Advertisement
E-Paper

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের যন্ত্রণা

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস কি সব দেশ পালন করে? না করে না। সেটা দোষের নয়। নিজেদের মাতৃভাষা না থাকলে কী নিয়ে উৎসব করবে? উল্লাস ছড়িয়ে ভাষার মাহাত্ম্য তুলে ধরবে। দুনিয়াকে জানাবে, তাদের ভাষাই সেরা।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২১
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পুরনো বিল্ডিংয়ের সামনে ঐতিহাসিক সভা।

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পুরনো বিল্ডিংয়ের সামনে ঐতিহাসিক সভা।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস কি সব দেশ পালন করে? না করে না। সেটা দোষের নয়। নিজেদের মাতৃভাষা না থাকলে কী নিয়ে উৎসব করবে? উল্লাস ছড়িয়ে ভাষার মাহাত্ম্য তুলে ধরবে। দুনিয়াকে জানাবে, তাদের ভাষাই সেরা। দিনটা তাদের কাছে গুরুত্বহীন, যন্ত্রণারও। ভাষা তো মা। মাতৃহীন সন্তানের ব্যথা ভোলা কঠিন। ভুলতে কতটা পারে সে কথা অন্য। দেশের আর যা সম্পদ আছে তাই নিয়ে ব্যস্ত হলেও শূন্যতা ঢাকা যায় না। দুটো দেশকে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি খুব ভালবাসে। একটি ব্রাজিল অন্যটি আর্জেন্তিনা। দুনিয়াকে ফুটবল শেখায় তারা। তাদের ভাষা সংস্কৃতি বলতে ফুটবলই। ফুটবল ছাড়া আর কোনও ভাষা তারা জানে না। তাদের অর্থনৈতিক বিকাশ সমীহ করার মতো। তা সত্ত্বেও হৃদয় মরুভূমি। বিশেষ দিনটিতে মা হারা থাকে। মাতৃভাষায় কথা বলার সুযোগ নেই। ব্রাজিলের ভাষা পর্তুগিজ। আজেন্তিনার স্প্যানিশ।

বিশ্বে সব থেকে বেশি মানুষ কথা বলে চিনা বা মান্দারিনে। সাড়ে ৯৫ কোটি। ১৪.৪ শতাংশ। চিন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে চলে ভাষাটা। দ্বিতীয় স্থানে স্পেনীয়, তৃতীয় ইংরেজি। ভাষাটা প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে প্রচলিত বহু দেশে। ইংরেজিকে যোগাযোগের প্রধান ভাষা হিসেবে মানতে চায়নি অনেকেই। উল্টে ভাষাটার আধিপত্য খর্ব করতে সক্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্সে ইংরেজির জায়গা সঙ্কুচিত। ফরাসিদের ধারণা, ইংরেজদের থেকে তাদের ভাষা সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। ইংরেজির প্রভাবে ফরাসিরা কৌলিন্য খোয়াতে রাজি নয়। ফ্রান্স যা-ই বলুক, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই ইংরেজি অন্যতম সরকারি ভাষা। সেটা বাদ দেওয়ার কথা ভাবতে পারে না। তারা মনে করে, বিশ্ব নাগরিক হতে হলে ইংরেজি ছাড়া গতি নেই।

ইংরেজির বেশি প্রচলন আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ার্ল্যান্ডে। সব দেশে ইংরেজির রূপ এক নয়। নির্দিষ্ট দেশের বৈশিষ্ট্যের ছাপ ভাষায়। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ইংরেজিকে চালাচ্ছে তাদের মতো। মিল কম, গরমিল বেশি।

আরও পড়ুন: একুশ মানে বাঙালির শেকড় আর সাহস

বিশ্বের চার নম্বর ভাষা হিন্দি। ভারতের প্রধান ভাষা। এ ভাষায় কথা বলে ৩১ কোটি, ৪.৭ শতাংশ। দিনে দিনে হিন্দির বিবর্তন বিস্ময়কর। বিশেষ করে উর্দুর সংমিশ্রণে সাহিত্য সমৃদ্ধ। হিন্দি ছবির জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশে দেশে তার আদর। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে রমরমিয়ে চলছে হিন্দি ছবি।

আরবি ভাষার প্রভাবও কম নয়। ২৯.৫ কোটির ভাষা আরবি। ৪.৪৩ শতাংশ আরবিতে স্বচ্ছন্দ। ষষ্ঠ পর্তুগিজ। ২১.৫ কোটির ভাষা। পর্তুগিজকে আপন করেছে ৩.২৭ শতাংশ। যার মধ্যে আছে অ্যাঙ্গোলা, ব্রাজিল, কেপ ভার্দে, পূর্ব টিমোর, গিনি বিসাউ, ম্যাকাও, মোজাম্বিক, পর্তুগাল, সাওটোম, প্রিন্সিপ।

রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভাষার যে স্থান নির্মাণ করেছে তার থেকে বাংলার আরও ওপরে থাকার কথা। বাংলাকে সাতে নামিয়ে আনার কোনও মানে নেই। বাংলাদেশে ২০ কোটি, পশ্চিমবঙ্গে ১০ কোটি, ত্রিপুরাতে ৫০ লাখ মিলিয়ে সাড়ে ৩০ কোটির ভাষা বাংলা। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি বিশ্বের নজর কেড়েছে, ১৯১৩-তে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাওয়ার পরই। বাংলার চেয়ে ইউরোপের ছোট ছোট ভাষার কদর বেশি অর্থনৈতিক কারণে। যে জাতির অর্থনৈতিক জোর যত বেশি তাদের ভাষার দিকে বিশ্ব ঝুঁকবে তত। যে ভাবেই হোক বাঙালিকে প্রথম বিশ্বের সমতুল্য হতেই হবে। নইলে এমন গভীর ভাষা যথার্থ মর্যাদা পাবে না।

International mother language day 21st February
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy