মেঘ না-চাইতেই জল। শিল্পমহল ও কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি ছিল ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর। কিন্তু শিল্প ও সাধারণ মানুষের হাতে বাড়তি নগদ জুগিয়ে আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে রঘুরাম রাজন প্রত্যাশা ছাপিয়ে এক ধাক্কায় রেপো রেট (যে-হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার নেয়) ছাঁটাই করলেন ৫০ বেসিস পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে তা গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি হারে কমালেন আরবিআই গভর্নর। ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে তা নেমে এল ৬.৭৫ শতাংশে। এটা অবশ্যই রাজনের সহসী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। এই নিয়ে চলতি বছরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মোট ১২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমাল। মূল্যবৃদ্ধি নেমে আসায় এই পথে হাঁটলেও একই সঙ্গে রাজনের হুঁশিয়ারি, সেপ্টেম্বর থেকে কয়েক মাসের জন্য দাম বাড়বে। কারণ, আগের বছরের চড়া হারের ভিত্তিতে হিসাব করার কারণেই মূল্যবৃদ্ধি এতটা নেমেছে, যার প্রভাব এর পর কেটে যাবে। জানুয়ারির মধ্যে ৫.৮% মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক, আগে যা ছিল ৬%। লক্ষ্য আগামী অর্থবর্ষে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। চলতি অর্থবর্ষের জন্য অবশ্য ৭.৪% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন রাজন। আগে তা ছিল ৭.৬%।
সুদ কমিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকেও পাল্টা চাপে ফেলে দিলেন রঘুরাম রাজন। এত দিন কেন্দ্র তাঁর উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল সুদ কমানোর জন্য। এ বার সুদ কমিয়েই তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এর পর বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও যাতে তার সুবিধা ঋণগ্রহীতাদের দিতে পারে, সে ব্যাপারটি কেন্দ্রকেই দেখতে হবে।
এ দিন সেনসেক্স প্রথমে কমলেও ঋণনীতি ঘোষণা হওয়ার পর পরই এক লাফে বাড়ে ৭৫০ পয়েন্ট। দিনের শেষে অবশ্য উত্থান দাঁড়ায় ১৬২ পয়েন্ট। অন্য দিকে, দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক এসবিআই এক ধাক্কায় তাদের ন্যূনতম সুদের হার বা বেস রেট ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করেছে ৯.৩ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ৫ অক্টোবর থেকে। এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তিন দফায় ২৫ করে মোট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমালেও স্টেট ব্যাঙ্ক এক ধাক্কায় এতটা সুদের হার কমায়নি। অন্য ব্যাঙ্কগুলিও একই পথে হাঁটবে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। সুদ কমিয়েছে অন্ধ্র ব্যাঙ্কও। ২৫ বেসিস পয়েন্টেরও বেশি সুদ কমানোর আভাস দিয়েছেন দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের এমডি ছন্দা কোছর। সুদ কমানোর ইঙ্গিত দেন অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা শিখা শর্মা, এইচিডিএফসি ব্যাঙ্কের এমডি আদিত্য পুরী, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় আর্য। বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, ‘‘রাজনের কাছে আমরা এর বেশি কিছু চাইতে পারতাম না।’’ তবে বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে ব্যাঙ্কের তহবিল সংগ্রহের খরচ, অর্থাৎ আমানতে সুদ কী রকম, তার উপর। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অরুন্ধতী ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তাঁরা আমানতেও সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাচ্ছেন।
সুদ কমায় বিশেষ খুশি শিল্পমহল। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিল্পকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানোর প্রয়োজনীয়তা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোঝায় আমরা খুশি।’’ এটিকে ‘‘সুন্দর চমক’’ আখ্যা দিয়েছেন অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অনুপম শাহ বলেন, ‘‘রফতানি শিল্পের জন্য সুদে ভর্তুকির ব্যবস্থা জরুরি। এর জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলব।’’
নির্মাণ শিল্প সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিশির বৈজল বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে নির্মাণ শিল্পের এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।’’ আর এক রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডস ইন্ডিয়া-র প্রধান সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘সুদ কমলে সংস্থা ও ক্রেতা, দু’পক্ষই লাভবান হবেন।’’
গাড়ি ঋণের ক্ষেত্রেও সুদের হার কিছুটা কমবে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলে আশা। তবে যতক্ষণ না এসবিআই-এর মতো বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাবে, ততক্ষণ গাড়ি কেনার খরচ কমবে না। তাই অন্য ব্যাঙ্কগুলি কী সিদ্ধান্ত নেয় সে দিকেই তাকিয়ে তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy