গত লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের (এনএসও) ফাঁস হওয়া রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল, মোদী সরকারের আমলে বেকারত্বের হার ভেঙেছে ৪৫ বছরের রেকর্ড। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে পৌঁছেছে ৬.১ শতাংশে। কিন্তু ভোটের আগে সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। কেন্দ্র দাবি করেছিল, রিপোর্টটি অসম্পূর্ণ। ২০১৯ সালে বিজেপি বিপুল ভাবে জেতার পরে সরকার সেই রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করে নেয়। এ বার লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে এনএসও-র সমীক্ষা জানাল, মোদী জমানায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে ১ কোটিরও বেশি মানুষ রুটিরুজি হারিয়েছেন। ওই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সংখ্যা এখনও করোনার আগের তুলনায় কম। বিরোধীদের প্রশ্ন, বেকারত্বের রিপোর্টের মতো এ বারও কি মোদী সরকার ভোটের আগে অসংগঠিত ক্ষেত্রের করুণ ছবি লুকোতে এই সমীক্ষা রিপোর্ট ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল?
অতিমারির পাঁচ বছর আগের সমীক্ষা অনুযায়ী, অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছোট ছোট সংস্থায় ১১.১৩ কোটি মানুষ কাজ করতেন। অতিমারির পরে তা কমে ৯.৭৯ হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া এনএসও-র ‘অ্যানুয়াল সার্ভে অব আনইনকর্পোরেটেড সেক্টর এন্টারপ্রাইজেস’ সমীক্ষা অনুযায়ী, এখন ১০.৯৬ কোটির মতো মানুষ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করছেন। অর্থাৎ, ওই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান এখনও অতিমারির আগের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। কোভিড চলে গেলেও অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের রোজগার বিশেষ বাড়েনি। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ওই কর্মীদের রোজগার ছিল বছরে ১.০৬ লক্ষ টাকার মতো। পরের বছর (২০২২-২৩) সেই অঙ্ক সামান্য বেড়ে ১.১ লক্ষ টাকার মতো হয়েছে। মাসের হিসাবে তা ৯০০০ টাকার থেকে সামান্য বেশি।
লোকসভা নির্বাচনের পরে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের এই রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলে প্রথমে ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি, তার পরে নোটবন্দির মতো ভুল সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনীতির মেরুদণ্ড— অসংগঠিত ক্ষেত্র বিপর্যস্ত হয়েছে। তার পরে ধাক্কা দিয়েছে অতিমারি। মোদী সরকার সেই করুণ চিত্র ভোটের আগে প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মতে, ‘‘সরকার যতই দাবি করুক, এখনও অর্থনীতিকে কোভিডের গ্রাস থেকে উদ্ধার করতে পারেনি।’’
অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছোট ছোট সংস্থায় যিনি মালিক, তিনিই কর্মী অথবা তাঁর পরিবারের লোকেরা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বাইরে থেকে লোক নেওয়া হলেও তাঁদের সংখ্যা দু’তিন জন হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থান হয় বিপুল মানুষের। অতিমারির পাঁচ বছর আগের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে এই ধরনের ৬ কোটি ৩৪ লক্ষ সংস্থা ছিল। কোভিডের ধাক্কার পরে এ রকম সংস্থার সংখ্যা কমে ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ হয়। এখন তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ। কিন্তু তাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা এখনও অতিমারির আগের তুলনায় কম।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)