গত জানুয়ারি থেকে জুনে কলকাতা-সহ দেশের সাতটি বড় শহরে কম দামি বাড়ির বিক্রি (৪০ লক্ষ টাকার কম, অ্যাফর্ডেবল হাউসিং) ১৮% কমল। আবাসন ক্ষেত্রের পরামর্শদাতা সংস্থা অ্যানারক এই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, অতিমারির সময় থেকেই বাড়ির বাজারের জোগান ও চাহিদার ধরন বদলে গিয়েছে। তা যে এখনও আগের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি, তারই প্রমাণ এই রিপোর্ট।
অ্যানারকের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে কলকাতা, দিল্লি ও রাজধানী অঞ্চল, মুম্বই মেট্রোপলিটান অঞ্চল, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং পুণেতে কম দামি বাড়ি-ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৪৬,৬৫০টি। যা আগের বছরের একই সময়ে ৫৭,০৬০ ছিল। অথচ একই সময়ে সব ধরনের আবাসন বিক্রির সংখ্যা গত বছরের ১,৮৪,০০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২,২৮,৮৬০টি। অর্থাৎ সমস্ত আবাসনের মধ্যে কম দামি বাড়ির অংশীদারি ৩১% থেকে নেমেছে ২০ শতাংশে। কলকাতায় ২০২২-এর জানুয়ারি-জুনে ৫৪০০টি কম দামের বাড়ি বিক্রি হয়েছিল। এ বছর হয়েছে ৪৯৯০টি।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, অতিমারির পরে বাড়ি থেকে কাজ এবং তার ফলে বাড়ির চাহিদা বাড়লেও বিক্রিবাটা আদতে বেড়েছে বেশি দামি বাড়ির। কারণ, তুলনায় কম দামেরগুলির মূল ক্রেতা যে মধ্যবিত্ত বা সাধারণ রোজগেরে মানুষ, তাঁদের অনেকেরই হাতে আর বাড়তি পুঁজি নেই। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর কারণ ওই শ্রেণির বড় অংশের আয় করোনার সময়ে ধাক্কা খেয়েছে। সম্ভাব্য ক্রেতাদের একটা বড় অংশকে আরও কোণঠাসা করেছে মূল্যবৃদ্ধি এবং ঋণের সুদ বৃদ্ধি। ফলে বাড়ি কেনার পরিকল্পনা পিছিয়ে দিতে হয়েছে তাঁদের। এই বিষয়টির কথা উল্লেখ করে অ্যানারকের চেয়ারম্যান অনুজ পুরির আরও ব্যাখ্যা, ‘‘জমির দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। সেই সঙ্গে মাথা তুলেছে অন্যান্য কাঁচামালের খরচ। ফলে বেশি দামে জমি কিনে সস্তায় বাড়ি বিক্রি ব্যবসায়িক ভাবেও আকর্ষণীয় হচ্ছে না।’’ এর প্রতিফলন রয়েছে রিপোর্টেও। আলোচ্য সময়ে সমস্ত নতুন আবাসন প্রকল্পের মধ্যেও কম দামি বাড়ির অংশীদারি ২৩% থেকে নেমেছে ১৮ শতাংশে।
সিগনেচার গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা প্রদীপ আগরওয়ালও জানাচ্ছেন, সম্প্রতি হরিয়ানা সরকারের আবাসন নীতি সংস্কারের ফলে সে রাজ্যে কম দামি বাড়ির বাজারের হাল কিছুটা ফিরেছে। অন্যান্য রাজ্যও সেই নীতিকে অনুসরণ করতে পারে। অ্যাম্বিয়ন্স গোষ্ঠীর কর্তা অঙ্কুশ কলের আবার দাবি, যে সমস্ত পরিবারে দু’জন উপার্জন করেন তাঁরা দামি ফ্ল্যাট-বাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। সেটাও আবাসন ক্ষেত্রে বিক্রিবাটার চরিত্র বদলে সাহায্য করছে। ব্রোকারেজ সংস্থা ইনফ্রামন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গরভিট তিওয়ারির বক্তব্য, ইদানীং সম্ভাব্য ক্রেতাদের খোঁজখবর নেওয়ার ঝোঁক কিছুটা বেড়েছে। ফলে আগামী মাসগুলিতে বিক্রিবাটা বাড়তে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)