Advertisement
১৮ মে ২০২৪

টাকা নিয়ে আধার, রমরমা ব্যবসা শহরে

সর্ষের মধ্যেই ভূত।ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভর্তুকি পেতে অনিয়ম রুখতে ক্রমেই বাধ্যতামূলক হচ্ছে আধার কার্ডের ব্যবহার। আর, সেই আধারকে ঘিরেই এ বার হদিস মিলল বেআইনি ব্যবসা ফাঁদার।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

সর্ষের মধ্যেই ভূত।

ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভর্তুকি পেতে অনিয়ম রুখতে ক্রমেই বাধ্যতামূলক হচ্ছে আধার কার্ডের ব্যবহার। আর, সেই আধারকে ঘিরেই এ বার হদিস মিলল বেআইনি ব্যবসা ফাঁদার।

টাকার বিনিময়ে আধার কার্ড করে দিতে রাজ্য জুড়েই ব্যাঙের ছাতার মতো বেআইনি সংস্থা গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। আইনি পথে এই পরিচয়পত্র বিলিতে সরকারি স্তরে গাফিলতিকেই এর জন্য দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। কারণ, সরকার স্বীকৃত বিভিন্ন শিবিরে বহু বার ছবি তুললেও মেলেনি তাঁদের আধার কার্ড। আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই) ও রাজ্য প্রশাসন অবশ্য স্পষ্ট জানাচ্ছে, ছবি তোলা কিংবা আধারের অবস্থা (স্টেটাস) জানার জন্য এক পয়সাও দেওয়ার কথা নয় আমজনতার।

দমদমের একটি দোকান খোলাখুলি বিজ্ঞাপন টানিয়েই এই ব্যবসায় নেমেছে। ৩০০ টাকা খরচ করলেই সেখান থেকে দিন সাতেকে মিলছে আধার-কার্ড। আর ৩ হাজার খরচ করলে বাড়ি বসেই মিলবে সেই সুবিধা। দমদম স্টেশন থেকে বেরিয়ে এমসি গার্ডেনের দিকে রাস্তার পাশেই বিজ্ঞাপন ঝুলছে, ‘আধার কার্ড/নূতন ও সংশোধন/ফ্লেক্স প্রিন্টিং’।

সরকারি শিবিরে ছবি তুলেও আধার হয়নি, এ কথা শুনে দোকানের কর্মীর সাফ জবাব, ‘‘টাকা দেননি বলেই হয়নি। আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি এ সব সরকারি লোকেরা ঠিক মতো তোলে না।’’ তিনি জানান, আগাম টাকা জমা দিতে হবে। তবে রসিদ মিলবে না। ছবি তোলার দিনক্ষণ পরে ফোনে জানিয়ে দেবেন তাঁরা। টেবিলে রাখা একগুচ্ছ নতুন আধার কার্ড দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘‘সরকার স্বীকৃত ‘এজেন্সি’-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই আমরা ব্যবসা চালাচ্ছি।’’

পূর্ব সিঁথির বাসিন্দা অঞ্জনা চৌধুরিও জানালেন নিজের অভিজ্ঞতা। বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে বাইরে বেরোনো সমস্যার বলে ওই দোকানে যোগাযোগ করেন। তিনি বললেন, ‘‘বাড়িতে আসার জন্য ওরা ৩ হাজার টাকা চায়।’’ নাগেরবাজারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি জায়গায় তিন বার গিয়েও আমার স্ত্রীর আধার হয়নি। তাই টাকা দিয়েই এ সব জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ।’’

দমদমের ঘটনা জানার পরে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘এ ভাবে টাকা নিয়ে আধার কার্ড করা বেআইনি। নির্দিষ্ট খবর পেলেই সব বাজেয়াপ্ত করে গ্রেফতার করব।’’ নবান্নে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এই সংক্রান্ত ‘সেল’-এর যুগ্ম সচিব প্রিয়তু মণ্ডলও ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা ‘পাবলিক নোটিস’-এ বলেছেন, ‘এনরোলমেন্ট’ নিখরচায় হয়। এ জন্য ‘অপারেটর’ অর্থ চাইতে পারে না। এমন ঘটনা ঘটলে mail.wbaadhaar@gmail.com-এ ই-মেলে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারেন। তবে ইউআইডিএআই জানিয়েছে, ই-আধার ছাপানো বা আধারে তথ্য সংযোজন/সংশোধনের জন্য ১০ থেকে সর্বাধিক ২৫ টাকা পর্যন্ত গ্রাহকদের দিতে হবে। এ ছাড়া ১৯৪৭-এই টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করলে আধার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব মিলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhar Card Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE