শেখ হাসিনা।
চোদ্দো বছর আগে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, দুই মন্ত্রী এবং পুলিশ ও সেনাকর্তাদের আদালত দোষী সাব্যস্ত করার ঘটনাটি ‘ঐতিহাসিক’ বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের মতে, খালেদা জিয়া প্রশাসনের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগসাজশের বিষয়টি এত দিন অভিযোগ আকারে ছিল। এই রায়ে সেটি আইনি মান্যতা পেল। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্তত একটি ঘটনা বিরোধী নেতৃত্বকে নিকেশ করার লক্ষ্যে ‘সরকারি জঙ্গি হামলা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
আদালতে দেওয়া হরকতুল জিহাদি ইসলামি (হুজি)-র দুই শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান ও মৌলানা শেখ আবদুস সালামের জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে সে দিনের গ্রেনেড হামলার চক্রান্ত ও তা রূপায়ণের বিষয়টি। শাসক বিএনপি ও জামাতে ইসলামি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে এই দুই জঙ্গি নেতা হাজির ছিলেন। আদালতে তাঁরা জানিয়েছেন, মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই তাজউদ্দিন নিজেই হুজির অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। পিন্টুর সরকারি বাস ভবনেই হামলার চক্রান্তটি হয়। পরে এই বাড়িতেই গাড়িতে করে গ্রেনেড এনে জঙ্গিদের হাতে তুলে দেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী ও জামাত নেতা আলি আহসান মুজাহিদ একটি বৈঠকে জঙ্গিদের বলেন, দু’পক্ষই চান ইসলামি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। সে কাজে প্রধান বাধা আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা যত দিন বেঁচে থাকবেন, বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব থাকবে। তাই তাঁকে নিকেশ করাটা কর্তব্য।
জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান এজাহারে বলেছেন, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই হামলার ছকটি তৈরি করেছিল। পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার বৈঠকে তাদের পক্ষে হাজির ছিলেন কাশ্মীরের জঙ্গি নেতা আব্দুল মাজেদ ভাট। পরে গ্রেফতারও হন ভাট। এ দিন তাঁকেও প্রাণদণ্ড দিয়েছে আদালত।
দুই হুজি নেতা আদালতে জানিয়েছিলেন, বিএনপি-র দুই এমপি-র বন্দোবস্তে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দফতর ‘হাওয়া ভবন’-এ গিয়ে খালেদা পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। তারেক তাঁদের ‘কাজে’ সব রকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। হুজি নেতাদের বলেন, হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে সব কিছুই তিনি জানেন। তাঁদের আর ‘হাওয়া ভবন’-এ আসার দরকার নেই। মন্ত্রী বাবর ও পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চললেই হবে। প্রসঙ্গত, এই দুই মন্ত্রী তারেকের অনুগত হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
তারেককে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করে বুধবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার আদালত। আর তাঁর অনুগত দুই মন্ত্রীকে প্রাণদণ্ড। আততায়ীরা যাতে হামলা চালিয়ে ভিড়ের মধ্য দিয়ে নিরাপদে পালাতে পারে, তারও পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এক দল পুলিশ ও সেনাকর্তা সে কাজের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদেরও বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy