ভালয় ভালয় সাঙ্গ হল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তবে এর রেশ চলবে লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত। তার পর কাজে ফেরার পালা। দেশ জুড়ে অবশ্য দুর্গাপুজো কার্যত উৎসবের মরসুমের শুরু। চলবে দেওয়ালি হয়ে বড়দিন পর্যন্ত। এর জেরে চাহিদা বাড়ে বহু পণ্যের। ফলে তৎপর থাকতে হয় শিল্প, ব্যবসা ও কর্পোরেট দুনিয়াকে। ব্যবসার ভালমন্দের প্রভাব পড়ে শেয়ার বাজারে। পুজো শেষে লগ্নিকারীদেরও এ বার নজর ঘুরবে বাজারের দিকে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ঘটনা কয়েক সপ্তাহে প্রভাব ফেলতে পারে সূচকের উপর। প্রথমত, কয়েক দিনের মধ্যেই বিভিন্ন সংস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক আর্থিক ফল প্রকাশ শুরু হবে। দ্বিতীয়ত, বাজারের আশা উৎসবের মরসুমে ব্যবসা বাড়লে ও জিএসটির প্রতিকূল প্রভাব কমে এলে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ভাল হবে আর্থিক ফল। তৃতীয়ত, আরবিআই ঋণনীতিতে সুদ কমবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। চতুর্থত, অর্থনীতির হাল ফেরাতে কেন্দ্রের কর্মসূচিও ছাপ ফেলবে বাজারে।
অন্য দিকে, সম্প্রতি সোনার দাম কিছুটা বাড়লেও আগের দু’বছরে যাঁরা এই হলুদ ধাতুতে লগ্নি করেছেন, তাঁরা লাভের মুখ তো দেখেনইনি, বরং অনেকেরই লোকসান হয়েছে। সম্পত্তিতে লগ্নির অবস্থা আরও খারাপ। এক দিকে ফ্ল্যাটের দাম বাড়েনি, বরং তা কমেছে কোথাও কোথাও। পাশাপাশি, নিয়মিত গুনতে হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ ও কর বাবদ খরচ। দু’বছর ধরেই নামছে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ। বিকল্পের সন্ধানে বহু মানুষ পা বাড়িয়েছেন মিউচুয়াল ফান্ড ও সরাসরি শেয়ারে লগ্নির পথে।
গত দু’বছরে যখন সঞ্চয়ের অন্যান্য ক্ষেত্রের আকর্ষণ কমেছে, তখন এই দু’টি ক্ষেত্র যথেষ্ট লাভের সন্ধান দিয়েছে। এ ছাড়া আছে কর বাবদ সুবিধা। পরিস্থিতি যা, তাতে আগামী দিনে আরও অনেক মানুষকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সামিল হতে হবে ইকুইটির দুনিয়ায়। গত দু’বছরে বাজার বেশ খানিকটা উঠলেও এটা অবশ্য সকলেরই জানা, ইকুইটিতে ঝুঁকি আছে। বিশেষত বাজার গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত দিনের লেনদেনে বেশ কিছুটা নামলেও এখনও যথেষ্ট উচ্চতায়। সেনসেক্স ও নিফ্টির অবস্থান যথাক্রমে ৩১,২৮৩.৭২ এবং ৯,৭৮৮.৬০ অঙ্কে। এই দুই সূচকের দাম ও আয়ের অনুপাতও (পি ই রেশিও) এখন বেশ উঁচুতে।
বাজার এতটা উঁচুতে ওঠার পিছনে যতটা না অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে, তার থেকে বেশি আছে অফুরন্ত টাকার জোগান ও বিদেশি লগ্নিকারীদের ফিরে আসা। বলা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয়
অর্থনীতি বেশ ভাল জায়গায় থাকবে। তবে আশঙ্কা, বিশ্ব বাজারে ছোটখাটো অঘটনও সাময়িক ভাবে নাড়া দিতে পারে বাজারকে। তা ছাড়া লাভ ঘরে তোলার তাগিদে ছোটখাটো সংশোধনের সম্ভাবনা থাকবে।
শেয়ার বাজার এবং ইকুইটি ফান্ডে যাঁরা লগ্নি করেন, তাঁরা এই ধরনের পতনের সঙ্গে পরিচিত। সমস্যা হল নতুনদের নিয়ে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বাজার শীর্ষে বা তার কাছাকাছি পৌঁছলে তবেই বহু অনভিজ্ঞ লগ্নিকারী টাকা ঢালেন ও একটু পতনেই ছ্যাঁকা অনুভব করেন। তাঁরা ‘আঙুর ফল টক’ বলে বাজার ত্যাগও করেন। ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট ছেড়ে যাঁরা শেয়ার বা ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করবেন চড়া বাজারে, তাঁদের কিন্তু ছ্যাঁকা লাগার সম্ভাবনা থাকবে। কম হলেও ব্যাঙ্কে তাঁরা নিশ্চিত সুদ পেতেন। ইকুইটির দুনিয়ায় ঢুকেই যদি কোনও কারণে পতনের মুখ দেখতে হয়, তবে তাতে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তেই পারেন।
যাঁরা খাঁটি ইকুইটির দুনিয়াতেই খাতা খুলতে চান, তাঁরা ভাল নতুন ইস্যুকে প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ভাল ফান্ড ও ইকুইটিতে লগ্নির পরে কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে। বাজার থেকে যদি শেয়ার কিনতে হয়, তবে এমন শেয়ার বাছতে হবে, যাদের পতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আছে। বাজারে এমন অনেক ভাল শেয়ার আছে, যারা বাজারের উত্থানে খুব দ্রুত ওঠে না এবং পতনেও মুখ থুবড়ে পড়ে না। কিন্তু একটু বড় মেয়াদে ফলদায়ী হয়। অনেকটা সেই ‘কচ্ছপের’ মতো!
অভিজ্ঞতা না-থাকলে অথবা ভাল পরামর্শদাতার সাহায্য না-পেলে এত উঁচু বাজারে নতুনরা সরাসরি শেয়ারে লগ্নি না-করে ‘ডায়নামিক ইকুইটি’ বা ‘অ্যাসেট অ্যালোকেশন’ ফান্ডে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। এই ধরনের প্রকল্পে নিচু বাজারে ইকুইটিতে লগ্নি বাড়ানো হয়। বাজার বেশি উঠলে তা কমিয়ে, ঋণপত্র এবং অন্যান্য সম্পদে লগ্নি বাড়ানো হয়। এই কৌশল মেনে চললে কম দামে শেয়ার কেনা যায় এবং চড়া দামে তা বিক্রি করে লাভ ঘরে নেওয়া যায়। উঁচু বাজারে ঋণপত্র বা বন্ডে সরে গেলে এক দিকে যেমন ঝুঁকি কমে আসে, অন্য দিকে তেমনই ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করা যায়। কোনও কোনও সংস্থা এই ধরনের প্রকল্পকে ‘ব্যালান্সড ফান্ড’-ও বলে থাকে।
চোখ রাখুন
• দিন দশেকের মধ্যেই জানা যাবে বিভিন্ন সংস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ষাণ্মাসিক আর্থিক ফলাফল। জিএসটি রূপায়ণের প্রভাব থাকার কথা এ বার। অর্থাৎ খুব ভাল ফল আশা করছে না শেয়ার বাজার।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি ঘোষণা করবে ৪ অক্টোবর। খুচরো এবং পাইকারি দু’ক্ষেত্রেই মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ায় এই দফায় শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই বিষয়টি হয়তো ধরেই নেবে বাজার।
• উৎসবের মরসুমে ভাল ব্যবসা হলে এবং জিএসটির প্রতিকূল প্রভাব কমে এলে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফলে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) উন্নতি হবে, মনে করছে বাজার। এই আশা কিছু দিন সূচককে শক্তি জোগাবে।
• অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে উদ্যোগী কেন্দ্র। এর ভাল প্রভাব থাকবে শেয়ার বাজারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy