মুম্বইয়ে সাংবাদিক বৈঠকে চন্দ্রশেখর ঘোষ। ছবি: এএফপি।
সদর দফতর কলকাতায়। পূর্বাঞ্চল ভিত্তিক প্রথম বেসরকারি ব্যাঙ্ক বন্ধন যাত্রা শুরু করছে আগামী ২৩ অগস্ট। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে চূড়ান্ত লাইসেন্সটি হাতে পাওয়ার পরেই বুধবার এই ঘোষণা করলেন বন্ধন ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর ঘোষ।
বন্ধন হবে দেশের ২৩তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি আইএনজি বৈশ্য ব্যাঙ্ককে কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্ক অধিগ্রহণ করায় বতর্মানে দেশে বেসরকারি ব্যাঙ্কের সংখ্যা ২২টি।
গত বছর ১ এপ্রিল দেশের বৃহত্তম ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা বন্ধন ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-কে পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ্ক খোলার জন্য প্রাথমিক লাইসেন্স দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। শর্ত ছিল, ১৮ মাসের মধ্যে ব্যাঙ্ক চালু করতে হবে। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার মাস দু’য়েক আগেই তারা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করতে চলেছে।
সাধারণ ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় পা রাখলেও ক্ষুদ্র-ঋণ দেওয়ার বিষয়টি একই সঙ্গে চালু রাখার পরিকল্পনা করেছেন চন্দ্রশেখরবাবু। এর জন্য কী ধরনের মডেল চালু করবে বন্ধন?
চন্দ্রশেখরবাবু জানান, বন্ধন তাদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে দু’ভাগে ভাগ করবে। এক দিকে সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু করা হবে নতুন শাখা খুলে, যেখানে ছোটর পাশাপাশি মোটা অঙ্কেরও লেনদেন হবে। অন্য দিকে ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবা যেমন চালু আছে তেমনই থাকবে বন্ধনের সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ২,০২২টি শাখার মাধ্যমে।
এই পরিকল্পার অঙ্গ হিসাবেই প্রথম পর্যায়ে দেশের ২৭টি রাজ্যে বন্ধন ৫০০ থেকে ৬০০টির মতো সাধারণ শাখা চালু করবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা হিসাবে সারা দেশে বন্ধনের ওই ২,০২২ শাখাকেও ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় সামিল করা হবে। নতুন ব্যবস্থায় ওই সব শাখা ক্ষুদ্র-ঋণ দেওয়া ছাড়াও ছোট অঙ্কের আমানত সংগ্রহ, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা হস্তান্তরিত করা (রেমিট্যান্স), বিমা প্রকল্প বিক্রি-সহ আরও কিছু কাজ করবে। এ ব্যাপারে চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘যে-সব গ্রাহক আমাদের ক্ষুদ্র-ঋণ শাখা থেকে পরিষেবা পেতে চান, তাঁদের প্রথমে আমাদের সাধারণ শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তার পর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা তাঁরা পাবেন ওই সব ক্ষুদ্র-ঋণ শাখা থেকেই।’’
কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশের মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে। বিগত ইউপিএ সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। এর জন্য দেশের যে-সব অঞ্চলে ব্যাঙ্ক নেই, সেখনে পরিষেবা শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই উদ্দেশ্যেই বেসরকারি ক্ষেত্রে নতুন ব্যাঙ্ক চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কেন্দ্র। সেই অনুযায়ীই আপাতত বন্ধন এবং আইডিএফসি নতুন ব্যাঙ্ক চালু করার জন্য লাইসেন্স পেয়েছে।
নতুন ব্যাঙ্ক চালুর ব্যাপারে বন্ধনকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সারা দেশে তাদের ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবার অভিজ্ঞতা বিশেষ ভাবে সহায়ক হয়েছে বলে চন্দ্রশেখরবাবু মনে করেন। তাই ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবাও বন্ধন চালু রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরে ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবা আরও দক্ষ ভাবে দিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। এখন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিতে পারি না। ব্যাঙ্ক চালু হলে তা পাবর। দ্রুত বাড়াতে পারব গ্রাহক সংখ্যাও। এ ছাড়া ব্যাঙ্ক হিসেবে আমাদের আমানত সংগ্রহের খরচও কম থাকবে বলে আমার ধারণা। সে ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র-ঋণেও সুদের হার কমাতে পারব।’’ বর্তমানে সারা দেশে বন্ধনের ৬৬ লক্ষ ক্ষুদ্র-ঋণ গ্রাহক রয়েছেন। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, উদ্বোধনের দিনেই মোট গ্রাহক সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যাওয়া। ওই ৬৬ লক্ষ গ্রাহকও আমাদের ব্যাঙ্কেরই অ্যাকাউন্টহোল্ডার হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন।’’
নিট সম্পদের পরিমাণের নিরিখেও বন্ধন যথেষ্ট মজবুত জায়গায়। ব্যাঙ্ক চালু করার জন্য বন্ধনের নিট সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা হওয়া জরুরি ছিল। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের সরকারি লগ্নি সংস্থা জিআইসি বন্ধনের শেয়ারে ১,০২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে তাদের বর্তমান নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২,৭০০ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy