সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার বার্তা শেখ হাসিনার। —নিজস্ব চিত্র
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সকলের ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।দু’দিন আগের ব্রুনেই সফরের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তবে শুরুতেই শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে হাসিনার পিসতুতো ভাই তথা সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীর মৃত্যু হয়। ব্রুনেই সফরে থাকাকালীন তিনি প্রথম হামলার খবর পান। পরে জায়ানের মৃত্যুর খবরও পৌঁছয় তাঁর কাছে। হাসিনার কথায়, ‘‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি নৃশংস এই হামলার নিন্দা করে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে শোকবার্তা পাঠাই। কাপুরুষোচিত ওই হামলার তীব্র নিন্দা করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত তৈরির আহ্বান জানাচ্ছি।’’
ঘণ্টা দেড়েকের সাংবাদিক সম্মেলনে জঙ্গিবাদ থেকে রোহিঙ্গা, দেশের রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়ার দণ্ড— সব বিষয়ই উঠে এসেছে। তাঁর সফর প্রসঙ্গে হাসিনা জানান, গত এক দশকে ব্রুনেইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সে দেশের সুলতান। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ব্রুনেইয়ের সঙ্গে ৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মায়ানমার সরকারের পাশাপাশি কিছু সংগঠনেরও অনীহা রয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘সামনে বর্ষাকাল। পাহাড়ে ধস নেমে বা সাইক্লোনে অথবা কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তখন কিন্তু ওই সব সংস্থাকে দায় নিতে হবে। এ কথা আমি রাষ্ট্রপুঞ্জকেও জানিয়ে রেখেছি।’’
আরও পড়ুন: ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার, কোথায় গেল সেই ‘১ কোটি চাকরি’?
আরও পডু়ন: গম্ভীরের ২টি ভোটার কার্ড! ফৌজদারি মামলা আপ প্রার্থীর
তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রসঙ্গে বলেন, “৪০ হাজারের বেশি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। সে বাচ্চাগুলো বড় হচ্ছে। অনাথ মানুষ আছেন। যুবকরা আছেন। ওঁরা যেতে চাইলেও অনেক সংস্থা চায় না। ভাষানচরে সব ধরনের ব্যাবস্থা আছে।”
ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের থাকার বেশ ভাল ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সেখানে রোহিঙ্গাদের যাওয়ার বিষয়ে অনীহা তৈরিতে কিছু এনজিও তৎপর— এই বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে আলোচনায় রয়েছে। শেখ হাসিনা এ দিন চিন-সহ অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের জন্য যে কোনও সহায়তা বা পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দায়িত্ব মায়ানমারকেই নিতে হবে।’’
সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ হাসিনা। —নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার বিএনপি-র নির্বাচিত এক সাংসদ শপথ নিয়েছেন। সে প্রসঙ্গে সরকারের চাপের অভিযোগ এনেছিল বিএনপি। হাসিনা সে বিষয়ে বলেন, ‘‘যাঁরা শপথ নিয়েছেন তাঁরা স্বেচ্ছায় নিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের কোনও চাপ নেই। যাঁরা তাঁদের নির্বাচিত করেছেন সেই জনগণই শপথ নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের চাপ দিচ্ছেন।”
আলোচনায় বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ এলে শেখ হাসিনা জানান, বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক ভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। আদালত দুর্নীতির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাও আওয়ামি লিগ সরকার করেনি। ১০ বছর আগে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বলে জানিয়েছেন হাসিনা।
দুর্নীতির মামলায় এই মুহূর্তে কারাবন্দি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে জল্পনা রয়েছে। সে বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। যেখানে কেউ আবেদনই করেননি, সেখানে আমার মন্তব্য করার কিছু নেই।’’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সব সময়ই উদ্বেগের বিষয়। এমন মন্তব্য করে হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময় থেকেই দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ লেগেই আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উগ্রবাদ সব ধর্মেই আছে। জঙ্গিরা কোনও ধর্মের নয়, তারা ধর্মকে ছাড়িয়ে অন্য কিছুতে বাস করে।’’ হাসিনার মন্তব্য, ‘‘যখন বাংলাদেশ ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়, তখনই ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy