প্রচার নেই, তাই প্রকল্প ঘোষণা হলেও সামাজিক সুরক্ষার ছায়া তাঁদের উপরে ছড়িয়ে পড়ছে না!
রাজ্য বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের ঘোষণায় বাড়তি কোনও সুবিধা পাওয়ার আশা আপাতত নেই বিড়ি শিল্পের আঁতুড়ঘর জঙ্গিপুর এবং তার আশপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১২ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের।
এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হতে বর্তমানে শ্রমিককে দিতে হয় মাসে ২৫ টাকা। রাজ্য সরকার দেয় ৩০ টাকা। বিনিময়ে উপভোক্তা শ্রমিকেরা নানা ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা পান। সোমবার রাজ্য বাজেটে ঘোষণা হয়েছে, এ বার থেকে প্রকল্পের ৫৫ টাকার পুরোটাই দিয়ে দেবে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ উপভোক্তা শ্রমিককে প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য আর একটা টাকাও খরচ করতে হবে না।
মুর্শিদাবাদের বিড়ি শ্রমিকেরাও এই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় পড়েন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পে নামই নথিভুক্ত নেই অনেকের। ফলে কোনও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। কাজেই সরকারি প্রকল্প থেকে আদতে তেমন লাভ হচ্ছে না। সম্প্রতি শ্রমিক মেলার মঞ্চ থেকে এই প্রকল্পে প্রচারের ঘাটতি নিয়ে মন্ত্রী ও শ্রম দফতরের কর্তাদের সামনে জঙ্গিপুরের স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আখরুজ্জামানেরই প্রশ্ন ছিল, ‘‘প্রায় ১২ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক জেলায়, কিন্তু এতে মাত্র ১০ শতাংশের নাম নথিভুক্ত রয়েছে কেন?’’
সমস্যা নিয়ে ওয়াকিবহাল শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তাঁর নিজেরও বিড়ি কারখানা আছে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের এ ব্যাপারে সচেতন করা জরুরি। যে করেই হোক ১২ লক্ষ শ্রমিককে প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে।” যে প্রকল্পে এখন নথিভুক্ত সাকুল্যে ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮১০ জন। শ্রম দফতরের তথ্য অনুসারে, জেলায় ৯৪,৩৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক, ৮২৪১ জন পরিবহণ শ্রমিক এবং রিকশাচালক, ইটভাটা কর্মী-সহ অন্য ৫৯টি পেশার সঙ্গে জড়িতেরা আপাতত এই সুযোগ পাচ্ছেন। জঙ্গিপুর মহকুমার সহকারী শ্রম-কমিশনার রথীন সেন বলছেন, “মানছি সংখ্যাটা যথেষ্টই কম। তবে চেষ্টা হচ্ছে বিশেষ শিবির করে বিড়ি শ্রমিকদের প্রকল্পে নথিভুক্ত করার।”
বিড়ি মহল্লায় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প যে তেমন চেনা লব্জ নয়, মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের শ্রমিক লাইনে পা রাখতেই তা মালুম হয়েছে। সদ্য ঘোষিত বাজেটে তার সুফলের কথাও তাই অচেনা গদ্যের মতোই ঠেকেছে তাঁদের কাছে। শ্রমিকদের অধিকাংশই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন। খোদ বিড়ি শ্রমিকদের ঠিকাদার, এলাকায় যাঁরা বিড়ি মুন্সি বলে পরিচিত, তাঁদের একাংশ বলছেন প্রকল্পের কথা না-জানলে আর নাম লেখানোর প্রশ্ন আসে কী করে! বাজেটে আরও বেশি সুবিধার ঘোষণায় তাই হেলদোল হয় না। গফুরপুরের রেজিনা বিবি বলছেন, “কেউ কখনও বলেনি এর কথা। মাসে ২৫ টাকা দিয়ে যে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়, জানতামই না এত দিন।” একই বিস্ময় সুতির হারোয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী তরুণী রেশমা খাতুনের কথায়। বাড়িতে বিধবা মা, ঠাকুমা, শ্বশুরবাড়ি থেকে দুই শিশু নিয়ে বিতাড়িত বোন। কিন্তু প্রকল্প আছে, জানেনই না তিনি।
বিড়ি মুন্সি সাজ্জাদ শেখের অধীনে প্রায় ৫০০ শ্রমিক। প্রতি দিন দেড় প্রায় লক্ষ বিড়ি তৈরি হয় তাঁর উঠোনে। বলেন, “নাম মাত্র কয়েক জন শ্রমিকের বিড়ির পিএফ কার্ড রয়েছে। বাকিরা জানেনই না, প্রকল্পটা ঠিক কী!’’ সিটুর বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি প্রাক্তন সাংসদ আবুল হাসনাত খান বলেন, “রাজ্যের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে বিড়ি শ্রমিকদের যুক্ত হওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে যুক্ত করে প্রকল্পের প্রচার বাড়ালে ক্ষতি কী, সরকার এটা ভেবেই দেখল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy