নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।
যত দোষ, এ বার নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে।
টানা ন’মাস ধরে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার দায় এ বার জেনারেশন-ওয়াই বা নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর নালিশ, এই একবিংশ শতাব্দীতে নতুন চাকরি পাওয়া, ভাল রোজগার করা ছেলেমেয়েরা ইএমআই দিয়ে গাড়ি কিনতে আগ্রহী নয়। তারা বরং ওলা-উব্র বা মেট্রো চেপে যাতায়াত করতেই বেশি আগ্রহী। গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ।
চেন্নাইতে দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম একশো দিনের সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর এই ‘নতুন ব্যাখ্যা’ শুনে গাড়ি-শিল্পের কর্তাব্যক্তিদের বেশির ভাগই হতবাক। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে নতুন প্রজন্ম আগের মতো বাস-ট্রাকও কিনছে না বলে হয়তো বাস ও ট্রাকের বিক্রিও কমে যাচ্ছে। কী বলেন, অর্থমন্ত্রী?’’
কংগ্রেসের প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। কারণ গত ন’মাস ধরে শুধু ছোট গাড়ির বিক্রি কমেনি। বাসের মতো যাত্রিবাহী গাড়ি, ট্রাকের মতো বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রিও কমেছে। অগস্টে গাড়ি বিক্রি আরও কমেছে। একটি গাড়ি সংস্থার কর্তার মন্তব্য, ‘‘গ্রাম বা মফস্বলে দু’চাকার বিক্রিও কমে যাচ্ছে। সেখানেও কি মেট্রো বা ওলা-উব্র চলছে?’’
নির্মলা আজ মেনে নিয়েছেন, দেড় থেকে দু’বছর আগেও গাড়ি-শিল্পের জন্য খুব ভাল সময় যাচ্ছিল। কিন্তু তার পরে আগামী বছর ১ এপ্রিল থেকে বিএস-৬ গাড়ি চালু হবে বলে অনেকে আপাতত গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। রেজিস্ট্রেশনের খরচও বেড়েছে। নির্মলা বলেন, ‘‘তার সঙ্গে মনোভাবও বদলেছে। নতুন প্রজন্ম ইএমআই-এর দায়বদ্ধতার মধ্যে ঢুকতে রাজি নয়। তারা ওলা, উব্র, মেট্রো ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করছে।’’ গাড়ি-শিল্পের কর্তাদের পাল্টা প্রশ্ন, দেশের ক’টি শহরে ওলা-উব্রের মতো অ্যাপ-ক্যাব পরিষেবা পাওয়া যায়? আর এই তরুণ প্রজন্ম গাড়ির ক্রেতাদের কতখানি অংশ?
বস্তুত মেট্রো শহর বা প্রথম শ্রেণির শহর বাদে ওলা-উব্র পরিষেবা এখনও অমিল। পশ্চিমবঙ্গেই যেমন কলকাতা বাদে মাত্র খান তিনেক শহরে এই পরিষেবা রয়েছে। একই অবস্থা সব রাজ্যেই। কলকাতা দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, বেঙ্গালুরুর মতো হাতে গোনা কিছু শহর বাদ দিলে আর কোথাও মেট্রো রেলও নেই। ফলে অন্যান্য শহরে গাড়ির প্রয়োজন রয়েছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রয়োজনের তাগিদেও সেখানে এত দিন চার চাকা, দু’চাকার গাড়ি কেনা হয়েছে। কিন্তু গত ন’মাসে গাড়ি বিক্রিতে ভাটার টান। তার সঙ্গে বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রিও কমেছে। যা থেকে স্পষ্ট, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমন হচ্ছে না। ব্যবসার ওঠানামা নয়, অর্থনীতিতে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে।
এক গাড়ি সংস্থার কর্তা বলেন, ‘‘সবাই ওলা-উব্র ব্যবহার করলে, সেখানেও গাড়ির প্রয়োজন পড়ত। কিন্তু এই সব পরিষেবাতেও গাড়ি বিক্রি কমেছে।’’ গাড়ি শিল্পের অনুমান, ২০১৬-১৭ সালে ট্যাক্সি পরিষেবার জন্য দেড় লক্ষ গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। ২০১৭-১৮ সালে সংখ্যাটা ৭৫ হাজারে নেমে আসে। চলতি আর্থিক বছরেও ছবিটা ভাল নয়।
গাড়ি-শিল্পের দাবি, তাদের কিছু সুরাহা দেওয়া হোক। জিএসটি কমানো হোক। নির্মলা এ দিন বলেন, জিএসটি পরিষদে এ নিয়ে আলোচনা হবে। কী ভাবে গাড়ি-শিল্পকে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে সরকারের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। আর্থিক বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে আসা ও বাজারে সামগ্রিক ভাবে চাহিদা কমা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, সরকার কোনওটাই উড়িয়ে দিচ্ছে না। কী ভাবে দ্রুত বৃদ্ধির হার বাড়ানো যায়, তা দেখা হচ্ছে। বাজার চাঙ্গা করতে সরকার পরিকাঠামোয় খরচে গতি আনছে।
এ দিনই অর্থনীতি মন্দার গভীর খাদে পড়ে যাচ্ছে বলে মোদী সরকারের সমালোচনা করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর টুইট, ‘লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের জীবনযাত্রার উপরে খাঁড়া ঝুলছে। সরকার কবে চোখ খুলবে?’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy