Advertisement
E-Paper

‘কয়েক কোটি চাকরির সুযোগ হয়েছে’! বাজেটে কাজের বার্তা এলেও রাজ্যে কমল ছোট শিল্পের বরাদ্দ

মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘‘২০২১ সাল পর্যন্ত ৯২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র থেকে মুক্ত করা গিয়েছে। এখন ১.৭২ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে মুক্তিলাভ করেছেন।’’

বাজেট পরবর্তী সংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায়।

বাজেট পরবর্তী সংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায়। ছবি: পিটিআই।

অঙ্কুর সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৬
Share
Save

বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজ তৈরির কথা বলেছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট-বক্তৃতায় অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের গলাতেও শোনা গেল একই সুর। বললেন, ‘‘বর্তমানে দেশে বেকারত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। সেখানে রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২ কোটির বেশি কাজ তৈরি হয়েছে। ফলে বেকারত্বের হার কমে গিয়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি।’’ বস্তুত, এ দিন চন্দ্রিমার বক্তব্যের শুরুতেই ছিল কর্মসংস্থানের বার্তা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘জীবিকা সৃষ্টি আমাদের উন্নয়নের মডেলের কেন্দ্র বিন্দুতেই রয়েছে।’’

পরে মুখ্যমন্ত্রীও দাবি করেছেন, ‘‘২০২১ সাল পর্যন্ত ৯২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র থেকে মুক্ত করা গিয়েছে। এখন ১.৭২ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে মুক্তিলাভ করেছেন।’’ সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারের বার্তা, রাজ্যের বিগত শিল্প সম্মেলনগুলি থেকে যে বরাদ্দ প্রস্তাব এসেছে, তার বেশির ভাগই কার্যকর হয়েছে। তার সমান্তরালে কর্মসংস্থান হচ্ছে। মমতার কথায়, ‘‘এই বাজেটের দিশা— সমাজের সকলের জন্য কর্ম সৃষ্টি। যাতে কারও কাছে কাউকে হাত পাততে না হয়।’’

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, গত ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট ঘোষণার পরে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় বাজেটে কর্মসংস্থানের দিশা কই? আর এ দিন রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, এটি ‘বেকার বিরোধী’ বাজেট। রাজ্যে কর্মহীন মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানের কোনও দিশা নেই। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যে কয়েক কোটি চাকরির সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে ৭৫ হাজারের বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি চালু হলে সেখানে এক লক্ষের বেশি মানুষের কাজ হতে পারে। এ ছাড়াও, চর্ম ক্ষেত্রে সাড়ে সাত লক্ষ জন কাজ পেয়েছেন।’’

বিরোধী শিবিরের অনেকেরই অভিযোগ, সরকার যা-ই বলুক, কর্মসংস্থান নিয়ে রাজ্যের বার্তা খুব একটা জোরালো নয়। কারণ, বড় ও ছোট শিল্পের মধ্যে একমাত্র চা শিল্প ভিত্তিক পর্যটনে ৭০০০ জনের বেশি কাজ হওয়ার কথা জানিয়েছেন চন্দ্রিমা। বাকি কোথাও সে ভাবে সরাসরি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কথা নেই। এমনকি যে ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প নিয়ে বড়াই করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, তাতেও বরাদ্দ পরের অর্থবর্ষে
কমানো হয়েছে। অথচ ওটাই কাজ তৈরির অন্যতম বড় জায়গা। ফলে বাজেটে তথাকথিত কর্মসংস্থানের ঘোষণা খুবই সীমিত। যদিও অভিযোগ মানতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, কর্মশ্রীর মাধ্যমে রাজ্যে ৬১ কোটি কর্মদিবস তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যে কাজ না থাকলে এই বিরাট পরিমাণ কর্মদিবস তৈরি সম্ভব নয় কখনওই।

রাজ্যের ছ’টি অর্থনৈতিক করিডরের উল্লেখ করেও মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্থানের হিসেব দিয়েছেন। তিনি জানান, এই করিডর চালু হয়ে গেলে সেগুলির দু’পাশে বহু শিল্প হবে। তখন বাংলার ছবিটাই বদলে যাবে। এই ছ’টি করিডর হল— রঘুনাথপুর-তাজপুর, ডানকুনি-ঝাড়গ্রাম, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-কোচবিহার, খড়্গপুর-মোরগ্রাম এবং গুরুডি- পুরুলিয়া-জোকা। এর মধ্যে ৪টির জন্য প্রাথমিক ভাবে ৪৪০০ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, করিডর তৈরি যত এগোবে, তত তৈরি হতে থাকবে কাজ।

এ ছাড়াও, অমৃতসর থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ইস্টার্ন ফ্রেট করিডরের আরও প্রসারে রঘুনাথপুরে ৭২,০০০ কোটি টাকা খরচে রাজ্য জঙ্গল সুন্দরী কর্মনগরী গড়ছে। এই শিল্পতালুকে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলেও দাবি করেছে সরকার। তবে প্রকল্পটির কথা বলতে গিয়ে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ‘‘এ সব মিথ্যে কথা। যে ডেউচার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত পাথর আছে। সেখানে কয়লা নেই। ওই পাথর তুলে বিক্রি করবে। ফলে কর্মসংস্থানের জন্য যা বলা হচ্ছে, সব মিথ্যে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BGBS Small Industries

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}