Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বাজারের চোখ তেলের দাম ও বর্ষায়

ভালর পাল্লা ভারী, তবু বহাল ওঠানামা

নিয়মিত ওঠাপড়ার জেরে সেনসেক্স ঘোরাফেরা করছে ৩৪-৩৫ হাজারের মধ্যে। তবে মাঝারি (মিড ক্যাপ) ও ছোট (স্মল ক্যাপ) সংস্থাগুলি গত এক মাসে বেশ কিছুটা চুপসে গিয়েছে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০৩:২৩
Share: Save:

এখন সূচকের অবস্থা যেন তেল মাখা বাঁশে বাঁদরের ওঠানামার মতো। কখনও কোনও ভাল খবরে তেতে তা উঠছে, তো পরক্ষণেই প্রতিকূল ঘটনার ইন্ধনে পিছলে যাচ্ছে নীচে। আর এ ভাবে নিয়মিত ওঠাপড়ার জেরে সেনসেক্স ঘোরাফেরা করছে ৩৪-৩৫ হাজারের মধ্যে। তবে মাঝারি (মিড ক্যাপ) ও ছোট (স্মল ক্যাপ) সংস্থাগুলি গত এক মাসে বেশ কিছুটা চুপসে গিয়েছে। অনেকের শেয়ার দর নেমেছে ৩০ থেকে ৬০% পর্যন্ত। ফলে ওই দুই ক্ষেত্রে লগ্নি করা ফান্ডগুলির তহবিল আগের দু’বছরে ভাল রকম বেড়ে ওঠার পরে সম্প্রতি বেশ খানিকটা কমেছে।

হালে যে সব ভাল খবর বাজারকে খুশি করেছে, তার মধ্যে অন্যতম—

• বর্ষা আসার বার্তা। স্বাভাবিক সময়ের তিন দিন আগেই তা পৌঁছেছে কেরল ও কর্নাটকে। অর্থাৎ ঠিক সময়ে বা তারও আগে মরসুমের বৃষ্টি শুরু হতে চলেছে ওড়িশা ও বাংলায়। দিল্লির আবহাওয়া দফতরের খবর, এ বার ঝেঁপে বৃষ্টি হবে জুলাই জুড়ে। পুরো মরসুমের নিরিখে বর্ষা হবে স্বাভাবিক। ফলে আশা চাষবাস ভাল হওয়ারও।

• ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে প্রত্যাশা ছাপিয়ে বৃদ্ধির হার ৭.৭ শতাংশে পৌঁছনো। এর ফলে চিনকে বেশ অনেকখানি পিছনে ফেলে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা ফের ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত। যদিও পুরো আর্থিক বছরে তা থমকে গেল ৬.৭ শতাংশে। ৭ শতাংশেরও নীচে। আশার কথা, শেষ তিন মাসে নির্মাণ শিল্প বেড়েছে ১১.৫%, ভোগ্যপণ্য ৬.৭%, কৃষি ৪.৫% হারে। যা ইঙ্গিত দেয়, নোট বাতিল ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

• এপ্রিলে পরিকাঠামোর ৪.৭% বৃদ্ধি। মার্চে ছিল ৪.৪%।

• রফতানি ২০% পর্যন্ত বেড়ে ৩৫,০০০ কোটি ডলার ছোঁয়ার আশা।

আতসকাচে অর্থনীতি

• আর্থিক বৃদ্ধি ৭.৭% (জানুয়ারি-মার্চ)

• সেনসেক্স ৩৫,২২৭

• নিফ্‌টি ১০,৬৯৬

• স্টেট ব্যাঙ্কে মেয়াদি আমানতে সুদ ৬.৬৫%

• গৃহঋণে ন্যূনতম সুদ ৮.৩৫%

• পেট্রল ৮০.৬০ টাকা

• ডিজেল ৭১.৫২ টাকা

• পাকা সোনা ৩১,১৯০ টাকা

• দেশে যাত্রিগাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি (এপ্রিলে ৭.৫% সিয়ামের হিসেব)

অর্থনীতি যে ঘুরছে, তার ইঙ্গিত আছে গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিক কিছু সংস্থার আর্থিক ফলেও। ব্যাঙ্কিং শিল্পকে বাদ দিলে অন্যান্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রই তেমন খারাপ করেনি। তাদের উৎপাদন, বিক্রি ও মুনাফা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ভাল ফল প্রকাশ করা সংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওএনজিসি, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা, স্টিল অথরিটি ইত্যাদি। তবে কিছুটা হতাশ করেছে কোল ইন্ডিয়া।

অন্য দিকে, দেশ ও বাজারকে ধাক্কা দিয়েছে তেল ও গ্যাসের দামের নাগাড়ে বৃদ্ধি। এতে চাপ তৈরি হয়েছে শিল্প ও পণ্যের দামে। ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে পেট্রোপণ্য নির্ভর রং ও বিমান পরিবহণ শিল্পে। পণ্যমূল্য দ্রুত গতিতে বেড়ে ওঠায় জোরালো সওয়াল উঠেছে সুদ বাড়ানোর। পরিস্থিতির নিরিখে কিছু ব্যাঙ্ক ঋণে সুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে। সুদ বাড়ছে জমাতেও। আশা, জুলাই থেকে সুদ বাড়তে পারে কোনও কোনও ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পেও।

চিন্তার কারণ বিশ্ব বাজার অশোধিত তেলের দামও। এতে বাড়ছে ভারতের তেল আমদানির খরচ। সঙ্কুচিত হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। বেড়েছে ডলারের দাম। শেয়ার ও বন্ড বেচে মোটা টাকা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। বহু ভাল খবর থাকা সত্ত্বেও যে কারণে বাজার চাঙ্গা হতে পারছে না।

তবে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের জোগান বাড়লে ও দাম কমলে তা ভারতের কাছে বড় আশীর্বাদ হবে। সে ক্ষেত্রে বাজার বেয়ারদের দূরে ঠেলে বুলদের জায়গা করে দিতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market Sensex Indian Economy Finance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE