষ্টা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:১৪
সুরাইয়া এবং ওবায়েদুল।

সুরাইয়া এবং ওবায়েদুল।

ঢাকার ক্লাস এইটের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার খুনি ওবায়দুল হক আদালতে স্বীকারোক্তি দিল। খুনের কথা স্বীকার করার পাশাপাশি দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের বিশদ বর্ণনাও।

যে টেলারিং শপে ওবায়দুল কাজ করত, এক বছর আগে সেখানেই রিশাকে প্রথম দেখেছিল সে। এর পর লাগাতার প্রেম নিবেদনের চেষ্টা। আর এই প্রেমে ব্যর্থ হয়েই রিশাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল সে। খুনের জন্য ১২০ টাকা দিয়ে কেনে ছুরি। রিশাকে ছুরিকাঘাত করার পর পালিয়ে যায় নিজের গ্রামের দিনাজপুরে নিজের বাড়িতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নীলফামারির ডোমার এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে গত ১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে।

পরে ছ’দিনের রিমান্ডে পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওবায়দুল আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। আদালতে ওবায়দুল বলে, ‘আমি স্বেচ্ছায় এবং কারও বিনা প্ররোচনায় রিশা হত্যার দায় স্বীকার করলাম।’

আদালত সূত্রে খবর, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওবায়দুল বলেছে, তার নাম ওবায়দুল হক। বাবার নাম মৃত আব্দুস সামাদ। বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানা এলাকার মিরাটঙ্গিতে। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটে বৈশাখী টেলার্সে কাজ করত। বছরখানেক আগে সুরাইয়া আক্তার রিশা ও তার মা কাপড় বানানোর জন্য তার টেলার্সে গেলে পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই সুরাইয়ার প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।এর ২/৩ দিন পর সে রিশার মায়ের কাপড়ের মাপ জানার অজুহাতে তার কাছে থাকা রিশার মায়ের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে। রিশা ফোন ধরলে তার সঙ্গে ওবায়দুলের কথা হয়। ওবায়দুল জানতে পারে ওই ফোন নম্বরটি রিশা ব্যবহার করে। এর পর থেকে ওবায়দুল প্রায়ই রিশার মোবাইলে ফোন করতে থাকে।

জবানবন্দিতে ওবায়দুল বলে, “সুরাইয়া আক্তার রিশার সঙ্গে দেখা হওয়ার দু’মাস পরে আমি মোবাইলের মাধ্যমে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিই। এর কিছু দিন পর রিশা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে আমি রিশার মাকে ফোন দিয়ে বলি যে রিশার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে। তখন রিশার মা আমাকে রিশার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। আমি তার নিষেধ না শুনে রিশার মোবাইলে কল করলে রিশার মা আর দাদি ফোন রিসিভ করে আমাকে গালিগালাজ করতো।”

৩/৪ মাস আগে রিশা ওবায়দুলের মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। ঘাতক ওবায়দুল জানিয়েছে, “কয়েক মাস আমি সুরাইয়া আক্তার রিশার সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে কথা বলতে ব্যর্থ হই। আমি রিশার সঙ্গে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে যাই এবং তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হই। এর মধ্যে এক দিন আমি তার সঙ্গে জোর করে কথা বলতে চাইলে রিশা আমাকে জানায় যে, সে আমার সঙ্গে প্রেম করবে না। ইতিমধ্যে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে, অন্য একটি ছেলের সঙ্গে রিশার প্রেমের সম্পর্ক আছে। এই কথা জানার পর আমার মাথায় খুন চেপে যায়।’


পুলিশ হেফাজতে ওবায়েদুল।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওবায়দুল বলেছে, “রিশা যাতে অন্য কোনও ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না পারে সেজন্য আমি তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করি। গত ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় আমি বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার অ্যান্ড পেইন্ট সাপ্লাই নামক দোকান থেকে ১২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কিনি। রিশাকে মারার জন্য গত ২৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার সময় আমি ছুরি-সহ কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার সময় রিশা তার কয়েকজন সহপাঠী-সহ স্কুল থেকে বের হয়ে ফুটওভার ব্রিজের ওপর ওঠে।”

রিশাকে আক্রমণ করার বর্ণনা দিয়ে ওবায়দুল বলে, “আমি রিশার কাছে গিয়ে আমার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে রিশার পেটের বাঁ দিকে সজোরে আঘাত করি। তারপর ছুরি-সহই ফুটওভার ব্রিজের নীচে নেমে দৌড়ে ব্যাটারি গলি দিয়ে সেগুনবাগিচা রাজস্ব ভবনের সামনে যাই। রাজস্ব ভবনের সামনে রাস্তার ফুটপাথে ইট-সুরকি ও ময়লার মধ্যে ছুরিটি ফেলে দিয়ে পল্টন হয়ে গুলিস্তান যাই। সেখান থেকে সদরঘাট গিয়ে নদী পার হয়ে কেরানিগঞ্জে খুরতুতো ভাই জসিমের কাছে যাই। ওইদিন বিকেল বেলা কেরানিগঞ্জ থেকে কোনাপাড়ায় আমার পরিচিত টেইলার্স মাস্টার সুনীল ও গৌর হরিদের কাছে গিয়ে এক হাজার টাকা নিই। তারপর আমি শ্যামলী গিয়ে হানিফ পরিবহনে করে নিজ বাড়িতে যাই। এরপর টিভিতে রিশা মারা যাবার খবর শুনে আমি নীলফামারিতে আমার বেয়াই খুশবুলের কাছে যাই। সংবাদ পেয়ে রমনা থানা পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে রমনা থানায় নিয়ে আসে।’

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটব্রিজের উপর রিশাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওবায়দুল। রিশাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার নাগাদ মারা যায় সে। রিশা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। বাবা রমজান হোসেন ও মা তানিয়া হোসেনের সঙ্গে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এলাকায় থাকত।

(সৌজন্য বাংলা ট্রিবিউন)

Suraiya Obayedul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy