Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ইস্পাত তৈরি কমাতে চিনকে আর্জি ব্রিটেনের

সারা বিশ্বে চাহিদা তলানিতে। অথচ উপচে পড়ছে জোগান। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, সদ্য এই কারণে ব্রিটেনে ব্যবসা বিক্রির কথা পর্যন্ত জানিয়েছে টাটা স্টিল। এই পরিস্থিতিতে ইস্পাত শিল্পের হাল ফেরাতে তার উৎপাদন ছাঁটাইয়ের গতি বাড়ানোর জন্য চিনের কাছে আর্জি জানাল ব্রিটেন। ওই একই লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছর ধরে ইস্পাতের উৎপাদন ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেজিংও।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

সারা বিশ্বে চাহিদা তলানিতে। অথচ উপচে পড়ছে জোগান। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, সদ্য এই কারণে ব্রিটেনে ব্যবসা বিক্রির কথা পর্যন্ত জানিয়েছে টাটা স্টিল। এই পরিস্থিতিতে ইস্পাত শিল্পের হাল ফেরাতে তার উৎপাদন ছাঁটাইয়ের গতি বাড়ানোর জন্য চিনের কাছে আর্জি জানাল ব্রিটেন। ওই একই লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছর ধরে ইস্পাতের উৎপাদন ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেজিংও। তবে প্রয়োজনের তুলনায় সেই উৎপাদন ছাঁটাই যে বেশ কম, তা-ও মেনে নিয়েছে তারা।

বেজিংয়ে চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরে ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘ইস্পাত তৈরির পরিমাণ দ্রুত কমানোর জন্য পদক্ষেপ করতে চিনকে অনুরোধ করেছি। পোর্ট ট্যালবট কারখানা-সহ সারা ব্রিটেনেই ইস্পাত শিল্পের স্বাস্থ্য ফেরানো আমাদের লক্ষ্য।’’

একই সঙ্গে অবশ্য ফেব্রুয়ারির পরে ফের এক বার ইস্পাতের উৎপাদন ছাঁটাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেজিং। শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ইস্পাত উৎপাদন ১১৩ কোটি টনে নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর তাঁরা। এখন যা ১২০ কোটি টন। তবে এই হারে উৎপাদন কমানো যে যথেষ্ট নয়, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি।

ওই আধিকারিকের মতে, এই পাঁচ বছরে চিনে ইস্পাতের চাহিদা থাকবে গড়ে ৭০ কোটি টনের মতো। সেই সঙ্গে মোটামুটি আরও ১০ কোটি টন চাহিদা থাকবে রফতানির জন্য। ফলে সব মিলিয়ে ৮০ কোটি টন ইস্পাত তৈরি হলেই, তা সংশ্লিষ্ট শিল্পের পক্ষে ভাল। কিন্তু ছাঁটাইয়ের পরেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তার থেকে অনেকটা বেশি হওয়ায় তা আরও কমানো জরুরি বলে মানছেন তিনি।

চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ইস্পাত তৈরি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই আমেরিকা, ইউরোপ-সহ সারা দুনিয়ার তোপের মুখে পড়ছে বেজিং। বারবার দাবি উঠছে তাদের পণ্যের উপর অনেক বেশি চড়া হারে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি (উৎপাদন খরচের থেকেও কম দামে পণ্য বিক্রির জন্য তার উপর বসানো শাস্তিমূলক শুল্ক) বসানোর। মূলত এই ‘চিনা আক্রমণের কারণ’-এই ৩০ মার্চ ব্রিটেনে নিজেদের ব্যবসা বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে টাটা স্টিল।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত বহুজাতিকটির দাবি, তলানিতে ঠেকে যাওয়া দাম, চড়া উৎপাদন খরচ আর বাজার জুড়ে সস্তার চিনা পণ্যের দাপটের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে তারা।

রানির দেশে টাটা স্টিলের কর্মী সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এর মধ্যে চার হাজার শুধু ওয়েলসের পোর্ট ট্যালবট কারখানাতেই। ভারতীয় বহুজাতিক টাটা স্টিলের এই ঘোষণায় প্রবল অনিশ্চয়তার মুখে তাঁরা। চিনের সস্তা পণ্যের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে পাল্লা দিতে না-পেরে এর আগেও ব্রিটেনে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে টাটা স্টিল। ওই রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে ব্রিটেন-সহ ইউরোপের আরও বহু ইস্পাত সংস্থাকে। ফলে সস্তার চিনা পণ্য নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে উন্নত দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র।

শুধু ব্রিটেনের টাটা স্টিল নয়, এই মুহূর্তে ইস্পাত শিল্পের বেহাল দশা প্রায় সারা দুনিয়ায় চোখ বোলালেই স্পষ্ট। বিশ্ব বাজারে তেলের মতো ইস্পাতের চাহিদাও এখন তলানিতে। সেই ২০০৮ সাল থেকে তা বাড়ার তেমন নামগন্ধ নেই। অথচ বাজারে উপচে পড়ছে জোগান। বিশেষত চিনা সংস্থাগুলির সৌজন্যে। সারা পৃথিবীতে যতটা ইস্পাত ব্যবহৃত হয়, তার অর্ধেকই তৈরি করে তারা। ফলে সর্বত্র ইস্পাতের দর নেমে গিয়েছে। কঠিন হচ্ছে মুনাফার মুখ দেখা।

চিনের বাজারে চাহিদায় ভাটা থাকায়, সারা দুনিয়ায় ইস্পাত বাজার ছেয়ে গিয়েছে ড্রাগনের দেশের সংস্থাগুলির সস্তা-পণ্যে। পরিস্থিতি এমনই যে, ধারের বিপুল বোঝা কমাতে খাবি খাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা আর্সেলর-মিত্তলও। তার কর্ণধার লক্ষ্মী মিত্তল সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ব বাজারের চাহিদার তুলনায় ঢের বেশি ইস্পাত উৎপাদন করছে চিনা সংস্থাগুলি। সেই সঙ্গে সারা পৃথিবীতে জলের দরে তা বিক্রি করছে তারা। তাই দাম নেমে এসেছে তলানিতে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালেই রেকর্ড ১১.২০ কোটি টন রফতানি করেছে চিনা ইস্পাত নির্মাতারা।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকের আগে চিন জুড়ে ঢেলে সাজা হয়েছিল পরিকাঠামো। আকাশ ছুঁয়েছিল ইস্পাতের চাহিদা। দামও বেড়েছিল তাল মিলিয়ে। কিন্তু চিনে অলিম্পিক মেটার পরে সেই চাহিদা আর ফেরেনি। প্রথমে বিশ্ব জোড়া মন্দার প্রভাব আর তারপরে চিনা অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া— লাগাতার আক্রমণে ধুঁকছে ইস্পাত সংস্থাগুলি। তার উপর নিজেদের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন সস্তায় তা সর্বত্র রফতানি করছে চিনা সংস্থাগুলি। যার ফল ভুগতে হচ্ছে প্রায় সব সংস্থাকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Britain urges China steel production cut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE