Advertisement
E-Paper

নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে বাঁচেন রোহিঙ্গা বাবা-মা

বাংলাদেশে ২০১৪ সালের আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি বিয়ে নিষিদ্ধ। এমনকি পাত্র-পাত্রী প্রাপ্তবয়স্ক হলেও। আর তাই রোহিঙ্গা স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রুবেল।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৫
কুতুপালং শিবিরে এক রোহিঙ্গা পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

কুতুপালং শিবিরে এক রোহিঙ্গা পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

মন ভাল নেই মহম্মদ ইলিয়াসের। পুলিশ অক্টোবর মাস থেকে গরু খোঁজা খুঁজছে তাঁর সদ্য বিবাহিত বন্ধু রুবেল (নাম পরিবর্তিত)-কে। স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বছর ছাব্বিশের রুবেল। ‘‘সে কোথায় আছে, কী করছে— কিছুই জানি না। এলেই পুলিশ ওদের ধরবে,’’ বলেন ইলিয়াস। পুলিশের হাতে যে তাঁরা কোথাও ধরা পড়েননি, সেটা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারেন না কক্সবাজারের ওই দোকান কর্মী।

অপরাধটা কি রুবেলের?

ভালবেসে তিনি বিয়ে করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ১৮ বছরের এক তরুণীকে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালের আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি বিয়ে নিষিদ্ধ। এমনকি পাত্র-পাত্রী প্রাপ্তবয়স্ক হলেও। আর তাই রোহিঙ্গা স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রুবেল।

আইন তো বলছে ওই বিয়ে নিষিদ্ধ। কিন্তু মানছে কে? কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্মী গড়গড় করে শিবিরের আশপাশের গ্রামের এমন ১০ জনের নাম বলে গেলেন, যাঁরা উদ্বাস্তু শিবিরের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে গিয়েছেন। ভালবাসাকে বেড়ি পরাতে পারেনি আইন।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ওই কর্মীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘শরণার্থী শিবিরে যে সব মেয়েরা অভিভাবকহীন তাঁদের নিয়েই বেশি চিন্তা। নিজেদের ভবিষ্যতের চিন্তায় অনেকে ক্ষেত্রেই ভালবাসার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন তাঁরা।’’ তবে শিবিরের ভিতরে উদ্বাস্তু পরিবারের মধ্যে যে ভাবে নাবালিকাদের বিয়ে হচ্ছে তাতেও স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্বিগ্ন। শরণার্থী শিবিরে কাউন্সিলরের কাজ করা এক যুবকের মন্তব্য, ‘‘বিয়ে নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি নিত্য ঘটনা। এই সব মেয়েদের পাচার হয়ে যাওয়ার ভয় বেশি।’’

শিবিরে থাকা বিবাহিতদের ওপরে তবু নজর রাখা যায়, কিন্তু বাংলাদেশিদের বিয়ে করে যে সব মেয়ে শিবির ছেড়েছেন, তাঁদের নিয়েই স্বেচ্ছাসেবীরা চিন্তায়। কারণ তাঁদের উপরে নজরদারি সম্ভব নয়। বিয়েটাও বেআইনি। ‘‘এই তরুণীদের বিক্রি করে দিলে বা দেহ ব্যবসায় নামালে কিছুই করার থাকে না। এই কারণেই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিয়ে নিষিদ্ধ,’’ জানালেন প্রশাসনের এক কর্তা।

যাঁরা ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের নিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, সেই সব বাবা-মায়েরা কিন্তু মেয়ে পার করতে মরিয়া। এক স্বামীহারা তাঁর নয় ছেলেমেয়ে নিয়ে বসেছিলেন শিবিরে। তিনটি মেয়ের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। পাশের শিবিরে আদিনা বিবি গত চার মাসে তাঁর দুই নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন শিবিরেরই দুই পাত্রের সঙ্গে। পাত্রদের এক জন দোকান দিয়েছে শিবিরে। অন্য জন এখানে ত্রিপল ছাওয়ার কাজ করেন। ১২ ঘণ্টার কাজে মজুরি ২৫০ টাকা। তিন মেয়ের জন্য হন্যে হয়ে এমন পাত্র খুঁজছেন এই মহিলাও।

শুধু নিরাপত্তার তাগিদেও শিবিরের বেকার ছেলেদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। ২০ বছরের আব্দুলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ১৬ বছরের আরিফার। মেয়ের বাবা বলেন ‘‘ছেলেমেয়েকে খাওয়াতে পারি না। নিরাপত্তাও নেই। আব্দুলের বাবার প্রস্তাব তাই ফেরাইনি।’’

আর আব্দুলের বাবার জবাব— ‘‘একটা রেশন কার্ড তো বাড়ল!’’

(শেষ)

Rohingy Myanmar Kutupalong Refugee কুতুপালং রোহিঙ্গা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy