স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় দেওয়ার মধ্যে জিএসটি-র হার কমিয়ে আনার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে বলেছেন পরোক্ষ কর ব্যবস্থা সংস্কারের কথাও। আর শনিবার তাঁর সরকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার দাবি, আগামী দিনে জিএসটি-র একটিই হার চায় সরকার। ২০৪৭-এর মধ্যে ভারত উন্নত দেশে পরিণত হলে সেই সময়ে গিয়ে তা হতে পারে। এ বছর দেওয়ালির মধ্যে করের স্তর দু’টিতে নামানোর সরকারি প্রস্তাব আসলে সেই ‘নেক্সট জেন জিএসটি’ বা জিএসটির পরবর্তী পর্যায়েরই প্রথম ধাপ।
এ দিন অবশ্য মোদীর বার্তা নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের দাবি, ‘জিএসটি ২.০’ যেন সহজ-সরল (গুড অ্যান্ড সিম্পল) কর ব্যবস্থা হয় এবং তা যে কোনও ভাবেই বৃদ্ধিকে দমিয়ে না দেয় (গ্রোথ সাপ্রেসিং ট্যাক্স), সেটা নিশ্চিত করুক সরকার। কেন্দ্র সূত্রের অবশ্য কটাক্ষ, ২০০৪ সালে নিজেদের জমানায় সব রাজ্যের মধ্যে মতৈক্য তৈরি করতে পারেনি ইউপিএ সরকার। এখন মোদী সরকারের গরিব ও মধ্যবিত্তের সুরাহার প্রচেষ্টার কৃতিত্ব নিতে চাইছে।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে জিএসটি চালুর পর থেকে তাতে পাঁচটি (৫, ১২, ১৮, ২৮ এবং কিছু পণ্যে শূন্য) হার রয়েছে। সোনা-রুপোয় তা ৩%। এতে জিএসটি ব্যবস্থা জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একে ‘গব্বর সিংহ ট্যাক্স’ তকমা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। জিএসটি-তে বারবার নিয়ম বদলে ছোট শিল্প ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি হয় বলে অভিযোগ। আছে কর ফাঁকির সমস্যাও।
এই পরিস্থিতিতে মোদীর বার্তা ছিল, দেওয়ালির আগেই জিএসটি-তে করের স্তর কমানো হবে। ফলে অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম কমবে। যা হবে মানুষের কাছে ‘ডব্ল দেওয়ালি’। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, জিএসটি-র হার থাকবে ৫% ও ১৮%। তোলা হবে ১২% এবং ২৮ শতাংশের স্তর। তবে সিগারেট, নরম পানীয়ের মতো ক্ষতিকর পণ্যে তা ২৮% থেকে কমবে না। বরং স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সেস-সহ তা পৌঁছতে পারে ৪০ শতাংশেও। সঙ্গে জিএসটি-তে নথিভুক্তির নিয়ম সরল করা, রিটার্ন জমার সমস্যা এড়ানো ও দ্রুত রিফান্ডের কথাও বলেছে সরকার।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের বক্তব্য, গত এক-দেড় বছরের বেশি সময় ধরেই তাঁদের দল জিএসটি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথা বলছে। শুক্রবার মোদীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, তিনি ‘ঘুম ভেঙে’ বুঝতে পারছেন পরোক্ষ করে আমূল বদল না হলে বাড়বে না কেনাকাটা। গতি আসবে না বৃদ্ধির চাকায়। জিএসটি ২.০ নিয়ে বিতর্কের দাবি করেছেন রমেশ। বলেছেন রাজ্যগুলির যাতে ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করা হোক।
বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে না পেরে সরকার এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হচ্ছে। রমেশের দাবি, ‘‘সাত বছর ধরে একাধিক করের স্তর ও ছাড়ের হাত ধরে জিএসটি-র ক্ষতি করা হয়েছে। এর কাঠামোও কর ফাঁকির উপযুক্ত। করের স্তর অনেকটাই কমানো উচিত।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘জিএসটি ২.০ হওয়া উচিত গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স। এখনকার মতো গ্রোথ সাপ্রেসিং ট্যাক্স নয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)