কর্মীদের স্বার্থ আরও সুরক্ষিত রাখতে সংস্থাকে নিজস্ব প্রভিডেন্ট ফান্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়ায় এ বার বাড়তি কড়াকড়ি আনছে কেন্দ্র।
যে-সব সংস্থা নিজেদের কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) নিজেরাই পরিচালনা করতে চায়, প্রস্তাবিত আইনে তাদের সরাসরি রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন আদায় করতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে। আগে আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনারের অমুমোদনের ভিত্তিতেই তারা এটা করতে পারত। এই মর্মে সম্প্রতি সংশোধিত হতে চলেছে প্রভিডেন্ট ফান্ড আইন।
নিজস্ব প্রভিডেন্ট ফান্ড পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ‘এগ্জেম্পটেড কোম্পানি’ হিসেবে ধরা হয়। রাজ্যে এই ধরনের প্রায় ৫০০ সংস্থা রয়েছে বলে আঞ্চলিক পিএফ দফতর জানিয়েছে। আইনটি চালু হলে যে-সব সংস্থা নতুন করে এই শ্রেণিতে যাওয়ার জন্য আবেদন করবে, তাদের ক্ষেত্রেই সেটি প্রযোজ্য হবে। তবে এ রাজ্যের আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার রাজীব ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘যে-সব পুরনো সংস্থা আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনারের কাছ থেকে পাওয়া অনুমতির ভিত্তিতেই এগ্জেম্পটেড হিসেবে কাজ করছে, তাদের
ক্ষেত্রেও ধীরে ধীরে নতুন আইন প্রযোজ্য হবে।’’
শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত আইন অনুসারে এগ্জেম্পটেড কোম্পানির স্বীকৃতি পেতে হলে সেই সংস্থায় অন্তত ৫০০ কর্মী থাকা বাধ্যতামূলকও করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার পিএফ ট্রাস্টের তহবিলের পরিমাণ কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা হতে হবে।
সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে পুরনো সংস্থার ক্ষেত্রে নতুন আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানই তাদের এগ্জেম্পটেড তকমা খোয়াবে। সে ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থার পিএফ তহবিল পরিচালনার ভার নেবে আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতরই।
অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে কেন আসছে এই কড়াকড়ি?
এ নিয়ে আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ কিছু না-বললেও ওই দফতর সূত্রে খবর, পিএফ কর্তৃপক্ষ যে-হারে সুদ দেন, বেশ কিছু এগ্জেম্পটেড ফান্ড সেই হারে সুদ দিতে পারছে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে এগ্জেম্পটেড সংস্থায় তহবিল নয়ছয়ের অভিযোগও এসেছে পিএফ দফতরে।
চালু নিয়ম অনুযায়ী, এগ্জেম্পটেড সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে চাইলে প্রথমে সেই সংস্থার কর্মী এবং মালিকের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ট্রাস্ট বা অছি পরিষদ গঠন করতে হয়। তহবিল পরিচালনার দায়িত্বে থাকে ওই অছি পরিষদ। তবে সেই টাকা কোথায় কী ভাবে বিনিয়োগ করা হবে, তা নির্ধারিত হয় পিএফ আইনে উল্লেখিত নির্দেশিকা মেনে। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক পিএফ দফতরের নজরদারির ব্যবস্থাও রয়েছে।
রদবদল যেখানে
•কেন্দ্র/রাজ্যের অনুমতি ছাড়া এগ্জেম্পটেড শ্রেণির তকমা নয়। এখন তা সম্ভব আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের সায় নিয়েই
•পুরনো সংস্থাকেও ধাপে ধাপে প্রস্তাবিত এই আইনের আওতায় আনা
•অন্তত ৫০০ কর্মী না-থাকলে স্বীকৃতি নয়
•তহবিল কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার হওয়া চাই
অভিযোগ কোথায়
•বেশ কিছু এগ্জেম্পটেড সংস্থার পিএফ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সুদ না-দেওয়া
এ ক্ষেত্রে এগ্জেম্পটেড কোম্পানি হিসাবে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমতি নেওয়ার আইনটি কিন্তু নতুন নয়। তবে এত দিন এই আইনের আওতাতেই যে-প্রথা চালু ছিল, তা হল: রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেই প্রথমে ইচ্ছুক সংস্থাকে আবেদন করতে হত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা পেতে দেরি হত। সে ক্ষেত্রে যত দিন পর্যন্ত সরকারি অনুমোদন না-মেলে, তত দিন আবেদনকারী সংস্থাকে এগ্জেম্পটেড কোম্পানি হিসবে নিজেদের পিএফ পরিচালনা শুরু করার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনারের হাতে।
নতুন ব্যবস্থায় আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনারের হাতে আর সেই ক্ষমতা থাকছে না। আবেদন করার পরে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন না-পাওয়া পর্যন্ত কোনও সংস্থা এগ্জেম্পটেড হিসাবে প্রভিডেন্ট ফান্ড পরিচালনার
দায়িত্ব পাবে না।
যে-সব সংস্থার ব্যবসা ও দফতর কোনও একটি রাজ্যেই সীমাবদ্ধ, এগ্জেম্পশন পাওয়ার জন্য তাদের সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরাকারের কাছ থেকেই অনুমোদন পেতে হবে। কিন্তু সংস্থার ব্যবসা এবং দফতর একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে থাকলে ওই অনুমোদন পেতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে।
রাজীববাবুর অভিযোগ, ‘‘বহু সংস্থা এক বার আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরে আর সরকারি অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করত না। সেই সব সংস্থাকে এ বার আমরা খুঁজে বার করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy