পশ্চিমবঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ বিশ বাঁও জলে। তবে এ বার সেই পথে হাঁটতে চলেছে প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা। সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘আইফরেস্ট’ আয়োজিত ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ইন ইস্টার্ন স্টেটস’ অনুষ্ঠানের ফাঁকে এ কথা জানান গ্রিড কর্পোরেশন অব ওড়িশা-র এমডি সত্যপ্রিয় রথ। তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কোথায় হবে, উৎপাদন ক্ষমতা কেমন হবে, সে সব চূড়ান্ত হয়নি।’’ ওড়িশার বিদ্যুৎকর্তারা বলছেন, নবীন পট্টনায়কের আমলে এটি তৈরিতে রাজ্য সরকারের সম্মতি ছিল না। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ এসেছে। সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।
অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির তৎপরতা শুরু হয়েছিল ১৬ বছর আগে। পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে ৬০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি তৈরিতে সরকারি ছাড়পত্র মিলেছিল। সূত্রের খবর, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু প্রকল্পে বাধা দেন সেই সময়কার বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং পরিবেশ কর্মীদের একাংশ। ফলে তা স্থগিত হয়ে যায়। প্রকল্পটির সমীক্ষায় জড়িত কর্তারা বলছেন, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি করে জায়গায় সমীক্ষা করা হয়েছিল। সবচেয়ে উপযুক্ত ছিল হরিপুর-ই।
ওড়িশা এখন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে (সৌরবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি) জোর দিচ্ছে। গ্রিডকো কর্তারা জানান, সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে নানা প্রকল্প এনেছেন তাঁরা। ভারী শিল্প সংস্থাগুলিকেও এ ব্যাপারে সাহায্য করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা উদ্যোগী হয়েছেন পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে। তাঁদের মতে, পরমাণু প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক বেশি পরিমাণে এবং নিরন্তর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তবে এ নিয়ে নিয়ে জনমানসে আশঙ্কা আছে। তাই প্রকল্প শুরুর আগে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’ (এনপিসিআইএল)-র অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনুতোষ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির আগে নিয়ম মেনে প্রচুর সমীক্ষা করতে হয়। উপযুক্ত জায়গা বাছাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় পরমাণু শক্তি দফতরের সমীক্ষক দল আসে। তাতে ভূতত্ত্ববিদ, পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার-সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞেরা থাকেন। কোথায় কেন্দ্র হবে, সেখানে ভূস্তরের গঠন কেমন, কোনও চ্যুতি (ফল্টলাইন) আছে কি না, ভূমিকম্পের আশঙ্কা, জলের উৎস, কাছে সমুদ এবং ঘন জনবসতি আছে কিনা, জমি অধিগ্রহণ করতে হলে কত লোককে স্থানান্তর করতে হবে ইত্যাদি খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ওড়িশার ক্ষেত্রেও তা হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)