Advertisement
E-Paper

বয়স্কদের বাড়িতেই দেখভালের চাহিদা দরজা খুলছে নতুন লগ্নির

‘সিলভার সুনামি’। ক্রমশ বাড়তে থাকা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যার আর এক নাম। ভারতে এই সংখ্যা আপাতত ১১ কোটি। আর এই সিলভার সুনামি খুলে দিচ্ছে বয়স্কদের দেখাশোনাকে ঘিরে নতুন এক বাজার ‘হোম হেলথকেয়ার’। বাজারের টানে তৈরি হচ্ছে স্টার্ট-আপ থেকে শুরু করে বড় সংস্থার শাখা।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:১৭

‘সিলভার সুনামি’। ক্রমশ বাড়তে থাকা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যার আর এক নাম।

ভারতে এই সংখ্যা আপাতত ১১ কোটি। আর এই সিলভার সুনামি খুলে দিচ্ছে বয়স্কদের দেখাশোনাকে ঘিরে নতুন এক বাজার ‘হোম হেলথকেয়ার’। বাজারের টানে তৈরি হচ্ছে স্টার্ট-আপ থেকে শুরু করে বড় সংস্থার শাখা।

সমস্যার সূত্রপাত বয়স্কদের একা থাকার কারণে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তানেরা কাজের সূত্রে অন্য শহরে বা দেশে থাকেন। ফলে বাবা-মায়ের দেখাশোনা করার সুযোগ নেই বললেই চলে। বা যাঁরা এক শহরেও আছেন, তাঁদের পক্ষেও সময়ের টানাটানির কারণে এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নাজেহাল দশা হয়।

ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ বা সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে দৌড়নো প্রায়শই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত বয়স্কদের জন্য, যাঁদের অনেকেই একলা চলাফেরায় স্বচ্ছন্দ্য নন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত চিকিৎসককে ‘কল’ দিয়ে বাড়িতে দেখানোর যে-সুবিধা ছিল, এখন সেটাও নেই। অন্তত বড় ডাক্তারদের ক্ষেত্রে তা একেবারেই প্রযোজ্য নয়। আর যদিও বা সম্ভব হয়, সেই আর্থিক সামর্থ্য মধ্যবিত্তের নেই বললেই চলে।

বিদেশে এই সমস্যার সমাধান সমাধান বহু দিনই দিচ্ছে হোম হেলথকেয়ার পরিষেবা। অর্থাত্‌ বাড়িতে রেখে রোগীর চিকিত্‌সা। চিকিত্‌সক এসে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে পেশাদার নার্স এসে সেবা করবেন। এ ছাড়াও ইসিজি, এক্স-রে-সহ অন্যান্য ছোট মাপের পরীক্ষা বাড়িতেই হবে। থাকবে ফিজিওথেরাপি ও দীর্ঘ মেয়াদি অসুখের সেবা-শুশ্রূষার ব্যবস্থা।

ভারতে এখনও এ ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা নেহাতই কম। চাহিদা অবশ্য আকাশছোঁয়া। মাত্র কয়েকটি শহরে এই সুবিধা পাওয়া যায়। কলকাতা শহরেও চাহিদার তুলনায় এই পরিষেবা প্রায় নেই বললেই চলে।

তবে এরই মধ্যে গত বছর কলকাতায় পা রেখেছে পোর্টিয়া মেডিক্যাল। দিল্লি, মুম্বই, পুণে, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের পরে তাদের গন্তব্য কলকাতা। তবে পরিষেবার পরিধি চিকিৎসা ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ রোগীর বাড়ি এসে ডাক্তার দেখে যাবেন। সমস্যা হলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। ইসিজি, এক্স-রে-সহ কিছু ছোট মাপের পরীক্ষা হবে। পেশাদার নার্স নিয়োগ করার সুবিধাও থাকবে।

আর এক ধাপ এগিয়ে হেলথকেয়ার ও হোমকেয়ার পরিষেবা দিচ্ছে পাঁচ বাঙালির সংস্থা ট্রাইবেকা কেয়ার। কর্মসূত্রে এই পাঁচ জনের প্রত্যেকেই বিদেশে থাকেন বা থেকেছেন এবং বয়স্ক বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য-সহ দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছেন। নিজেরা কাছে না-থাকার কারণে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের হাত ধরেছেন। এ কথা জানিয়ে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রতীপ সেন বলেন, ‘‘প্রবাসী সন্তানের বাবা-মা বা নিঃসন্তান বয়স্ক মানুষ সামান্য কাজের জন্যও অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। শুধু চিকিৎসা নয়। বাড়ির অন্যান্য সমস্যা নিয়েও আলোচনা করার প্রয়োজন হয় অনেক সময়ে। ফলে এই পরিষেবা বাবদ দাম দিতেও কেউ পিছপা হবেন না। ব্যবসার সম্ভাবনাও তাই আকাশছোঁয়া।’’

বর্তমানে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাতেই পরিষেবা দিচ্ছে এই সংস্থা। শীঘ্রই দিল্লিতেও পা রাখছে তারা। প্রতীপবাবুর দাবি, তিন বছরে ৭০ কোটি টাকার ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলবে সংস্থা। ২৫% হারে বাড়তে থাকা ব্যবসা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগ পুঁজির জন্যও আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। ডাক্তার, নার্স ছাড়া বিভিন্ন চিকিৎসার সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করছে সংস্থা। রোগীর বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোর পরিষেবাও রয়েছে।

বিশ্ব জুড়ে এ ধরনের পরিষেবার বাজার বাড়ছে। ২০১৫ সালের মধ্যে সেই অঙ্ক ৩৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যাবে। দেরিতে হলেও এই তালিকায় ঢুকে পড়েছে এ দেশ। বিশেষজ্ঞ সংস্থা ফ্রস্ট অ্যান্ড সালিভানের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবা শিল্পের আয়তন ১৬ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, স্বাস্থ্যবিমা-সহ এই সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যবসা। এবং অবশ্যই রয়েছে হোম হেলথকেয়ার।

আপাতত এই বাজারের মাপ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর দৌলতেই এ বার হোম হেলথকেয়ারও লগ্নি টানতে শুরু করেছে। চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়া হোম হেলথকেয়ার সংস্থার ২৬% কিনেছে মার্কিন সংস্থা বায়াদা। ব্রিটেনের সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভারতীয় সংস্থা ডাবরও এই ব্যবসায় পা রেখেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ ধরনের সংস্থার সংখ্যা আরও বাড়বে ভারতে। কারণ ২০২৫-এর মধ্যে প্রতি পাঁচ ভারতীয়ের মধ্যে থাকবেন একজন ষাটোর্ধ্ব। ২০৫০-এ মোট জনসংখ্যার ১৯% হবেন প্রবীণ নাগরিক।

home health care Doctor kolkata delohi mumbai pune chennai portea medical gagri guha thakurata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy