অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ব্যাপারে আরও এক ধাপ এগোল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কর্মী ও প্রশিক্ষণ দফতর এবং রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে শুরু হয়েছে আলোচনা। আনুষ্ঠানিক ভাবে সংশ্লিষ্ট কমিশন তৈরি হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন কী হারে সংশোধিত হবে, অর্থ মন্ত্রকে জমা পড়বে সেই রিপোর্ট। কেন্দ্র তাতে অনুমোদন দিলে বর্ধিত হারে বেতন পাবেন তাঁরা।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন একাধিক বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে ঠিক করা হয়। একে বলে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’। মূল বেতন (পড়ুন বেসিক পে) কতটা বাড়বে তা নির্ভর করবে এই ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’-এর উপর। সপ্তম বেতন কমিশনে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’ ২.৫৭ নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর্থিক বিশ্লেষকদের অনুমান, অষ্টমে সেটা ১.৯২ থেকে ২.৮৬-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে।
নিয়ম অনুযায়ী, সংশোধিত মূল বেতন ঠিক করতে বর্তমান বেসিক পে-র সঙ্গে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’কে গুণ করা হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা ধার্য রয়েছে। অষ্টম বেতন কমিশন ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’ ২.০ স্থির করলে সংশোধিত মূল বেতন বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬,০০০ টাকা (১৮,০০০ টাকা X ২.০)।
মূল বেতনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা একাধিক ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই তালিকায় রয়েছে বাড়িভাড়া (হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স বা এইচআরএ) এবং যাতায়াত খরচ (ট্রাভেল অ্যালাউন্স বা টিএ)। এ ছাড়া জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা বা এনপিএস (ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম) এবং কেন্দ্রীয় সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্প বা সিজিএইচএসে (সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট হেলথ স্কিম) টাকা রাখতে হয় তাঁদের। ফলে অষ্টম বেতন কমিশন জারি হলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বেতনের অঙ্ক কতটা বাড়বে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
শহরভেদে আবার বাড়িভাতার তারতম্য রয়েছে। এক্স শ্রেণির শহরের বাসিন্দা হলে মূল বেতনের ২৪ শতাংশ এইচআরএ পাবেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। এ ছাড়া অষ্টম বেতন কমিশনে টিএ-র অঙ্ক ৩,৬০০ টাকা থেকে ৭,২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে পারে। এনপিএসের জন্য মূল বেতনের ১০ শতাংশ দিতে হবে কর্মীদের। তবে সিজিএইচএস অপরিবর্তিত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অষ্টম বেতন কমিশনে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’ ১.৯২ ঠিক হলে ১,৯০০ গ্রেড পে-র কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রতি মাসের মূল বেতন (বেসিক পে) বেড়ে দাঁড়াবে ৫৪ হাজার ৫২৮ টাকা। এর সঙ্গে এইচআরএ এবং টিএ বাবদ যোগ হবে যথাক্রমে ১৩ হাজার ৮৬ টাকা এবং ৩,৬০০ টাকা। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে মোট বেতন পৌঁছোবে ৭১ হাজার ২১৫ টাকায়। এর থেকে এনপিএস এবং সিজিএইচএস বাবদ বাদ যাবে ৫,৪৫৩ টাকা ও ২৫০ টাকা। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাড়িতে ৬৫ হাজার ৫১২ টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।
একই ভাবে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’ ২.৫৭ হলে ১,৯০০ গ্রেড পে-র কর্মচারীদের হাতে পাওয়া বেতনের অঙ্ক দাঁড়াবে ৮৬ হাজার ৫৫৬ টাকা। আবার গ্রেড পে ২,৪০০ হলে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’ ১.৯২ এবং ২.৫৭-র ক্ষেত্রে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বেতনের পরিমাণ হবে ৮৬ হাজার ৭৪৩ টাকা এবং ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৭৫ টাকা। গ্রেড পে ৪৬০০, ৭৬০০ এবং ৮৯০০ হলে আরও বাড়বে হাতে পাওয়া বেতন। অষ্টম বেতন কমিশনে সর্বোচ্চ হাতে পাওয়া প্রতি মাসের বেতন প্রায় তিন লক্ষ টাকা (পড়ুন ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫৬৯ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।