Advertisement
E-Paper

সংঘাত নিয়ে হাসিনা সরকার সংযমের পথে

বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল মামলার রায় নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সংখ্যালঘু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্হার সঙ্গে কয়েক মাস ধরেই শেখ হাসিনা সরকারের সংঘাত চলছে। প্রাথমিক ভাবে দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের পরে সংঘর্ষ-বিরতি ঘটায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪১
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বেনজির ভাবে বিবৃতি জারি করে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ১০ কর্তা-সহ বিচার বিভাগের মোট ২৫ জন কর্মকর্তাকে বদলি করে দিল আইন মন্ত্রক।

বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল মামলার রায় নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সংখ্যালঘু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্হার সঙ্গে কয়েক মাস ধরেই শেখ হাসিনা সরকারের সংঘাত চলছে। প্রাথমিক ভাবে দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের পরে সংঘর্ষ-বিরতি ঘটায়। এই পদে সিন্হার মেয়াদ শেষ হচ্ছে জানুয়ারির শেষ দিনে। এ মাসের ৩ তারিখে সিন্হা রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটি নেন। তার পরে সেই ছুটির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া রওনা হন। কিন্তু বলে যান, ১৪ নভেম্বর দেশে ফিরে তিনি ফের কাজ শুরু করবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সব চেয়ে সিনিয়র বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন নজিরবিহীন ভাবে বিবৃতি জারি করে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার ও অনিয়মের ১১ দফা অভিযোগ আনে। বিবৃতিতে বলা হয়, আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতি এই অভিযোগগুলি নিয়ে সিন্হার সঙ্গে কথা বলেও সন্তোষজনক জবাব পাননি। এর পরে তাঁরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনও বেঞ্চে না-বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের যে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, রবিবার তাঁকে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব আনিসুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীকেও। এই সব গুরুত্বপূর্ণ পদে রবিবার নতুন কাউকে নিয়োগ না করায় আইন মন্ত্রক যে খুবই তড়িঘড়ি বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করলেও সুপ্রিম কোর্টের বেনজির বিবৃতি প্রকাশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সরকার ও শাসক দলের কোনও নেতা-মন্ত্রীকেও এ বিষয়ে মন্তব্য না-করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও অগণতান্ত্রিক শক্তি যাতে এই সংঘাতের সুযোগ নিতে না-পারে, হাসিনা সরকার এখন সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে।

কিন্তু সিন্‌হার দেশে ফিরে ফের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বলছেন— সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি এবং আপিল আদালতের অন্য বিচারপতিরা তাঁর সঙ্গে বেঞ্চে বসতে অস্বীকার করার পরে সিন্‌হার পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে দিল্লি। ২৩ অক্টোবর দু’দিনের সফরে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা আসার কথা। সূত্রের খবর, এই সঙ্কট নিয়ে সুষমা শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে, বাংলাদেশের এই সংঘাত একান্তই অনভিপ্রেত। গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের বিরোধে রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে দুর্বল হয়, তা বিলক্ষণ জানে নয়াদিল্লি। যা ভারতের জন্য একেবারেই শুভ সংকেত নয়। তবে সঙ্গত কারণেই এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছে না সাউথ ব্লক।

Surendra Kumar Sinha Supreme Court Sheikh Hasina শেখ হাসিনা সুরেন্দ্রকুমার সিন্হা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy